বর্ষা-বরণ ১৪১৯
বৃষ্টির ছড়া
অভিলাষা দাশগুপ্তা আদক
তপনের দহনে,ঝলসায় ধরণী।
শুখামাটি,গেল ফাটি,গ্রীষ্মের কাহিনী।
ঝোপঝাড়,বালুচর,চায় মেঘ,জল চায়,
গাছপালা, ঝালাপালা,টুটি ফাটা পিপাসায়।
যত জীব, নির্জীব,দিন কাটে হুতাশে।
অবশেষে, আষাঢ়ে সে,উঁকি মারে আকাশে,
জলকণা,হীরে দানা,অমূল্য উপহার,
পৃথিবীর সবাকার,দেন হল বিধাতার।
কালোমেঘ, ঝোড়োবেগ,ঢাকে আকাশের নীল।
টুপটাপ, জলছাপ,ভরা নদী খাল বিল।
ঝুপঝাপ,মেটে তাপ,শান্তির বৃষ্টি,
ঝমাঝম,বেশী কম,আবছা যে দৃষ্টি।
ঝিমঝিম রিমঝিম, বৃষ্টি আয় ঝেঁপে।
বানভাসি, সর্বনাশী,জল ঢালিস মেপে।

নন্দিতা ভট্টাচার্য
রোদের কাঠফাটা চেহারা টুঁটিচেপা গরম ছিন্ন ভিন্ন আকাশের নীল রং
রাস্তার ঢলানি পিচে হাঁটে না সারি সারি পা ,
দুপুরের ভি আই পি রোড গুমঘরের মত চুপচাপ সটান হাত মেলে উদলা ,
এ সি কাল কাচ গাড়িগুলো মধ্যদুপুরের একমাত্র খদ্দের ,
উড়ালপুল তৈরির তরিজুতে কামিনদের শরীরে রোদের করাত জিরোচ্ছে ,
দু'হাত তুলে জলে ডোবা মানুষের মত
ডাকছে বৃষ্টিকে মানুষ
বৃষ্টির মন আর সব ভুলেছে রোদের সখ্যতায়
বৃষ্টি আড়ি করেছে গাছপালা খাল বিল নদি নালা
প্রতিটি জলের ফোটার সাথে
বৃষ্টির জন্যে আনচান আকুল মানুষ আকাশের উঠোনে
জলচৌকিতে অপেক্ষা --এক ফোঁটা বৃষ্টির ।
বৃষ্টির জন্যে পনেরো লাইন

রত্নদীপা দে ঘোষ
প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু বৃষ্টি থাকে
বৃষ্টির অসুখী জ্যোৎস্না ক্রমশ ভেঙে পড়ে মানুষের শিরদাঁড়ায়
বৃষ্টিকে দেখে ব্যারিকেড গড়ে অশ্বমেধের ঘোড়া
কবিদের জন্য বৃষ্টি একটি কীটনাশক যা পাহারা দ্যায় অজস্র আকাশ
বৃষ্টি একটা ড্রাগ আচ্ছন্ন করে রাখছে ইশ্বরকে
যুবকের বুকের বৃষ্টিতে ঝনঝন বুলেট
আজ রাতে যে মানুষ আত্মহত্যা করবে তার জন্যে বৃষ্টি ব্যাক্তিগত দেরাজ
শীতের বৃষ্টি বনভোজনে যায় পিউ কাঁহা কার্ডিগান
আমাদের দরকার এমন বৃষ্টির যে দেবে ওড়ার প্রবণতা
গানের মধ্যে লক্ষ্য করো বৃষ্টির স্লিভলেস সিম্ফোনী
মাঠময় উজ্জ্বল শাড়ির বৃষ্টি তার পোশাকি নাম মাধবীলতা
বৃষ্টি এক নিঃশব্দ দিগন্ত যার শেষ দেখতে পায়নি কেউ
