আমার
বন্ধুর বিয়ে
উপহার
বগলে নিয়ে
আমি আর
আতাহার,
মৌচাক
মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম
দু সেকেন্ড থামলাম ।।
টপটিপ
ঝিপঝিপ
বৃষ্টি
কি পড়ছে ?
আকাশের
অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা বাড়ছে ?
আমি আর
আতাহার বলুন কি করি আর ?
উপহার
বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু
সারা গায়ে মাখলাম
হিহি করে হাসলাম ।।
কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রয়ানে বিনম্র শোক-শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে 'অন্য নিষাদ' । প্রয়াত লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করছি দুটি কবিতায় -
লেখক

সম্রাটের মতো
চৌকাঠ ডিঙিয়ে
চলে গেলে তুমি
আর বাইরে তোমার
সাতটি ঘোড়ার রথ,
সারা শহর তখন
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
দেখছে আকাশী পাঞ্জাবির পকেটে
জমিয়ে রেখেছ লীলায়িত সুখ
স্মিত হাসিতে ম্লান হয়েছে
চাঁদের আলো, তোমার
অত্যুজ্জ্বল চোখ।
একমাত্র তুমিই জেনেছিলে সেই
গোপন ঘরের হদিশ
জোনাকির ঝাড় লণ্ঠনে
আলোকিত সেই নাচঘর
নাটকের মঞ্চে কুশীলব
খেলা করে গেলে
সোনালি আঙ্গুলে
দুলে ওঠে শস্যের হ্মেত
মায়াবী শব্দরা সব।
ঘুম আয়
আমার হুমায়ুন
এখনও ঘুমোতে পারেনি।
নুহাশ পল্লী, বনানী না মিরপুর-
চলছে নাটক ভর দুপুর রাতেও।
আমি বসে আছি এক সিদ্ধান্তের জন্য,
তাঁকে ঘুমোতে দেই একটু।
বেচারা ক’দিন না ঘুমিয়ে ক্লান্ত।
জোর দখলের মাত্রা একটু থামুক,
তার সেরা স্থান হওয়া চাই হৃদয়ে।
ভালোবাসার কাননে, প্রত্যেকের মনে।
আসুন তাকে ঘুমোতে দেই শেষ বার।
নুহাশ পল্লী, বনানী না মিরপুর-
চলছে নাটক ভর দুপুর রাতেও।
আমি বসে আছি এক সিদ্ধান্তের জন্য,
তাঁকে ঘুমোতে দেই একটু।
বেচারা ক’দিন না ঘুমিয়ে ক্লান্ত।
জোর দখলের মাত্রা একটু থামুক,
তার সেরা স্থান হওয়া চাই হৃদয়ে।
ভালোবাসার কাননে, প্রত্যেকের মনে।
আসুন তাকে ঘুমোতে দেই শেষ বার।
অন্যান্য কবিতা
চৌঘরিয়া থেকে বহুদূর
মধ্য রাতে ব্যালকনি তে
দূরের আকাশ , তারা দেখি
এ বি এম সোহেল রশিদ
শব্দের স্বাধীনতা ভালবাসার জিঞ্জিরে বন্দী
সব অধিকার হরণ করেছ তোমার শিষ্টাচার
মনের সব কথা পাথর চাঁপা, মন দিবে বলে
দিয়েছে একহাত লজ্জার ঘোমটা জানাজানির ভয়ে ।
তোমার নিষ্ঠুরতায় হারাচ্ছে আমার স্বকীয়তা
দু’চোখের নীরব বর্ষণে হার মেনেছে মৌনতা।
তুমি রাজপথে শব্দের মিছিল দেখেছ কখনো?
