তিষ্য উপাখ্যান
[ শারদ সংখ্যা দেশ কিংবা আনন্দ বাজার – মনে নেই, সমরেশ মজুমদারের একটা
গল্প পড়েছিলেন ঝর্ণা অনেকদিন আগে । সেই পঠিত গল্পটির কাব্যরূপ ‘তিষ্য উপাখ্যান’ ]
নৃপতি বিন্দুসারের মর্মে পশিলপরাভবের গ্লানি
নিজ পুত্রের প্রেম মহিষীর সাথে !
কিন্তু এ যে তিষ্য ! প্রিয়তম পুত্র তাঁর
অমিতবিক্রম বীর, নয়ন লোভন
বিমাতার সঙ্গে প্রেম কেমনে সম্ভব ?
শতেক রমণী আছে রাজার আলয়ে
নয়ন হরিছে শুধু মহিষীর তরে !
কিন্তু এযে বিমাতা !
ক্রোধে অন্ধ নরপতি বসিলেন রুদ্ধ-দ্বার কক্ষে
পরামর্শ হইল গুপ্ত সভা-ঘরে
কারাগারে নিক্ষেপিলেন রাজার কুমারে ।
ক্রমে ক্রমে গোচরিল গোপন সংবাদ
মহিষী পাগলিনী তিষ্যের প্রেমে
অলিন্দে, গবাক্ষে ধায় উন্মাদিনী নারী
আকুল নয়নে –
শুধু একটিবার দর্শনের তরে রাজার কুমারে ।
কুমারও অবিচল নিজ প্রেমে তাঁর
ধীর,স্থির, শান্ত হৃদয়
কেহ যেন বুঝিতে না পারে
রেখেছে যতনে প্রেম
মহিষীর মর্যাদা স্মরণে ।
ক্রোধে অন্ধ, উন্মত্ত রাজা বিন্দুসার
মারিতে উদ্যত প্রিয় পুত্র তাঁহার
কারাগারে নিজকক্ষে চিন্তিত কুমার
মনে মনে এই কথা ভাবে বারবার
মহিষী নহে সে পিতা,
নর্ম সহচরী তব,
এমন হাজারো আছে রাজ-অন্তঃপুরে
বাসনা মিটায়ে যারা নিক্ষেপিতা দূরে
বিমাতা কেমনে তাঁরা, পিতা ?
দুখিনী রমণী সে যে, আমারেই জেনেছিল জীবনের ধন
আহা ! সেই সুকন্ঠী, আমাকেই দিয়েছিল পরম রতন
মহিষী নহে সে পিতা,
সে যে কাঙালিনী ।
বসিল মন্ত্রণাকক্ষে গোপন মহাসভা --
তবেকি নির্বাসন !
রাজাজ্ঞা হইল শেষে স্থির
নির্বাসন নয় , মৃত্যুদন্ড হোক আরো সুকঠিন ।
দুইদিন পর বেলা দ্বীপ্রহরে
বধ্যভূমিতে নিয়ে যাবে রাজার কুমারে
পাপিয়সী মহিষীর মৃত্যুদন্ড হবে
প্রেমিকার মৃত্যুদন্ড হবে প্রেমিক সন্মুখে !
দন্ডাদেশ আদেশিল রাজা দ্বিতীয় প্রিহরে
লোকারণ্য বধ্যভূমি, উৎসুক নয়নে
চাহিয়া জনতা শুধু ঘাতকের পানে ।
মহিষীর শাস্তি তাঁর আর্ধ শিরোচ্ছেদ
তিলে তিলে মৃত্যু বরণ , করেছে সে পুত্র হরণ
পাপিয়সী কৃতঘ্ন এমন !