খয়েরবাড়ীর বৃষ্টি আসলে একটি কান্না যা যে কোনো পাত্রে রাখা যায়
বৃষ্টি এক প্রকার প্রাণায়াম তোমায় পৌঁছে দেবে শৈশবে
একটা বৃদ্ধ বৃষ্টি মৃত্যুর আগে চুমু খেয়েছিল নাবালিকা পৃথিবীকে

অবশেষে তুমি সেই সাজে
উগ্র গর্জনে, জ্বলন্ত অঙ্গারে
চমকিয়ে ধরা
ছড়ালে স্তরে স্তরে গগনে ।
নিভৃত একাকী উদাসী মননে
ভাবনায় মৃদু ছন্দে
ঝরঝর বারি ধবল পাহাড়ি
থইথই শিশু আনন্দে ।
কাগজে নৌকো ভেরায় না তরী
হারিয়েছে ভরা পুকুর
আহা! মনে পড়ে টিনের চালে
একটানা জল নুপুর ।
তবু বর্ষায় আছি ভরসায়
কাব্যের মহা পরব
শুধু কি কবিতা, রাগ আলাপে
সঙ্গীত তাও সরব ।
শ্রাবণের আধবোজা চোখ

অমিতাভ দাশ
শ্রাবণের আধবোজা চোখ
ওপরে মেঘের ভুরু
ঘাসেতে ফোঁটার নোলক
এ আমার একলা দুপুর…
কাজেতে মন বসে না
দু-টো-তেই ছুটির শুরু !
ও দিকে বৃষ্টি এলো
কবিতার পরলো নূপুর..
শ্রাবণের আধবোজা চোখ
সে দেখি মুচকি হাসে..
আমি যাই -- বৃষ্টি ভিজি
যদি কোন কবিতা আসে!
অশরীর ধরবো শরীর
যতনে রাখবো পাশে,
সে মায়ায় ভরবে এ-লোক।
শ্রাবণের আধবোজা চোখ…
বৃষ্টি কুড়িয়ে দিন যাবে
সৌনক দত্ত তনু

আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হলো রুদ্রাক্ষের বনে
তোমারও তো-গতি পেলো মুঠো
মনে পড়লো,তোমায় পড়লো মনে
অনেক কথা বলবো বলে বারংবার প্রতিক্ষায়
প্রতি স্বপ্নে,প্রতি জাগরণে,লক্ষ বাসনা
আশায় থাক,সে সব তুচ্ছ কথকথা।
বন্দীর বন্দনায় আমি বন্দী চিরন্তন
যত বর্ষা নেমেছে রাতের উতলা প্রহরে
ভিতরে কেউ কেঁদেছিল,
তাই কইতে কথা বাঁধে!
২.
বৃষ্টি নেই,মনে হয় বৃষ্টি ঝরেছিলো
অন্তহীন আকাশে আবার,মেঘলা অন্ধকার
কে তুমি আমাকে ছুঁয়ে গেলে আজ বরষায়
কে তুমি আমার বৃষ্টিভেজা বাতাস
প্রথম কদমফুল
এভাবে নয়,এভাবে ঠিক হয় না ভালোবাসা
তোমাকে কেউ পালাতে দেখেছে দিগন্তের ঐপারে
তোমাকে জানতে আমার যত ছল
সারাদিন ধরে ঝরিয়েছে নীল জল
কবেকার প্রথম একে অপরে ভেজা
জীবন যাপনে নিজেকে ভাবা রাজা
আমি ছাড়া কেউ-
কেউ কি কখনো মনে ভাবে
বৃষ্টি কুড়িয়ে দিন যাবে?
বৃষ্টি নেই,তবু মনে হয় বৃষ্টি ছুঁয়েছিলো...