দ্রোহের আগুনে কেমন করে জ্বলে উঠে ন্যায্য উচ্চারণ
সব পুড়ে ছারখার! চুপচাপ শুধু দেহের পোষ্টার।
বাজছে দামামা উচ্চারিত হচ্ছে বুকে জমা ভালবাসার উপমা
পথের স্লোগানে, নেই কোন আপোষ, ফিরিয়ে দাও অধিকার।
সত্যের ঢাক বাজছে চমৎকার, শব্দের জয় নিশ্চিত
শব্দের প্লাবনে থেমে গেছে চোখের শ্রাবণ, কালমেঘ গেছে সরে
মুক্ত এখন আমি পাশ কেটে গেছে একটা দীর্ঘশ্বাস।
শোন আমার বিদ্রোহী উচ্চারণ
ভালবাসি তোমাকে ভালবাসি
এক জীবনে ভালবাসি, দুই জীবনে ভালবাসি
পরের জীবনেও ভালবাসি এ আমার অধিকার ।
তোমার জন্যে একটা কবিতা লিখবো বলে জমিয়ে রেখেছিলাম কিছু
টুং টাং নিরবতা, ময়লায় ব্যবহার অযোগ্য কিছু স্মৃতি, যা তোমার
হৃদয়ের বারান্দায় আলো নিভে গেলে হেঁটে বেড়ায়। খুচরো কিছু চুম্বন দৃশ্য
... আর রোগাক্রান্ত আলিঙ্গন। কিন্তু বছর ঘুরে বছর এলো খুললোনা শব্দের জট।
আবার তৈরি হলাম চিন্তার শানানো কাস্তে আর কবিতার মাঠে প্রবেশের সাজ
সজ্জা নিয়ে, সাথে কিছু বিকলাঙ্ক আলো,স্পর্শের সুক্...ষ্ম অনুভুতি, ছোঁয়াছোয়ির সন্ধ্যা।
চলে গেলো আরো একটি বছর কবিতা লেখা হলোনা।এবার আর ভুল হবেনা। এই-
সাথে নিলাম যুতসই কাগজ, কাব্যিক বলপেন আর মনের ক্লাসে গোপন শ্লেট।
হয়তো আগামি মার্চে সাদা পায়রার পাখনায় তুলে পৌঁছে দেবো তোমার রাজ্যে কাঙ্খিত
কবিতাখানি । অথবা জানিনা কতো বছর পর তোমার জন্য জন্ম নেবে এ হৃদয়ের
চাতালে একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা । তোমার জন্য একটি কবিতা ।

চৌঘরিয়া থেকে বহুদূর
চৌঘরিয়া থেকে বহুদূর নুলিয়াপট্টি—
দীর্ঘ এই পথ জুড়ে শুধু কাক, আর বুড়ো বক, বুড়ো বক...
ভাগ্য তার কালো মেঘে যেখানে ঢেকেছে মুখ,
এক পায়ে বুড়ো বক সেখানে দাঁড়ায় ।
যে-পথে মানুষ চলে—
সে-পথেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়েছে, তাই
ধীরে ধীরে কেটেছে বিগত রাত্রিগুলি...
কিন্তু এখন রাত্রি নয় । কুয়াশার দুপুরে
ধীরে ধীরে এই পথে জেগেছে জারুল, দুইধারে পুরনো পাকুড় ।
যদি আজ শিমুলের অমন ছায়ার নিচে
ছায়া হয়ে বসে থাকে তার মন?
ক্লান্ত দুপুরের পরে, ছায়ার জীবন সে বেছে নেয় যদি!
চৌঘরিয়া থেকে নুলিয়াপট্টি,
মাঝখানে নিরিবিলি ঝুলিয়া স্টেশন ।
ট্রেনের জানালায় যে-মুখ থাকে প্রতিদিন, সেই মুখ বারবার
নাম ধরে ডাক দেয় দিগন্ত অবধি...
আজ যদি তার মনে হয়, সরে গেলে দিগন্তের কালো মেঘ—
স্টেশনের ঘণ্টা শুনে, ঘুরে তাকাবে একবার নিথর সময়?
চৌঘরিয়া থেকে বহুদূর... কী করে ভুলবো এই পথ,
যে-পথে বুড়ো বক এক পায়ে দাঁড়ায়?
জীবনের খুব কাছে এসে, স্টেশনের ঘণ্টা, বাজে নিরবধি
মধ্য রাতে ব্যালকনি তে
দূরের আকাশ , তারা দেখি
আমার মতোই একলা জেগে
আমার দিকেই তাকিয়ে সে কি ?
তারার চোখের তারা জ্বলে,
জ্বলি , জ্বলা দেখি !
সরবো , পা সরে না
সাথের সাথী সরে
ভাবি, মরে বাঁচি !
ভোরের লন্ এ ছোট্ট পাখি
সঙ্গীরে কোন ডালে রাখি
নেচে ঘুরে ঠোঁটে করে
ঘাসের ডাঁটা কূড়ায় , ধরে
কোন সে স্বপন কোন সে আশায়
নিচ্ছে দূরে , উড়ে উড়ে !
মনটা আমার মুচড়ে কাঁদে !
মন এর বুকের মন নাচে না
ছোট্ট পাখির লেজ এর নাচন দেখি
দেখে ভাবি , ফের বাঁচি !