কুমারের প্রতিও রহিল আদেশ
স্বচোক্ষে দেখিবে সে মৃত্যুযন্ত্রণা
আপন পাপের ফল নিবে সে কুড়ায়ে
আপন কর্ম দোষে ।
তরবারি করিল আঘাত
রাজার আদেশে
অর্ধেক কর্তিত শির অর্ধচ্যূত গলদন্ড হতে
ঘটিলনা মৃত্যু তার ।
যন্ত্রণায় কম্পিত দেহ রহিল ভূমিতে
ধুলায় লুটায় কেশ , ছিন্ন মলিন বেশ
শুধু স্থির নেত্র রহে চাহি তিষ্যের নয়নে ।
দুইটি দিবস গেলো, রজনীও শেষ
আবার বসিল সভা, হইল আদেশ
মৃত্যুদন্ড দিবে তিষ্য, করিবে আঘাত
এক কোপে শিরচ্ছেদ, যন্ত্রণার ঘটিবে অবসান ।
ধীরে, ধীরে অতিধীরে উঠিল তিষ্য
প্রশান্ত চিত্ত তার, শান্ত নয়ন
বাড়াইল তরবারী নৃপতি স্বয়ং ।
বধ্যভূমিতে উঠি দেখিল প্রিয়ারে
ফেলি দিল তরবারী, বসিল ভূমিতে
অর্ধকর্তিত শির নিল তুলি ক্রোড়ে
স্থাপিল আপন নেত্র মহিষীর পানে ।
ক্ষণমাত্র করিলনা ব্যয়
সজোরে আলিঙ্গন করি
অসঙ্কোচে চুম্বিল প্রিয়ারে হাজারো জনতা মাঝে ।
মহিষীর মুখে হাসি, জলভরা মুদিত নয়ন
প্রাণবায়ু হইল নির্গত ।
জয়ী বুঝি প্রেম আজ
অবশেষে মিলিয়াছে চরম সেইক্ষণ !
ছুটে আসে পুরনারী যত, উলুধ্বনি বাজে
বধ্যভূমি ছাড়ি তিষ্য প্রবেশিল আপন কক্ষে
রাজপুরী মাঝে ।
পরদিন
প্রাতঃকালে , সূর্য যখন উদিল আকাশে
কুতুহলি জনতা ছাড়ি দিল পথ, দাঁড়াল দুপাশে
দেখিল
নগ্নপদ মুন্ডিত মস্তক
রক্তিম কাষায় বস্ত্র
হাতে লয়ে ভিক্ষাপাত্র
চলেছেন কুমার বুদ্ধের শরণে
এ জীবন স্পর্শিবে না অন্য কোন নারী
রয়েছে হৃদয়ে আঁকা প্রিয়ার চুম্বন
দিব্যচুম্বনের মত,
প্রবেশ করিবেন সঙ্ঘে ভিক্ষুকের বেশে
পালিবেন বুদ্ধের ধর্ম – এই তাঁর ব্রত ।
মৃ ণা লকা ন্তি রা য়
মনে পড়ে কি অস্পর্শী সেই যে রাধা হলে কৃষ্ণলীলায় ?
কী অবলীলায় করে গেলে অভিনয় কৃষ্ণের সাথে!
হাতে হাত, চোখে চোখ, ঠোঁটের ডগায় মায়াবী হাসি...
তুমি জানো না ঈর্ষার বিষে পুরেছি সেদিন আমি!
মনে কি পড়ে সেই যে পুকুর ধারে শেষ বিকেলে,
জাপটে ধরে প্রথম চুম্বন তোমার কপোলে ?
তারপর বুকে মাথা, ঠোঁটে ঠোঁট, আমায় বললে,
ওগো তোমায় আমি দেবতা বলে জানি!
অনন্তকাল এমনি করে পূজবো তোমায়,
মন হবে মন্দির, চুম্বন হবে অর্ঘ্য...
আরও কতো কী যে বলতে তুমি! সে সবকিছু কি মনে পড়ে তোমার ?
বলতে জল জোছনায় ভিজবো দুজনে...
শিশিরসমুদ্রে কাটবো নগ্ন সাঁতার...
ঝরা বাদলের ফুলে সাজাবো বাসর,
জোনাকপোকার দেবো মালা তোমার গ্রীবায়...
শোনাবো গান...আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়...
আজ এত দিন পর সেদিনের কথা কি মনে আছে তোমার ?
সেই যে মেঘের দলে রাজ্যের হতাশা... পাখিদের অবেলা ঘরে ফেরা...
কাঠ ফাটা ভাদ্রেও আকাশ থেকে গড়িয়ে পরলো দুফোঁটা জল...
তোমার আমার ভালোবাসার অকাল সমাপ্তি...?
জানো অস্পর্শী এখন আমার কী করে রাত কাটে?
এখন জেগে জেগে কেউ মুঠোফোনে আমায় আর ঘুমপাড়ানি গান শোনায় না...
ঘুমপরীরা চোখের পাতায় এসে নাচে না আর...
