এই সংখ্যায় ১৮ট কবিতা । লিখেছেন শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী, অমিতাভ দাশ, রাজর্ষি ঘোষ, কৌশিক ভাদুড়ী, রেজা রহমান, ইন্দিরা দাশ, মণীষা মিত্র, সন্দীপন চক্রবর্তী,শ্রাবণী বসু, সুমী সিকান্দার,মধু ভট্টাচার্য, কল্যান সরকার, হৈমন্তী চন্দ্র, গৌতম দাশ, শামিম পারভেজ, ইন্দ্রাণী সরকার এবং কাব্য গ্রন্থ আলোচনা ('অন্ধকারে ঝিনুকের দল'/ইন্দিরা দাশ)
শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী
পুরোনো পশম
যেখানে আলোর গাছ, মেহগনি, সবুজ বাথান,
বানানো পাহাড় আছে, উপমার মতো কিছু স্রোত,
সোনামোড়া ধান আছে, সেলোফেনে মোড়া বনভূমি –
পরিমিত রাখা আছে মরা রাত, বৃদ্ধ কপোত
সদ্য ফেলেছে কেউ, সেখানেই, দেখেছি তোমায়
স্নেহের শরীরে ঢাকা আলেয়ার মতো তুমি রোদ –
পাশে আছে কবিতারা, সাজানো নতুন ভালোবাসা,
অনূদিত ভাঙা গানে বেজেছে তখনও অনুরোধ
নষ্ট ফুলের রশি পড়ে থাকো উঠোনে কারোর,
ঘরের ভিতরে আছে লাল-নীল জাদুঘোড়া, মোম
আরো কত কিছু আছে যেখানে কখনও ছিলে তুমি –
ব্যবহৃত হয়ে গেছ, বুঝে নাও পুরোনো পশম
অমিতাভ দাশ
খোলামকুচি
দূরে চলা এক নদী
সুপুরিবনের সারি
আমি ঢেউ ছুঁতে পারি!
তারাময় ও আকাশ
হাওয়া অনন্ত মাঠে
সে ছোঁয়া আমার ঠোঁটে
আলোয় নাচে আনন্দ
প্রতিটা -- মুহূর্তে
স্বাধীন করায়, কে?
পাতারা সবুজ স্নানে
গানেতে ভাসে খোয়াই
বৃষ্টি -- আমি কুড়াই
নীরবতা মোমআলো
আভায় কাঁপে ও মুখ
ওখানে রেখেছি সুখ
বসতি নিরুদ্দেশ
বানভাসি চোরাটানে
ডুবি আমি শিহরণে
তৃপ্তির ডাল ভাত
কোল ঘন কী আদরে
একতারা... যায় দূরে
দূরে চলে এক নদী
তাকে ছোঁয় নীলাকাশ
প্রতিফলনেই শ্বাস
রাজর্ষি ঘোষ
মেঘবালকের বৃষ্টিকথা
অসহায় লাগে।
আয়নার ছায়ানট; একবিন্দু পিছলে পড়েছিল জোৎস্মা
আঙুলের ফাঁক গলে।
সে আস্তিনে নরম শিশির।
কে যেন বালুচরী, কামরাঙা রঙা শাড়ি ছড়িয়ে আসে, তবে
এখন সে সব সূর্যাস্তের কথা।
যা ছিল পরাগ,
একান্তে সে মেঘবালকের মন ভারি। মাদলের ডাক ছিল
তার বৃষ্টি ভেজা শাল-পিয়ালের পথে।
কৌশিক ভাদুড়ী
এলাটিম বেলাটিম
মোম আর আলোর তৈরি একটা
তর্জনি আমাকে দেখিয়েছিল বেরিয়ে যাওয়ার দরজা।
ও কি জানত একটু পরেই ওকে নিভতে হবে।
গলা মোমে বুঁজে যাবে নিষ্ক্রমণের সব রন্ধ্র?
এলাটিম বেলাটিম লাট্টু দুটো দিন রাত ঘুরছে।
এ ঘোরে ঘড়িমুখো ও ঘোরে বেঘোরে।
মাঝখানে ফেঁসে থাকা চিংড়ি মন টুকড়ো হচ্ছে।
সারাক্ষন।
বেনো জলে আসা চিংড়ি কি জানত ধেনো
জলে ফেঁসে যেতে হবে?
অন্ধকার ও বন্দিত্ব দুজন আমাকে বন্ধক রেখেছে।
হিজরে হাতে তালি দিয়ে দমকল ডাকি,
কেউ আসে না।
জেলখানার দেওয়ালগুলো
যদি চিনতাম ভেঙে দিতাম।
২.