চোখের পাতা নড়ে না
গাছের পাতা নড়ে
দেখে বুঝি , বেঁচে আছি !!
দ্রৌপদী / ঝর্ণা চট্টপাধ্যায়
বসে
ছিল ছেলেটা
পুঁটলি ছিল মাথায়
মেয়েটার আশায়
বসে বসে সময় গোণে...
ধনঞ্জয় মুর্মু
জঙ্গলে কাঠ বাছে
ইজারাদের পয়সায় দিন কাটে
একটা ছিল পাতাকুড়ুনি
মেয়েটার নাম পানমণি
ভাব হল দুজনে ।
কিন্তু তারা একজাত
তাদের ঘরে চলে না ভাত
জ্ঞাতি-গুষ্টি সবাই গেল রেগে
মো’ল্পাহাড়ী, রামপুরহাট, সেখান থেকে
সিধা লখনোউমারা যাবে ভেগে
সেটাই হল ঠিক ।
পাথরখাদানে কাজ ক’রবে
দুজনে সুখে থাকবে
স্বপ্ন নামে চোখের পাতায়
জল ক’রে চিক চিক
ধনঞ্জয় মুর্মু বসে থাকে
পানমণির আশায়
সময় যায় বয়ে টিক টিক...
সকাল গড়িয়ে দুপুর,তারও পরে বিকেল
ঘোর ভাঙ্গে গোলমালে
চীৎকার,লোকজন
হাতে টাঙ্গি,বল্লম
বিবস্ত্রা দ্রৌপদী চলে রাস্তা, দুধারে
হাজারো দুঃশাসনে রেখেছে ঘিরে
অপমানে নীল মুখ ভয়ার্ত, কাঠ
মাথার উপরে দু-হাত
যেন সহমরণে চলেছে মেয়ে
কাতারে কাতারে লোক
লোলুপ রক্তচোখ
চেটে দ্যাখে আদিবাসী মেয়েকে
বিবস্ত্রা পানমণি
কঠিন মুখখানি
দ্যাখে শুধু ধনঞ্জয়ে, কে রেখেছে আটকে?
এলোপাথাড়ি মার
বুঝি বা ধনঞ্জয় এবার
জনতার রোষে হয় মৃত
নগ্ন আদিবাসী মেয়ে
পার হয় সমুখ দিয়ে
জনতা পান করে ঘৃণ্য-অমৃত ।
কয়েকবছর পর,
পানমণি উঠে আসে খবরের পাতায়
সেদিনের দ্রৌপদী
আদিবাসী পানমণি
পুরস্কার ‘সাহসিনী’
পায় সে শংসাপত্র, আর কিছু টাকায়
চাপা পড়ে দুঃশাসনের পাপ
চাপা পড়ে ভীস্মদের মিথ্যা বিলাপ
একাকী দ্রৌপদী,
ঘুরে ফেরে বনভূমি, মাঠ,ঘট সব...
যেখানে শায়িত ছিল ধনঞ্জয়ের শব।
পুঁটলি ছিল মাথায়
মেয়েটার আশায়
বসে বসে সময় গোণে...
ধনঞ্জয় মুর্মু
জঙ্গলে কাঠ বাছে
ইজারাদের পয়সায় দিন কাটে
একটা ছিল পাতাকুড়ুনি
মেয়েটার নাম পানমণি
ভাব হল দুজনে ।
কিন্তু তারা একজাত
তাদের ঘরে চলে না ভাত
জ্ঞাতি-গুষ্টি সবাই গেল রেগে
মো’ল্পাহাড়ী, রামপুরহাট, সেখান থেকে
সিধা লখনোউমারা যাবে ভেগে
সেটাই হল ঠিক ।
পাথরখাদানে কাজ ক’রবে
দুজনে সুখে থাকবে
স্বপ্ন নামে চোখের পাতায়
জল ক’রে চিক চিক
ধনঞ্জয় মুর্মু বসে থাকে
পানমণির আশায়
সময় যায় বয়ে টিক টিক...
সকাল গড়িয়ে দুপুর,তারও পরে বিকেল
ঘোর ভাঙ্গে গোলমালে
চীৎকার,লোকজন
হাতে টাঙ্গি,বল্লম
বিবস্ত্রা দ্রৌপদী চলে রাস্তা, দুধারে
হাজারো দুঃশাসনে রেখেছে ঘিরে
অপমানে নীল মুখ ভয়ার্ত, কাঠ
মাথার উপরে দু-হাত
যেন সহমরণে চলেছে মেয়ে
কাতারে কাতারে লোক
লোলুপ রক্তচোখ
চেটে দ্যাখে আদিবাসী মেয়েকে
বিবস্ত্রা পানমণি
কঠিন মুখখানি
দ্যাখে শুধু ধনঞ্জয়ে, কে রেখেছে আটকে?