বর্ষা দিনের প্রণয়

রিমঝিম বৃষ্টির এই দিনে
মন ছুটে যায় তোমার টানে
মন চায় আজ হাতে হাত ধরি
বর্ষায় ভিজি শুধু দু’জনে
গাছের পাতায় বৃষ্টি পড়ে
বন-বনানীর সবুজে ঘিরে
খুলে গেছে আজ স্মৃতির পাতা
বেঁজে ওঠে সুর গানে গানে
পাখিরা এখন ফিরেছে নীড়ে
বর্ষার ছটা আকাশ জুড়ে
কল্ দেবো কি মুঠোফোনে
ভীজবে কি তুমি ঐকতানে ।
কাব্য-গ্রন্থ আলোচনা
‘একমনা রোদ’ / অমিতাভ দাশ আলোচক - ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়

আটচল্লিশটি কবিতা নিয়ে অমিতাভ দাশের প্রথম কাব্য সংকলন ‘একমনা রোদ’ , প্রকাশ করেছেন পরশ পাথর প্রকাশনা – ২০১২ বইমেলায় ।
খুব বেশিদিন কবিতা লিখছেননা অমিতাভ । তাঁর কবিতা লেখার সূচনা ২০১১’র মাঝামাঝি সময় থেকে এবং পরের বছরের শুরুতেই গ্রন্থবদ্ধ করে প্রকাশ । কাব্যজগতে অমিতাভর পরিক্রমা অতয়েব নিতান্তই স্বল্প – আলোচ্য সঙ্গকলনটির প্রকাশ পর্যন্ত । কবিতার সাম্রাজ্যে তার এই নাতিদীর্ঘ পরিক্রমায় কবি নিজের ভাবনাবৃত্তের যে নির্মাণ করেছেন আমি সেটাই বুঝতে চাইবো । সংকলনটির প্রচ্ছদ লিপিতে তাঁর ভাবনাবৃত্তের স্বরূপ বা নিজ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন । আমরা জানতে পারি যে, কবিতা তাঁর কাছে নিজেকে খোঁজা আর প্রকাশের তাগিদ, সঙ্গে কিছু চেতনার আলোদ্বীপের উন্মোচন ও নির্মাণের অভিপ্রায়”। এই আলোচক যদিও মনে করে ‘কবিতা’ নিজেকে খোঁজা ছাড়াও অনেক কিছু । সে অন্য প্রসঙ্গ ।
একদা কৃতি ছাত্র অমিতাভ বৈদ্যুতিন বিষয়ে বি.টেক করে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমন ও বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি বিষয়ে পিএইডি করেন । তারপর আমেরিকা সহ নানান দেশে কর্ম ও গবেষণা সূত্রে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন । ১৯৯৯এ দেশে ফিরে বাসা বাধেন ব্যাঙ্গালোরে । ১৯১০ থেকে চাকুরি ছেড়ে দেন কবির ভাষায় ‘ইচ্ছেঘোড়াদের তদারকি’ করার জন্য । তাহলে বাংলার জল-হাওয়ার সঙ্গে তাঁর স্থায়ী সম্পর্ক ১৯৬৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত । সংগত ভাবেই তাই আমি তাঁর প্রথম কাব্য নংকলনে দেশ-কাল ও তার মানুষের কাব্যকথার খোঁজ করিনি । ‘একমনা রোদ’ কবির নিজেকে চেনার কাব্য-কথা । এবং নিজেকে চেনার – কবির ভাষায় নিজের ‘চেতনার আলোদ্বীপ’ নির্মানের উত্তাপ আহরণ করেছেন বাঙালি জীবনের ‘সাংস্কৃতিক বাতিস্তম্ভ’ গুলি থেকে – স্বীকার করেছেন ‘উত্তরাধিকার’ কবিতায় , কবির কথায় “মজে যে আছি, বাঙালি মাছি – বাঙালিয়ানার উত্তরাধিকারে...” ।