আমার বোঁটা ছেঁড়া কবিতারা চেয়েছিল
সূর্যের কাছে গিয়ে ইকারুসের মত মরতে।
মেঘের পালকে বসে জটায়ুর মত মরতে
কবিতার দুশমনদের কচুকাটা করে।
অথচ জৈবিক প্রেম
বালজাকের মিঁয়াঁও চোখেচোখে
বন্ধ করেছে কবিতার এসকেপ ডোর।
কোটি কোটি পদ্যের না ফোটা
কোঁরক
স্ট্রেচারে দড়ি বাঁধা
প্রতিদিন ইঞ্চি ইঞ্চি করে ঢুকছে হিমঘরে।
কী লাভ হবে অমানুষ ঈশ্বরের
কাছাকাছি থেকে ?
৩.
কতগুলো বিপন্ন চাহনি আর খিদে
লোকটাকে উর্দি পরিয়েছিল আঠেরো বছরে।
চল্লিশ বছর পরে উর্দি খুলে দেখল
তলায় তলায় কতগুলো কন্টিনেন্ট শিফট হয়ে গেছে।
খুঁজে পাচ্ছে না আয়নায় নিজের ছবি,
নীলসুতো বিঁড়ির বান্ডিল, কান খোঁচানো
চেনা কাকের পালক, চওড়া পাটার বুক,
ভাঙা মাটির খুঁড়িকুচি, ইত্যাদি যা কিছু,
যা দিয়ে জীবদ্দশায় লিখত কবিতা।
রেজা রহমান
রিটার্ন টিকেট
সকালে টেবিলে বসি খবরের কাগজ বিছিয়ে
পোড়া চোখদুটো সাত সকালেই কে দেয় ভিজিয়ে!
নামটা কি বলে দেবো! না বলবোনা—
অন্তর্লীন থেকে যাক অতলান্ত সে মাধুর্য্যকণা।
কষ্মিনকালেও আর ডাকবোনা সে নামটি ধরে
পুরোনো সে নামটাই নতুন নামের মত করে
ডাকি আমি ডাকটা কি পুরোনোই হবে?
পুরোনা সে ডাকটা কি আমাকে ফিরিয়ে নেবে
প্রত্নপ্রাণের উৎসবে ?
এতকাল পর আমি কেন জানলাম—
পুরোনো সে নয় যদি নতুনও তো নয় সেই নাম
আর কত দূর কমলাপুর—
কত আর হাঁটি আমি সকাল সন্ধ্যা দুপুর!
ছেড়েই কি গেল নাকি এখনো দাঁড়িয়ে শেষট্রেন!
রিটার্ন টিকেট নয় ওয়ানওয়ে টিকেটই দেবেন।
ব্যাপকে তো যাই আমি যাই কি গভীরে
একবার যাই যদি আসবো কি ফিরে!
কে তুমি দাঁড়িয়ে ধ্রুবতারা
নদী তীরে!
কী চাহ শঙ্খচিল কাকে খোঁজো মেঘদের ভিড়ে!
জলের আত্মজ আমি কী করে আমাকে নেবে নীড়ে!
জাগো শুদ্ধতম অগ্নি জ্বলো বহ্নিচিতা
এই বুঝি ছেড়ে দিলে শেষট্রেন তূর্ণানিশীথা!
ইন্দিরা দাশ
চিঠি
প্রিয়বরেষু,
তোমার ধারের বিছানা
চাদরটা একটু রেখেছি
কুঁচকিয়ে
বালিশখানা আছে.....অল্প
তোবরানো
এক লক্ষ্ বছর
আগে ... এক শুক্রবার ... দেখেছি
তোমায় আমি যেন
লিস্টি বাঁধা ভ্রমন
অফিসের সেরে
চওড়া -কপাল এক দোহারা
মানুষ …ফিরে আসবে এ ঘরে
আরাম চেয়ারে
তালাত মাহমুদ খুশি রেকর্ড
প্লেয়ারে
অরেঞ্জ পিকো'র ঘ্রাণ ...
যেমনটি বানাতাম দিয়ে
মন প্রাণ
আমার বন্ধক দেওয়া
পঁচিশটি বছর
পঁচিশ বছরের
ঘন হয়ে বসে থাকা যুবক –যুবতী
সেই দিন আমাদের...
মিষ্টি ছলাত বুকে থিরথির কেঁপে ওঠা সে ভালবাসায়
আজ ও মনে ফিরে আসে এই অবেলায়
দাঁড়াও জানলাটা বন্ধ করি আগে
এদিকেও তো স্মৃতি
এলো ঝেঁপে
রেখেছি তো মনে
সেই একখানা দিন ...
এক আঁচল প্রেমে দুই মন প্রাণ সঁপে
সাড়ে-তিন-লক্ষ্ সাল একসাথে
হাঁটার প্রস্তাব
আঙ্গুল উপচে- পড়া ছিল যেন জীবনের লাভ
আর আঁচল ভরা প্রেমে যেইদিন
মন -প্রাণ সঁপে
এ কপালে ঠিক
মধ্যেখানে
দুই ভ্রু'র মাঝে ...ছোট্ট লাল উপস্থিতি
হলো যে তোমার
সাহানা 'র তানে।
চাকরি টা পেতে ... মেদ–মেধা-মাংস সব গেছিল তোমার
আর আমারও চটির সুকতলা
কত প্রয়োজন ছিল ছ’টা টিউশন দুই বেলা!