এলোপাথাড়ি মার
বুঝি বা ধনঞ্জয় এবার
জনতার রোষে হয় মৃত
নগ্ন আদিবাসী মেয়ে
পার হয় সমুখ দিয়ে
জনতা পান করে ঘৃণ্য-অমৃত ।
কয়েকবছর পর,
পানমণি উঠে আসে খবরের পাতায়
সেদিনের দ্রৌপদী
আদিবাসী পানমণি
পুরস্কার ‘সাহসিনী’
পায় সে শংসাপত্র, আর কিছু টাকায়
চাপা পড়ে দুঃশাসনের পাপ
চাপা পড়ে ভীস্মদের মিথ্যা বিলাপ
একাকী দ্রৌপদী,
ঘুরে ফেরে বনভূমি, মাঠ,ঘট সব...
যেখানে শায়িত ছিল ধনঞ্জয়ের শব।
যাজ্ঞসেনী, কে বলে তুমি
বহুভোগ্যা ?
তোমার ওই দীপ্ত রূপ, পুস্পিত দেহ
শুধুই পবিত্রতার প্রতীক |
তোমার আকর্ণ বিস্তৃত আঁখি
আলুলায়িত কেশজাল
পদ্মগন্ধি তনু, সুন্দর অথচ
দৃঢ় মুখাবয়ব প্রকাশ করে
তোমার তীব্র ব্যক্তিত্ব |
শশ্রুমাতার মান রাখতে
তুমি পঞ্চপাণ্ডবকে স্বামী রূপে
গ্রহণ করলে সাদরে, সসম্মানে |
কেউ কি বুঝেছিল বা শুনেছিল
তোমার ওই অন্তরের আকুতি ?
হয়তো কেউ না বা হয়তো কেউ ...
যাজ্ঞসেনী, যাকে তুমি স্বামীরূপে
গ্রহণ করেছিলে সেই তৃতীয় পান্ডবও
ছিলেন নির্বাক, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ |
প্রথম পান্ডব কৌরবদের সঙ্গে
পাশাখেলায় তোমায় বাজি রাখার
আগে কিছুই ভাবলেন না ?
এ কি অনাচার ?
যে দুঃশাসন তোমার পবিত্র
অঙ্গ স্পর্শ করে রাজদরবারে
সবার সামনে তোমার বস্ত্রহরণের
প্রচেষ্টা করলেন-- ধিক্ তারে শত ধিক্
বড় বড় জ্ঞানী পুরুষেরা মুখ বন্ধ করে
শুধুই তামাসা দেখলেন ....
মধ্যম পান্ডব ভীমসেন একমাত্র
প্রতিজ্ঞা করলেন যে যতদিন না
তিনি ওই লম্পট দুঃশাসনের
বুক চিরে তার রক্তে তোমার ওই
সুদীর্ঘ সুন্দর কেশরাশি
রঞ্জিত করতে না পারেন ততদিন
তুমি তোমার কেশগুচ্ছ খোলা রাখবে |
কি কপাল তোমার!
প্রত্যেকটি স্বামী এক বা একের অধিক
বিবাহ করলেন তোমার কথা
না ভেবেই ?
মহাভারতের যুদ্ধে ভীমসেন
তাঁর শপথ পুর্ণ করলেন
কিন্তু তুমি হারালে তোমার
আপন সন্তানদের |
যুদ্ধ অন্তে তুমি পঞ্চ পান্ডবদের
সঙ্গে মহাপ্রস্থানের পথযাত্রী হলে |
সশরীরে স্বর্গে যেতে না পারলেও
তোমার দিব্যদেহ স্থান পেল
ইন্দ্রাসভায় দেবী "শ্রী" রপে |
ওগো বীরভোগ্যা রমণী, তুমি নাও
আমার শত-সহস্র প্রনাম ||
তোমার ওই দীপ্ত রূপ, পুস্পিত দেহ
শুধুই পবিত্রতার প্রতীক |
তোমার আকর্ণ বিস্তৃত আঁখি
আলুলায়িত কেশজাল
পদ্মগন্ধি তনু, সুন্দর অথচ
দৃঢ় মুখাবয়ব প্রকাশ করে
তোমার তীব্র ব্যক্তিত্ব |
শশ্রুমাতার মান রাখতে
তুমি পঞ্চপাণ্ডবকে স্বামী রূপে
গ্রহণ করলে সাদরে, সসম্মানে |
কেউ কি বুঝেছিল বা শুনেছিল
তোমার ওই অন্তরের আকুতি ?