বৈদ্যুতিন দুনিয়ায় প্রযুক্তির জটিল অঙ্ক মেলাতে মেলাতে ‘দূর ছাই’ বলে চলে এসে কবিতাতেই আশ্রয় নিলেন কেন কবি ? তার হদিস পেয়ে যাই সংকলনের শেষ কবিতায় আর এই কবিতার নামেই সংকলনটিত নামকরণ । এ যেন বিহঙ্গের নভচর হবার আহ্বানে সাড়া দেওয়া ‘এবার উড়বো নীল ওই নীল আয়নায়’ । তো কবির সেই প্রার্থিত ‘নীল আয়না’টি কি ? কবি জানিয়ে দেন “কবিতা । /আমার সুখী পায়রার ঝাঁক /তোরা খা না দানা /আর গোলাঘরের চারপাশে/ওড়!” (অপেক্ষাচারণ) । কবিতার কাছে সমর্পিত হওয়ার অভিপ্রায় যেমন জানিয়ে দেন তেমনই কবিতার সমুদ্রে ভেসে যাওয়া কিংবা কবিতার ঝর্ণায় অনিঃশেষ স্নাত হয়ার স্নিগ্ধতাও ছড়িয়ে দেন পাঠকের অন্তরে
‘নীল নীল ওই নদীর বাঁকে
নীল জোনাকি আঁকল ছবি
নীল তারারা ঘিরল দেখো
নীল আসছে,তোমার কবি’(নীলে নীলে নীল)
কিংবা জীবনটাই যেন কবিতা তার কাছে – অথবা কবিতার মধ্যেই জীবনকে খুঁজতে চেয়েছেন । কিরকম ?
‘আমি উড়ি
আমি হাটি, আমি চরি
দানাগুলি খুঁটে খাই, কবিতার’...
... আমি ডুবি,
দিই কবিতার পুকুরে ডুব
শ্যাওলায় হারানো – কবিতার’ (কবিতা জীবন) ।
কবির ভাবনার একাকীত্বে তাঁর চারপাশের এবং তাঁর কাছে আসার প্রকৃতির গোপনীয়তার সৌন্দর্যময় প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি । আকাশ-সমুদ্র-নদীর সঙ্গে কিংবা ‘শঙ্খনীলে’র সঙ্গে কথোপকথনে । এই পর্যায়ে আটটি কবিতা আছে সংকলনে যেখানে প্রকৃতির গোপনীয়তাই প্রকাশিত কবির ভাবনার বিশ্বস্ততায়, স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে । ‘কথোপকথন’ পর্যায়ের এই আটটি কবিতাকে আমি অন্য কবিতাগুলির চেয়ে কিছু ওপরে রাখবো ।
অমিতাভ এখন প্রচুর লিখছেন এবং বেশ ভালো লিখছেন । আমরা যারা ‘ফেসবুক’এর নানান কবি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠাগুলিতে ঘোরাঘুরি করি তারা একথা জানি । আমি একথাও বিশ্বাস করি যে ‘একমনা রোদ’এর ২য় সংস্করণের সময় কবি নিজে হয়তো কয়েকটি কবিতা বাতিল করে দেবেন । ‘একমনা রোদ’এর পাশে কবির সাম্প্রতিক কবিতাগুলি পাঠ করলে তাঁর ভাবনা ও কাব্য নির্মিতির একটা পূর্বাপর বা ক্রম পরিণতি বুঝতে পারবো বলেই আমার বিশ্বাস । ‘একমনা রোদ’ কবি অমিতাভ দাশের কাব্য পরিক্রমার ‘নান্দীমুখ’, কিংবা তাঁর ভাবনাবৃত্তের তথা আপন উন্মোচন ।