এখন আমি রাত কাটাই পাশ বালিশের গল্প শুনে,
কিংবা আঙ্গুলের নকশায় বিষাদের প্রহর গুনে...
অস্পর্শী, না হয় তখন খড়কুটোই ছিলাম, বৃক্ষ কি হইনি ?
প্রেমের ভেলায় ভেসে তোমার জন্যে কি স্বপ্ন তুলে আনিনি ?
এখন আর আমি বিষবৃক্ষ হয়ে বাঁচতে চাইনা...
আবার তবে খড়কুটোই হবো..
ভাসতে ভাসতে আস্তে আস্তে নিজেকে হারাবো...
দারুচিনি দ্বীপে কেনা স্বর্গখানা বিকিয়ে দিয়েছি...
ভালবাসা সেঁচে মনকে করেছি আরব্য মরুভূমি...
অস্পর্শী, তোমার কাছে পূজো তো চাইনি, প্রেম চেয়েছি,
প্রেম দাওনি, দিয়েছ প্রেমের প্রতিবিম্ব।
এটাও কি তবে তোমার লীলাই ছিল?"
[মৃণাল কান্তি রায় - তরুণ প্রজন্মের কবি । জন্ম ও শিক্ষা ঢাকায়,
পেশা- প্রকৌশলি । 'ভাল থাকা' আর 'ভুলে থাকা'দের সন্ধানে..কবিতার হাত ধরে
শব্দের আলপথে নিরন্তর হেঁটে চলা, সাতাশ পেরোন মৃণাল কান্তির । ]
সেলিম রেজা / কুয়েত সিটি
কল্পনার নতুন নক্শা হাতে প্রান্তিক কয়েদী
নির্জনদুপুরে খেলে লুকোচুরি প্রণয়- সংলাপ ;
রাতের জানালা খুলে ছুঁড়ে মাঝরাতি চুম্বন
এলোকেশে শাড়ি, গভীর টিপ কপালে
নেশাতুর কল্কি টেনে মত্ত প্রেমিকপাগল
অভিমান অভিমানে জীবনকথা ঘুমিয়ে পড়ে
অলস মৌনতায় দীর্ঘশ্বাস উতলে ওঠে,
তুমুল বিশ্বাসে-
মাঝে মাঝে জেগে ওঠে মৃদু হাসি
কল্পনার ভেতর নিঃশব্দে ডুবে যায় প্রান্তিক কয়েদী
উম্মাদনায় খেলা করে চিবুকের তিল
কামসুখে নামতা গুনে সহস্রবার
আশুলিয়া সবুজ ক্যানভাস পেরিয়ে শুনে
ভালোবাসার ভিন্নতায় কড়া নাড়ার শব্দ ।
[সেলিম রেজা – জন্ম ও শিক্ষা চট্টগ্রামে এখন থাকেন কর্মস্থল কুয়েত সিটিতে ।
কবিতা লেখার শুরু ১৯৯৫ থেকে । ৩২ বছরের সেলিম তাঁর কবিতার
অনুষঙ্গ রূপে নিয়ে আসেন প্রেম প্রকৃতি ও মানুষের সমাজ জীবন । ]
মৌ সু মী সে ন
সাঁতার জানিনা বলে
সেই আমি সাগর বুকে
ঝাঁপ দিয়েছি ঝিনুক কুড়ানোর ছলে ।।
আমি খেলবো ঢেউয়ের সনে
ভূলে গিয়ে সব স্মৃতি
একা একা শুন্য মনে
নদীর কানে বলে যাবো
আবার দেখা হলে ।
আমি দিয়েছি সাগর বুকে
আছে যত মনের জ্বালা
কাঁদবো না আর দুঃখে
স্রোতের টানে ভেসে যাবো
জানবে শংখচিলে ।।
সেই আমি সাগর বুকে
ঝাঁপ দিয়েছি ঝিনুক কুড়ানোর ছলে ।।
আমি খেলবো ঢেউয়ের সনে
ভূলে গিয়ে সব স্মৃতি
একা একা শুন্য মনে
নদীর কানে বলে যাবো
আবার দেখা হলে ।
আমি দিয়েছি সাগর বুকে
আছে যত মনের জ্বালা
কাঁদবো না আর দুঃখে
স্রোতের টানে ভেসে যাবো
জানবে শংখচিলে ।।