হয়তো কেউ না বা হয়তো কেউ ...
যাজ্ঞসেনী, যাকে তুমি স্বামীরূপে
গ্রহণ করেছিলে সেই তৃতীয় পান্ডবও
ছিলেন নির্বাক, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ |
প্রথম পান্ডব কৌরবদের সঙ্গে
পাশাখেলায় তোমায় বাজি রাখার
আগে কিছুই ভাবলেন না ?
এ কি অনাচার ?
যে দুঃশাসন তোমার পবিত্র
অঙ্গ স্পর্শ করে রাজদরবারে
সবার সামনে তোমার বস্ত্রহরণের
প্রচেষ্টা করলেন-- ধিক্ তারে শত ধিক্
বড় বড় জ্ঞানী পুরুষেরা মুখ বন্ধ করে
শুধুই তামাসা দেখলেন ....
মধ্যম পান্ডব ভীমসেন একমাত্র
প্রতিজ্ঞা করলেন যে যতদিন না
তিনি ওই লম্পট দুঃশাসনের
বুক চিরে তার রক্তে তোমার ওই
সুদীর্ঘ সুন্দর কেশরাশি
রঞ্জিত করতে না পারেন ততদিন
তুমি তোমার কেশগুচ্ছ খোলা রাখবে |
কি কপাল তোমার!
প্রত্যেকটি স্বামী এক বা একের অধিক
বিবাহ করলেন তোমার কথা
না ভেবেই ?
মহাভারতের যুদ্ধে ভীমসেন
তাঁর শপথ পুর্ণ করলেন
কিন্তু তুমি হারালে তোমার
আপন সন্তানদের |
যুদ্ধ অন্তে তুমি পঞ্চ পান্ডবদের
সঙ্গে মহাপ্রস্থানের পথযাত্রী হলে |
সশরীরে স্বর্গে যেতে না পারলেও
তোমার দিব্যদেহ স্থান পেল
ইন্দ্রাসভায় দেবী "শ্রী" রপে |
ওগো বীরভোগ্যা রমণী, তুমি নাও
আমার শত-সহস্র প্রনাম ||
এ আমার অধিকার
শব্দের স্বাধীনতা ভালবাসার জিঞ্জিরে বন্দী
সব অধিকার হরণ করেছ তোমার শিষ্টাচার
মনের সব কথা পাথর চাঁপা, মন দিবে বলে
দিয়েছে একহাত লজ্জার ঘোমটা জানাজানির ভয়ে ।
তোমার নিষ্ঠুরতায় হারাচ্ছে আমার স্বকীয়তা
দু’চোখের নীরব বর্ষণে হার মেনেছে মৌনতা।
তুমি রাজপথে শব্দের মিছিল দেখেছ কখনো?
দ্রোহের আগুনে কেমন করে জ্বলে উঠে ন্যায্য উচ্চারণ
সব পুড়ে ছারখার! চুপচাপ শুধু দেহের পোষ্টার।
বাজছে দামামা উচ্চারিত হচ্ছে বুকে জমা ভালবাসার উপমা
পথের স্লোগানে, নেই কোন আপোষ, ফিরিয়ে দাও অধিকার।
সত্যের ঢাক বাজছে চমৎকার, শব্দের জয় নিশ্চিত
শব্দের প্লাবনে থেমে গেছে চোখের শ্রাবণ, কালমেঘ গেছে সরে
মুক্ত এখন আমি পাশ কেটে গেছে একটা দীর্ঘশ্বাস।
শোন আমার বিদ্রোহী উচ্চারণ
ভালবাসি তোমাকে ভালবাসি
এক জীবনে ভালবাসি, দুই জীবনে ভালবাসি
পরের জীবনেও ভালবাসি এ আমার অধিকার ।
শেষের
কবিতা / অপর্ণা গাঙ্গুলী
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ ।
পেয়েছি কি তবে ফুল কুড়ানোর ডাক ?
পাওয়া না পাওয়ার ছবিতে গড়া কোলাজ
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ ।
শীতের শেষের জীর্ণ অমলতাস ...
