এই সংখ্যায় ৩০টি কবিতা । লিখেছেন – রণদেব দাশগুপ্ত,অরিন্দম
চন্দ্র, সপ্তাশ্ব ভৌমিক,
তাপস দাশ, শাশ্বত ব্যানার্জী, সৌমিত্র চক্রবর্তী, অনুপম দাশশর্মা, শৌনক দত্ত, ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়, মৌ দাশগুপ্তা, অভিলাষা দাশগুপ্ত আদক, দোলনচাঁপা ধর, সুবীর সরকার, পাঞ্চালী সিনহা, সুনন্দা চক্রবর্তী, শ্রীশুভ্র, দেবাশিস লাহা, বিদিশা সরকার, নিষাদ নয়ন, সতীশ বিশ্বাস, অদিতি চক্রবর্তী, অর্ঘ্য রায়চৌধুরী, দেবাশিস কোনার, শাহরিয়ার শিহাব, শ্রাবণী বসু, রুদ্রাক্ষ রায়হান, বিলিকিস আরা ক্ষমা ।
সম্পাদকীয়
প্রাক-শারদ শুভেচ্ছা জানাই অন্যনিষাদ’এর সমস্ত শুভানুধ্যায়ীকে ।
‘অন্যনিষাদ’এর কোন শারদীয়া বিশেষ
সংখ্যা প্রকাশিত হয় না, বরং উৎসবের দিনগুলোতে পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ থাকে । সেই
রীতি অনুযায়ী আগামী সংখ্যাটি প্রকাশিত হবে ১০ই অক্টোবর ।
সম্প্রতি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনভিপ্রেত ঘটনায় ছাত্র বিক্ষোভের উত্তাপ সংবেদনশীল নাগরিক সমাজকে আলোড়িত করেছে
‘অন্যনিষাদ’ কলকাতার প্রতিবাদী ছাত্র-সমাজের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছে এই
সংখ্যায় কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রতিবাদী কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে ।
‘এই অন্যনিষাদ-সপ্তাহে’ই শারদীয়া
উৎসবের শুরু আর তার পর আর এক পবিত্র উদযাপন – ‘ঈদ-উজ-জোহা’ ৬ই অক্টোবর । প্রকাশিত দুটি কবিতায় পাওয়া
যাবে আসন্ন দূর্গাপূজার আমেজ । উৎসবের দিনগুলি সকলের কাছেই আনন্দ ও প্রীতির বার্তা
বয়ে আনুক,
প্রীতিপূর্ণ হোক ক’টা দিন, এই শুভেচ্ছা জানাই । পাঠকের সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ হবে
বিজয়া দশমীর পরে, ১০ই অক্টোবর ।
রণদেব দাশগুপ্ত
পতাকা
মিছিলনগর মেলাচ্ছে স্বর
কোলকাতা
হোক্ না রে পেশ হিসেবনিকেশ
খোল্ খাতা
অশান্ত দিন
দীপ্ত নবীন
তোদের জন্য আজ অগণ্য
কোল পাতা...
অরিন্দম চন্দ্র
কথামালা
শুনলাম আজকাল তুমি রাস্তায়
বার হলে
পুলিশ-প্রশাসনের চোয়াল শক্ত
হয়,
হাতের মুঠি আরও জোরে চেপে
ধরে লাঠি
কিম্বা আরও আধুনিক কোন
অস্ত্র।
দেখলাম রাজপথে তোমারই জন্য
এত আয়োজন, এত সব কিছু-
লাঠি,গুলি,জলকামান
বা মার্শাল-আর্ট,
কারণ তুমি লজ্জা পেয়েছ।
কেউ কেউ এখনও লজ্জা পায়,
কেউ কেউ এখনও বোবা হয়ে না
থেকে
আর একবার কথা বলে ওঠে,
চুপ করে না থেকে তার সাথে
আরও
অনেকে কথা বলে ওঠে,
আরও একবার কথারা জেগে ওঠে
ঘুম ভেঙ্গে।
সপ্তাশ্ব ভৌমিক
বিপ্লব
– প্রতিবিপ্লব
উপড়ানো চোখ
ধুলোতে ঢাকা পড়ে আছে
রক্তে ভেজা কাটা কান
মাটির উপড়ে
ভাঙা দাঁত ইতস্তত
ছড়ানো ছিটনো
ধূসর ঘিলুর রস খুলি ভেদ করে
প্রথম আলোর স্বাদ পেল
হত্যায় বিপ্লব বেঁচে থাকে
মৃত্যুতে জেহাদ বেঁচে থাকে
প্রত্যাঘাতে প্রশাসন বেঁচে
থাকে
কোনো মন্ত্রে মানুষ বাঁচে
না!