সৌরিশ মিত্র কৃত প্রচ্ছদটি বেশ আকর্ষণীয় , মুদ্রনে প্রকাশক যথেষ্ঠ যত্নশীল ছিলেন বুঝতে অসুবিধা হয়না। কবি অমিতাভ দাশের প্রথম কাব্য সংকলন 'একমনা রোদ' কবিতা পাঠকদের কাছে আদৃত হবে বলেই এই আলোচকের বিশ্বাস ।
সারাদিন আজ আঁধার আষাঢ় মাস
কচি রেজা

সারাদিন আজ অভিসার মনে মনে
সারাদিন আজ সারাদিন রাধা একা
আঁধার ভাঙ্গে না অভিমানী কারো ধ্যানে
আজ উপেক্ষা,নুনহীনদিন একা
আজ অবসর দুটিহাত পাশাপাশি
রাধা যেন আজ লবন-গন্ধী ফুল
সারাদিন আজ বাজেনি মোহনবাঁশি
সারাদিন আজ অবহেলা খুব একা
সারাদিন আজ যেন যুদ্ধের দিন
ভালোবাসাহীন দীর্ঘ বিরহবেলা
বিরহী যক্ষ উদাস কাটায় দিন
আজ কোনো বাঁশি বাজে না যমুনা তীরে
কালিন্দী-জলে কাঁপে বিদ্যুতরেখা
বিরহী যক্ষ উদাস কাটায় দিন
ভালোবাসাহীন অবহেলা খুব একা
সারাদিন আজ আঁধার আষাঢ় মাস
সারাদিন আজ সারাদিন রাধা একা
সোঁদাগন্ধি আশ্লেষে বুক ভরে যায়,
থরথর কাঁপতে থাকে জলজ বৃক্ষের
পাতায় পাতায় যৌবন জ্বর;
চূড়ায় চূড়ায় হিম পরশ-
বুলায়
ঝুলবারান্দা-চালঘর সবকিছুতে আজ
কোরাসে অনুপ্রাস অনাবিল।
আর্দ্রকন্ঠে ক্রমাগত অভিশাপ মাখে এক বিপন্ন কোকিল।
ঘাসপাতায় লেগে থাকে অসংখ্য বিভ্রম,পারাবার স্বপ্নিল।।
তবুও…..আমি নাগরিক
পরিযায়ী মেঘের অন্যকিছু নই;শুধু এক বিধৌত প্রেমিক।

মৌ দাশগুপ্তা
অনেকদিন আকাশে বৃষ্টি ছিলো না,
তৃষ্ণার্ত মাটি ফুটিফাটা,একটু বৃষ্টির আশায়,
মেঘবালার দল জ্বলন্ত সুর্যকে আড়াল করে
চুপিসাড়ে বৃষ্টিকে ফেরত আনছিল তার আপন বাসায়,
ধরণীতে পাপড়ি মেলেছিল পিপাসিত প্রাণ,
বৃষ্টির ফোঁটাকে আশ্লেষে শুষে নেবার আবেগে,
অশান্ত হয়ে উঠেছিল সবুজের দল,
শিকড়বদ্ধ হয়েও ডালপালা ঝাঁকিয়ে -
বুঝি বা আকাশ থেকে বৃষ্টিদানা ছিনিয়ে আনার-
মন্ত্রনা করছিল কালবৈশাখীর সাথে,
আগামী অঙ্কুরোদ্গমের স্বপ্ন চোখে মেখে
অপেক্ষায় ছিল তন্দ্রামগ্ন বীজের দল।
অথচ কবির ভাষায় বৃষ্টি তো আকাশের কান্না বই কিছু নয়,
ও যে বেদনাহত সৃষ্টির যতিচ্ছেদ,
তার চেয়ে ভালো আমাদের সূর্যের আলোখানি,
মুছে দিতে পারে ভয়,বিভ্রান্তি, খেদ।
জীবন যেন মাটির মত, সাফল্য তবে বৃষ্টি,
আর মেঘবালার দল যেন মধুর স্বপ্ন,
কত মিল এদের, তবে কিনা অমিল ও কম নয়,তাই কি তুমি আজও বৃষ্টিকে চাও?
ভুলে যেতে চাও আগুনে ঝলসে যাওয়া?
নাকি পেতে চাও সবুজের এক কণা,
নতুন করে সৃষ্টিকে যদি পাও?