অথবা কনক চাঁপায় ঝরেছে ফুল
ভুলের মালাতে গেঁথেছি জুই, বকুল
শুকনো মালাটি হারালো যে ফুলবাস...
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ
পেয়েছি যে শেষে ফুল কুড়ানোর ডাক ... ।
গোলাপকলি
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ ।
পেয়েছি কি তবে ফুল কুড়ানোর ডাক ?
পাওয়া না পাওয়ার ছবিতে গড়া কোলাজ
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ ।
শীতের শেষের জীর্ণ অমলতাস ...
অথবা কনক চাঁপায় ঝরেছে ফুল
ভুলের মালাতে গেঁথেছি জুই, বকুল
শুকনো মালাটি হারালো যে ফুলবাস...
ইষ্টিপত্র লিখতে বসেছি আজ
পেয়েছি যে শেষে ফুল কুড়ানোর ডাক ... ।
গোলাপকলি
ও আমার গোলাপকলি,কবে ফুটবি রে তুই বল,
হেসে খেলে হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চল।
লাজে রাঙা গালের আভা,যেন স্ফটিকের বিচ্ছুরণ ,
তোকে দেখেই কান্না চেপে হাসতে পারে মন।
ধীরে ধীরে ফুটে উঠে ,গন্ধে ভরিয়ে তোলা,
রঙ ছড়িয়ে পাপড়ি মেলে আলোর সাথে খেলা।
গোলাপকলি,তোর জন্যই চোখে নোনা বান,
রঙ হারিয়ে পাপড়ি খসে যখন জীবন
অস্তমান ।
আমার কথা যা শুনে যা, আমার সাধের সই,
গোলাপ হয়েই আসিস আবার,অপেক্ষাতে রই।।
তোমার কি কেউ আছে ?
কুন্তলা কেমন আছো তুমি?
তোমার নিটোল হাতে আজও কি
ঝলমল করে নানা রঙ্গা পাথরের আঙটি,
ছেলেমানুষি বিশ্বাসে এখনো ভাবো
পাথরে ঠিক ঠিক ভাগ্য বদলে যাবে?
প্রেমের পদ্যে আজও কি
তোমার মন উচাটন হয়?
উপন্যাসের নায়িকার হত ভাগ্যে
চোখে জল নামে ঝর ঝর?
রাস্তার ধারের চটপটি ফুচকা
এখোন তোমাকে টানে?
কেন জানি আজ এসব বড় বেশী
জানতে ইচ্ছে হয়,
বয়সটা যেন বুনো মোষ,
দুদ্দাড় করে সব পথ ভেঙ্গে
আমায় নিয়ে এসেছে কতটা দূর,
ক্লান্ত চোখে ভারী কাচের আড়ালে
পৃথিবীর রঙ রূপ আর আগের মত
দেখতে পাইনে মোটেই,
শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীর কাল
কাচের
ব্যবধান ফুল কেনার আবদার করা
কিশোরী,
আর টুংটাং রিকশার ঘন্টা থেকে
আমাকে নিয়ে গিয়েছে অনেকদুর।
সুগার হয়েছে, মাপাজোকা খাবার দাবার,
নির্ঘুম রাত, ইনসমনিয়ার অত্যাচার,
তারপরও থেকে থেকে শুধু তোমার
কথাই মনে হয় আজকাল।
কেন যে আমাদের দুয়ে দুয়ে চার
মেলেনি তখন কিছুতেই,
এত কাছে এসে তারপরও
কিছুতেই যেন কিছু মিললনা,
ভালবাসা ধুয়ে মুছে শুধু
কষ্টের কাব্য লেখা হল কেবল,
পরিবারের মুখ রক্ষায় তুমি
ভালবাসা দিলে জলাঞ্জলী,
আমি ভবিষ্যতের সোনালী সুতোয়
বাঁধা পড়ে ছুটতে থাকলাম।
আজ এতকাল পরে
স্মৃতির পরতে পরতে
জমেছে রাজ্যের ধুলো,
আমার আর কথা বলার কেউ নেই,
কথা শোনার কেঊ নেই,
তোমার কি কেউ আছে কুন্তলা?