ভয়
শুধু ভয়
ভয়-১
বাদামি বিশ্বাস শুধু
ডাহুকের মত ডেকে গেল
সব রাজি ভোজবাজি চুন থেকে
পান খসে চুপ
বারোয়ারি বাগানের আগাছারা
ভূত খুঁজে পেল
ছাতিমের নীচে তাই লতা পাতা
ভয়ে নিশ্চুপ
ভয় -২
অলি-গলি পায়ে হেঁটে সাগরের
পাড়ে এসে থম
পদাতিক ভয়ে কাঁটা, পাটাতনে বসে আছে যম
সময় দাঁড়িয়ে আছে, অথচ
সময় হাতে কম!
ভয় -৩
মাকড়শা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে
রেখেছে তার জাল
গোলা গুলি কিছু নেই, আছে জং ধরা তরোয়াল
শাশ্বত ব্যানার্জী
হোক
কলরব
এখনও যে তুমি ঠিক করোনি
আজকে মিছিল তোমার কি না
তাকেই বলছি – তোমায় ছাড়া
‘হোক কলরব’ জোর পাবে না
এখনও যে তুমি কষছ হিসেব
কার অন্যায়, কার কী দোষে
ডাকছি তোমায় – স্নান করে
যাও
আজ আমাদের দারুণ রোষে
এখনও যে তুমি
দ্বন্দে-দ্বিধায়
রাজার আঙুল স্বপ্নে দেখো
ভয় পেয়ো না – ও-হাতখানা
অক্ষত আর থাকবে নাকো
হাড়ের আসন কবজা করে
তর্জনীর আজ স্পর্ধা ভারী
ভুলেই গেছে – গড়ার মজুর
এক নিমেষে ভাঙতে পারি
আজ ডাক উঠেছে অন্ধরাজা
এক্ষুনি ওই তখ্ত ছাড়ো
দুলছে মালা মৃত্যুফুলের
দেখব কত মারতে পারো
এখনও যে তুমি শান্ত আছো
ভাবছ হাঁটবে হুকুমমতো
কাল দেখবে নিজের ঘরে
নিজেই কেমন বহিরাগত!
আজকে মিছিল দিনবদলের
মিছিলে আজ বিচার-চাওয়া
রাজপথে আজ ভয়-না-পেয়ে
পুলিশকর্ডন পেরিয়ে যাওয়া
পুলিশকর্ডন রাত চিরে খায়
পুলিশকর্ডন কন্ঠরোধে
চাইছে ওরা শাসন ছড়াক
আমার প্রেমে তোমার বোধে
তোমার মেয়ের ছেঁচড়ে শরীর
দম্ভ ছেঁড়ে আব্রু, কাপড়
একবারটি তাকিয়ে দেখো
পুলিশ তোমার বুকের ওপর
আজকে মিছিল হাড়মাংসের
দহনভাষায় কাব্য লেখার
বুকের থেকে উপড়ে শাসন
চোখ-রাঙানি ভাঙতে শেখার
দাবানলের গাছগুলো সব
ঘিরছে শহর কদমতালে
জানলা দিয়ে ঠিক তুমিও
মুখ বাড়াবে কৌতূহলে
সাহস পেয়ে রাস্তা ভাবে
যাক জ্বলে যাক এ রৌরব
শিকল-ছেঁড়ার বন্ধু এসো –
হোক কলরব হোক কলরব ...
সৌমিত্র চক্রবর্তী
এ
উজ্জ্বল ঋণ আমার
জুলপির দুপাশে রূপোলী আদর
নিয়ে
তোর কাছে একফোঁটা
স্বেদ চেয়েছিলাম,
তুই রোদ্দুর দিলি।
চারপাশে কুঁজো দের ভীড়ে
দলদাসের ফেউ ডাকের মাঝে
ক্লান্ত হালের গতি চেয়ে
তোর কাছে একচিলতে
হাওয়া চেয়েছিলাম,
তুই ঝড় এনে দিলি।
অন্ধদাগ চিরে পরতের পর পরত
শুধুই আরো অন্ধকার,
নিজের আঙুলও অবিশ্বাস
করে কাচ চুরচুর বিগত হৃদয়,
নিজেকে চিনতে তোর কাছে
একমুঠো আলো চেয়েছিলাম,
মরুঅন্ধকারে তুই এনে দিলি
অরোরা বেরিয়ালিস।
ভয়ঙ্কর স্বপ্নের মাঝে গোল
বৃত্তাকারে
ঘিরে ফেলে বীভৎস মার এর দল,
গলায় জমাট আতংক নিয়ে
তোর কাছে শব্দ চেয়েছিলাম,
তুই গর্জন করে কলরব এনে
দিলি।
ইতিহাস পেছনে ফেরানোর
চক্রমূলে
পঞ্চাশ হাজারি পায়ের দাপটে
তুই, একমাত্র তুইই
কাঁপিয়ে দিলি গর্বিত
দৈত্যের বাগান।
অনুপম দাশশর্মা
যাদবপুর
এখন আতঙ্ক হোক তোদের....