তবে বৃষ্টি পড়ুক ঝরে,
ও যাক না যতদূর পায় সাড়া,
সাড়া কে দেবে অসীম অচেনা আকাশে,
ওখানে তো শুধু জ্বলে মরে যত তারা।।
বৃষ্টি
পলাশ মিতা
আমি যাকে চাই
প্রার্থনা করি কায়মনোবাক্যে;
যাকে আমি ভালবাসি,
নিগাবানি করি হামেশাই,
সে আজ আসবে।
তাই…
দুপুরের দাবদাহ ক্রমশই লীন হচ্ছে।
নিয়ে আসক্তি পুনর্জন্মের
সারিসারি যুবতী মেঘেরা মুখ করেছে আদিভূমে,
ঘন গাম্ভীর্যে ডুম্রু হানে জলপতি আকাশ;
বনের ধারে বাতাস বরকন্দাজ।
উচ্ছল এলোচুলো রাজকন্যা- পরিপাটি সাজে
পায়ে পড়ে নেয় ঘুঙরু; হাতে চুড়ি
কপালে দ্রোহের কাজল,খোঁপায় চামেলি
যেন একটু পড়েই নাচতে যাবে জলসাঘরে।
চম্কিত হাসিতে বিজলি হেসে গেলে
খুলে যায় রুদ্ধদ্বার,
জলসিঁড়ি,
অবারিত...
অতঃপর আমার বৃক্ষজ শরীর করে স্নাত
কন্ঠমনি থেকে খুলে খুলে পরে আশির্বাদ শিলা;
ভেঁজা আঁচলের ভাঁজ খুলে মুক্তো মেলে ধরে,
আলতামাখা পায়ের ঢেউয়ে নিটোল বশ করে
অপ্রকৃতিস্থ মাতাল সময়; আর
পোড়া প্রেমিকের মদিরায় ঢালে
অজস্র চুম্বনধারা -দর্পণ।
সোঁদাগন্ধি আশ্লেষে বুক ভরে যায়,
থরথর কাঁপতে থাকে জলজ বৃক্ষের
পাতায় পাতায় যৌবন জ্বর;
চূড়ায় চূড়ায় হিম পরশ-
বুলায়
ঝুলবারান্দা-চালঘর সবকিছুতে আজ
কোরাসে অনুপ্রাস অনাবিল।
আর্দ্রকন্ঠে ক্রমাগত অভিশাপ মাখে এক বিপন্ন কোকিল।
ঘাসপাতায় লেগে থাকে অসংখ্য বিভ্রম,পারাবার স্বপ্নিল।।
তবুও…..আমি নাগরিক
পরিযায়ী মেঘের অন্যকিছু নই;শুধু এক বিধৌত প্রেমিক।

শিবলী শাহেদ
বর্ষা আমার জানালায়
আওয়াজ তোলে অকৃপণ ।
বৃষ্টির ফোঁটায় নির্লিপ্ত প্রেমের তরজমা
শুনে আমি যেন প্রসারিত হই
আটপৌরে সলিউশনে ইতস্তত ভ্রমণ ।
"এসো এবার একটি কবিতা পড়া যাক "
লোরকা অথবা নেরুদা
রবীন্দ্র কিংবা রুদ্র
থেকে থেকে সব পড়ে নেব আজ
এই বর্ষায় আমি প্রসারিত হতে হতে
একসময় ছুঁয়ে ফেলবো
আনন্দ আর অচ্ছুতের মাঝে
যা আছে সব ।
সহ্যাসহ্য
মানস বিশ্বাস
কাল অসহ্য গরমে ঘেমেছিলাম অনেক,
আজ গরমে আকাশও কাবু,
আজ আকাশ তৃষায় কাঁপে,
মেদিনী কাঁদে তৃষ্ণায়,
শান্তির বারি ধারাপ্লাবনে বিধ্বস্ত,
বৃষ্টি তুমি আর কেঁদো না।।