তোমার জন্যে একটা কবিতা লিখবো বলে জমিয়ে রেখেছিলাম কিছু
টুং টাং নিরবতা, ময়লায় ব্যবহার অযোগ্য কিছু স্মৃতি, যা তোমার
হৃদয়ের বারান্দায় আলো নিভে গেলে হেঁটে বেড়ায়। খুচরো কিছু চুম্বন দৃশ্য
... আর রোগাক্রান্ত আলিঙ্গন। কিন্তু বছর ঘুরে বছর এলো খুললোনা শব্দের জট।
আবার তৈরি হলাম চিন্তার শানানো কাস্তে আর কবিতার মাঠে প্রবেশের সাজ
সজ্জা নিয়ে, সাথে কিছু বিকলাঙ্ক আলো,স্পর্শের সুক্...ষ্ম অনুভুতি, ছোঁয়াছোয়ির সন্ধ্যা।
চলে গেলো আরো একটি বছর কবিতা লেখা হলোনা।এবার আর ভুল হবেনা। এই-
সাথে নিলাম যুতসই কাগজ, কাব্যিক বলপেন আর মনের ক্লাসে গোপন শ্লেট।
হয়তো আগামি মার্চে সাদা পায়রার পাখনায় তুলে পৌঁছে দেবো তোমার রাজ্যে কাঙ্খিত
কবিতাখানি । অথবা জানিনা কতো বছর পর তোমার জন্য জন্ম নেবে এ হৃদয়ের
চাতালে একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা । তোমার জন্য একটি কবিতা ।
বাগানে পাপারাৎজি / পৃথা রায়
চৌধুরী
দিস্তা কাগজের
মেয়েটা রোজ হাইওয়ে পার হয়
গায়ে পেনের আঁচড়ে আঁকা প্ল্যাটিনাম নয়ছয়
দুহাত ভর্তি বালি ছেলেটার, মরুভূমি
চোখের চশমায় ক্যাকটাস দামি
অন্ধত্ব ভালবেসে মন্ত্রপাঠ
চীনেমাটির কপাট লোপাট।
সকাল সন্ধ্যে হাজার বুটি জামদানি হাসির প্রদর্শনী
লঙক্লথ হাওয়াই শার্টের বোতাম ভাঙা উদ্বোধনী
পিচরাস্তায় রোডোডেন্ড্রন খোঁজে ভিজে ঠোঁট
স্বভাববিরুদ্ধ আঙ্গুলে আঙ্গুলে জোট
মগজ শানিয়ে শব্দভেদ
পেষানো জেদ বিভেদ ।
হলদে পাতার কেলেঙ্কারি মশলা চাট, আলোচনায় মাত
ঘন্টা হিসেবে কাটে খুচরো পয়সার রাত
আলু সেদ্ধর সাথে গলাগলি লেগপীস
ইচ্ছেগলির বামন পলকে হাপিশ
সঙ সেজেছে রঙকানা
আজব নিশানা টালবাহানা।
গায়ে পেনের আঁচড়ে আঁকা প্ল্যাটিনাম নয়ছয়
দুহাত ভর্তি বালি ছেলেটার, মরুভূমি
চোখের চশমায় ক্যাকটাস দামি
অন্ধত্ব ভালবেসে মন্ত্রপাঠ
চীনেমাটির কপাট লোপাট।
সকাল সন্ধ্যে হাজার বুটি জামদানি হাসির প্রদর্শনী
লঙক্লথ হাওয়াই শার্টের বোতাম ভাঙা উদ্বোধনী
পিচরাস্তায় রোডোডেন্ড্রন খোঁজে ভিজে ঠোঁট
স্বভাববিরুদ্ধ আঙ্গুলে আঙ্গুলে জোট
মগজ শানিয়ে শব্দভেদ
পেষানো জেদ বিভেদ ।
হলদে পাতার কেলেঙ্কারি মশলা চাট, আলোচনায় মাত
ঘন্টা হিসেবে কাটে খুচরো পয়সার রাত
আলু সেদ্ধর সাথে গলাগলি লেগপীস
ইচ্ছেগলির বামন পলকে হাপিশ
সঙ সেজেছে রঙকানা
আজব নিশানা টালবাহানা।

অপেক্ষারা / তামজিদ
আহমেদ
হৃদয়ের
শত শত আবেগে আবেশে
নির্জনতাকে একাকী ভালোবেসে
যবনিকার আলোড়নে শেষ হবে
উল্লাস-সিন্ধুর কু-বিপ্লবে ।