তাও খড়কুটো দিয়ে
বাঁধা বারবার
বাবুই পাখির বাসা
ছোট ছোট পা'র
সুখশব্দেত়ে ভরা টিফিন সাজানো দিন
গুলো
কিছু কাঁদা ….আর…….কিছু কিছু
হাসা
সংসারের সব ছিদ্র
ধৈর্য্য ধরে ধরে ...রিফু করে করে
হাঁটা হলো কিছু
পথ
কিছু অভিমান রয়ে
গেছে
যার নাম তিলক কামোদ
তাও দেখো , সোম-বুধ -বিষ্যুদের
বুক ফুঁড়ে
চিকন গোলাপী যেন
গাছেদের পাতা
ধীরে মহীরুহ হয়ে
উঠেছিল আমাদের......আস্থা ......মমতা
বলেছিলে দেবে আমায়
অর্ধেক আকাশ.. আর …এক
ঝুড়ি ভরা ভালবাসা
তাই শিউলি ভোর’টা ছিল ওমের চাদর হয়ে কাছাকাছি আসা।
আজ তাই নিঃসঙ্গ
পায়চারিতে …...ঘড়ির টিকটিক শব্দে
হয়েছি বধির -
স্তব্ধতায় বড় ভার
অন্তরের নীড়
ইমন আমার ...
তুমিহীন এইসব দিন
একাকিত্বে বড় একাকার ।
একমুঠো জ্যোৎস্না পাঠিয়েছি
নীল খামে…… ...পেয়েছ তো ?
হৃদয় মাহমুদ
সাদা শাড়ী
শরৎ দা এখন আর বউদিকে সাদা রঙ্গের শাড়ী কিনে দেয় না ;
তাতে আমার'ও তেমন কিছু আসে যায় না !
ছোটবেলায় যখন বাবা সাদা পান্জাবী কিনে দিত -
তা আমারও পছন্দ হত না !
আমি তখন লাল এর ভীতর নীল খুজতাম ,
শরৎদার বউ'ও এখন মনে হয় -
আমার মত হয়ে গেছে !
এখন হয়ত লাল এর ভিতর নীল খোঁজে ;
আর সেই কাশফুল জড়ানো -
সাদা শাড়ীর জন্য অপেক্ষা করে ।
শরৎ দা এখন আর বউদিকে সাদা রঙ্গের শাড়ী কিনে দেয় না ;
তাতে আমার'ও তেমন কিছু আসে যায় না !
ছোটবেলায় যখন বাবা সাদা পান্জাবী কিনে দিত -
তা আমারও পছন্দ হত না !
আমি তখন লাল এর ভীতর নীল খুজতাম ,
শরৎদার বউ'ও এখন মনে হয় -
আমার মত হয়ে গেছে !
এখন হয়ত লাল এর ভিতর নীল খোঁজে ;
আর সেই কাশফুল জড়ানো -
সাদা শাড়ীর জন্য অপেক্ষা করে ।
মেঘ দিদি
তুই রোদ্দুরে পুড়ে বেড়াস ,
জ্বলের খবরও রাখিস না ।
দেখ , আমাদের সেই কবিতার উঠোন টা -
একাই ভিজে যাচ্ছে ,
তুই তার খবরও রাখছিছ না ।
তুই না আমার মেঘ দিদি !
তুই ত আমাকে ভিজাস না ,
আমার কবিতার ঘরের চাল -
কেমন যেন বৃষ্টিহীন হয়ে আছে ,
চোখের পাতায় শেওলা গুলি মারা যাচ্ছে ,
তুই কি বৃষ্টি হয়ে আসবি না ?
নাকি শুধু রুদ্দুরেই পুড়ে যাবি ;
যেমন করে -
আমার ভাবনার কাশফুল গুলি শুকিয়ে গেছে ।
তুই রোদ্দুরে পুড়ে বেড়াস ,
জ্বলের খবরও রাখিস না ।
দেখ , আমাদের সেই কবিতার উঠোন টা -
একাই ভিজে যাচ্ছে ,
তুই তার খবরও রাখছিছ না ।
তুই না আমার মেঘ দিদি !
তুই ত আমাকে ভিজাস না ,
আমার কবিতার ঘরের চাল -
কেমন যেন বৃষ্টিহীন হয়ে আছে ,
চোখের পাতায় শেওলা গুলি মারা যাচ্ছে ,
তুই কি বৃষ্টি হয়ে আসবি না ?
নাকি শুধু রুদ্দুরেই পুড়ে যাবি ;
যেমন করে -
আমার ভাবনার কাশফুল গুলি শুকিয়ে গেছে ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)