কিছু শব্দ যত্ন করে রেখে
দিই অপচয়ের কোটায়
আপনার জন্যে ঘেন্নার বেদীতে ছুঁড়ব তাই..
আপনি শিল্প অনুরাগী, এতদিনে জেনেছে
আকাশ বাতাস আর সমূদ্রের
নোনা জল,
'
বিশ্বাস করুন বুকের
অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা
শব্দগুলো তারপর বসে যায় না-মানুষটির বন্দনায়
হ্যাঁ আপনি, আপনিই
পারেন দরজা বন্ধ করে
আলো কেড়ে নিয়ে চাবুক তুলে দিতে
বশংবদ ঊর্দির হাতে, যারা পশুকে লজ্জায় ফেলে
সফল সন্তান নিপীড়নে।
এই শুনছেন, আপনিও উতরে গেছেন স্বপ্নের মায়াজালে
বেঁধে ফেলতে লুকানো ঝুলি বেড়ালের
তাই অন্ধকার চেপে ধরে মনুষ্যত্বের গলা
চারিদিকে ছিটকে পড়ে সভ্যতা সংস্কৃতির ভাবীকাল
তবুও.......
আপনি শেষতঃ খুঁচিয়ে দিলেন
পূতঃ অগ্নি..
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল
যাদবপুর..
ঠিক যেখানে আপনি সমস্ত
সম্ভাবনার একরাশ ঘেন্না
সঞ্চয় করে এসেছেন
এই সেদিন, এক
অপদার্থ উপাচার্যের
নারকীয়তায়
শৌনক দত্ত
পদযাত্রা
আমার,আমাদের
জেনকিন্স,সুনীতির পাশেই যাদবপুর।
চলো হাঁটি
সরণী ধরে চলো হেঁটে যাই
রাজপথে
শ্লোগানের ভাষা হোক নীরবতা
সাদা নীল চটির ফিতায়
চলো হাঁটি
মুখোশ বর্ম খুলে ফেলে
হাওড়া থেকে যাদবপুরে
চলো হাঁটি
ভরে থাকা
সুখ দুঃখ কাঁটা ছড়ানো ছায়ায়
হাওড়ার সেই দিন তোমার রক্তে
খাঁকি অক্ষরের ছবি আঁকা
আজ যাদবপুরে কি করে
অন্য নয়ন তোমার পাথরে স্থির
অবিচল
দীর্ঘদিন খালি হাঁটি আর
হাঁটি
দেখা তো হবে না জানি
টুকরো দাঁড়িয়ে এখন মধ্য
দুপুরে
আমি বিরহী
আমরা পোড়া মোমের সলতার মত
বোবা
কর্কশ টানে ছিঁড়ে ফেলতে চাই
ঘাসফুল
তোমার জন্য সেই হাওড়ার
কান্না
নীরব যন্ত্রনাও যাদবপুরের
হীন চিত্রে সেভাবেই কাঁদায় যেভাবে মুখের আভা
মুখোশে বাতাসে বিলাসিতা
ভাসাই
চলো হাঁটি মিছিলে রাজপথে
খালি পায়ে
চলো হাঁটি গেরুয়া
চলো হাঁটি সবুজ
চলো হাঁটি সাদা...একসাথে।
তাপস দাস
যাদবপুর
আলবাৎ যাবো বারবার যাবো
তুমি কে হে রোখার?
ওই বৃষ্টি ভেজা মিছিল আমার
আত্ম পরিচয়।
আলবাৎ যাবে বারবার যাবে
সন্তান
তুমি কে হে রোখার?
ওই মিছিল সন্তানের দিলরুবা
মহব্বত।
আলবাৎ যাবে বারবার যাবে
বহ্নিশিখা
তুমি কে হে রোখার?
ওই মিছিল যাদবপুর একবগ্গা যোদ্ধা।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)