গাঢ় আকাঙ্খ্যার আলোড়ন চলছে
ধীর লয়ে
হেমন্তের নদী,শীতল ঢেউ উদ্বেল অচঞ্চল
হৃদকুঞ্জে গাহে শত পাখিদল ।
অপেক্ষারা গাঢ় অশ্রু ফোঁটায় ঝরে
আবর্তনে বিবর্তনে আমার অন্দরে ।
অপেক্ষারা-
নিদারুণ শোকাহত অক্ষরে অক্ষরে
ক্ষুধিতের মতো এক সকরুণ সুরে
ফেলছে নিশ্বাস উড়ে উড়ে ভস্ম করে
হতাশ প্রাণে অনিদ্রা হরণে নিকষ অন্ধকারে ।
মায়াজাল জলন্ত শিখর প্রদেশে
নক্ষত্রের মশাল হাতে
অলৌকিক সুদর্শন
দুঃখভরা স্মৃতিতে ।
নির্জনতাকে একাকী ভালোবেসে
যবনিকার আলোড়নে শেষ হবে
উল্লাস-সিন্ধুর কু-বিপ্লবে ।
গাঢ় আকাঙ্খ্যার আলোড়ন চলছে
ধীর লয়ে
হেমন্তের নদী,শীতল ঢেউ উদ্বেল অচঞ্চল
হৃদকুঞ্জে গাহে শত পাখিদল ।
অপেক্ষারা গাঢ় অশ্রু ফোঁটায় ঝরে
আবর্তনে বিবর্তনে আমার অন্দরে ।
অপেক্ষারা-
নিদারুণ শোকাহত অক্ষরে অক্ষরে
ক্ষুধিতের মতো এক সকরুণ সুরে
ফেলছে নিশ্বাস উড়ে উড়ে ভস্ম করে
হতাশ প্রাণে অনিদ্রা হরণে নিকষ অন্ধকারে ।
মায়াজাল জলন্ত শিখর প্রদেশে
নক্ষত্রের মশাল হাতে
অলৌকিক সুদর্শন
দুঃখভরা স্মৃতিতে ।
হে
প্রবীণ কবি,
তুমি তো কবিতা চাওনি,
আমিই তা জানি ।
তুমি দেখেছো আমার ভাঙ্গা কুটির খানি ,
নিয়ে নিমেষের গভীর দৃষ্টি ফেলে ।
আমি খেলেছিলেম একবার খেলা,
তা ছিল হৃদয়েতে মেলা, হাসির বেলার,
খোলা মেলা প্রান্তর মিলে যেথায়
সকাল বা সাঁজ বেলায় ।
হঠাৎ এলো ঝড়,
ঈশান কোণে প্রবল বেগে, উড়িয়ে নিল মন ,
নিয়ে গেল গহীন সাগরে ।
প্রাণপণের সাঁতার, তীরে ভিড়ার ।।
ভাবলাম, পেয়েছি, পেয়ে গেছি তারেই,
পাওয়া আর হলো না।
খুঁজি আজও,
বিশ্বাসের নিঃশ্বাসের অতল প্রান্তে,
পেয়ে গিয়েও মুহূর্তে হারাই;
আসে সেই ঝড়ের ধ্বজাই ।
চেনা আর অচেনার হয়ে মিশে গেছে সে,
চিনিতে পারি না তারে ।
কাঁদে মন, করুণা মাগে প্রাণ, বহেরে জীবন,
ভাবেরই জীবন!
তুমি তো কবিতা চাওনি,
আমিই তা জানি ।
তুমি দেখেছো আমার ভাঙ্গা কুটির খানি ,
নিয়ে নিমেষের গভীর দৃষ্টি ফেলে ।
আমি খেলেছিলেম একবার খেলা,
তা ছিল হৃদয়েতে মেলা, হাসির বেলার,
খোলা মেলা প্রান্তর মিলে যেথায়
সকাল বা সাঁজ বেলায় ।
হঠাৎ এলো ঝড়,
ঈশান কোণে প্রবল বেগে, উড়িয়ে নিল মন ,
নিয়ে গেল গহীন সাগরে ।
প্রাণপণের সাঁতার, তীরে ভিড়ার ।।
ভাবলাম, পেয়েছি, পেয়ে গেছি তারেই,
পাওয়া আর হলো না।
খুঁজি আজও,
বিশ্বাসের নিঃশ্বাসের অতল প্রান্তে,
পেয়ে গিয়েও মুহূর্তে হারাই;
আসে সেই ঝড়ের ধ্বজাই ।
চেনা আর অচেনার হয়ে মিশে গেছে সে,
চিনিতে পারি না তারে ।
কাঁদে মন, করুণা মাগে প্রাণ, বহেরে জীবন,
ভাবেরই জীবন!