অন্তিম কৈফিয়ৎ
কথাটা বলতে কষ্ট হচ্ছে না তা নয়, হচ্ছে । তবে তা একান্তই নিজস্ব । যন্ত্রণার ছবিতো লেখা যায় না । এই সংখ্যাটিই সম্ভবত ‘অন্যনিষাদ’এর শেষ
সংখ্যা । মনে হয় ‘অন্যনিষাদে’র প্রয়োজন ফুরিয়েছে
। চতুর্থ বর্ষের একাদশ সংখ্যায় পৌছে থেমে যাচ্ছি । না, শারীরিক কারণে নয় । বয়সের ভার বুদ্ধিবৃত্তি কিংবা বিচারবোধকে এখনও বিন্দুমাত্র আচ্ছন্ন করতে পারে নি, আঁচড় কাটতে
পারেনি মেরুদন্ডের ঋজুতাকেও । তাহলে ?
শুরু করেছিলাম একটা স্থির লক্ষ্য নিয়ে । তা হ’ল, বাংলা
কবিতাকে আরো বেশি
পাঠকের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া । আর প্রতিষ্ঠিত কবিদের পাশে নবীনদের কবিতার প্রকাশ করে তাদের উৎসাহ দেওয়া । কিছুটা পেরেছি । এটা করতে পেরে আমি দারুণ তৃপ্ত ।
এখন মনে হচ্ছে যারা ভালো লেখেন তাদের একটা অংশের কাছে এটা কাম্য নয় । (তারা কিন্তু সংখ্যায় নিতান্ত কম) । কেউকেউ পরামর্শ দিয়েছে অমুকের কবিতা নেবেন না । আমি সেই পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছি । তারা চাইলেও কবিতা দেন না । না দিতেই পারেন, কেননা কারো লেখারই কোন সাম্মানিক
অর্থমূল্যতো দেওয়া যায় না । তাঁরা অনুরোধের
প্রাপ্তি স্বীকারও করেন না । আবার আগে কবিতা দিতেন কিন্তু দেওয়া বন্ধ করেছেন এটা মনে করেন যে তাঁর কবিতার পাশে
অনেক অপরিনত কবিও
স্থান পাচ্ছে এটা
তাঁর কাছে অসম্মানজনক
।
‘অন্যনিষাদ’এ প্রতি সপ্তাহে
২৫ থেকে ৩০টি কবিতা প্রকাশিত হয় । প্রতি সংখ্যায় প্রতিষ্ঠিত ও নবীনদের কবিতার
একটা ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করি (করতাম বলাই ভালো ) । সব কবিতা
সমমানের হয় না । প্রতি
সংখ্যায় দুএকটা অপরিণত কবিতাও থাকে । কিন্তু কেউ যদি মনে করেন তিনি প্রবীণ, তাঁর লেখা অমুকের কবিতার চেয়ে ভালো, সুতরাং সূচিপত্রের ক্রমিকে তাঁর আগে অমুকের নাম থাকা তাঁর কাছে অসম্মান জনক – এর
মিমাংশা করা আমার অসাধ্য । কারণ বয়সের কারণে সরকারী দপ্তরে পদোন্নতি হতে পারে কিন্তু কাব্য-বিচারের ক্ষেত্রে সেই সূত্র খাটে না । অনেকেই বলেন না । একজন রাখঢাক না রেখেই
বলে দিয়েছেন ।
দুএকদিন আগে অন্যনিষাদ প্রসঙ্গে জনৈক প্রতিষ্ঠিত কবি বেশ খোলসা করেই কিছু কথা জানিয়েছেন । আমি তাঁর বক্তব্যটি হুবহু তুলে দিলাম । লিখেছেন – “সমীহ
করি
আপনাকে।
তাই, ঘটনাটি বলছি। আমার জন্মদাতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম একবার, যদি তার আগে আমার জন্ম হতো, তবে কে কার সন্তান হতো?
সে যাই হোক, একজন সম্পাদকের উচিৎ: কার কবিতা কার আগে পরিবেশন করা হচ্ছে; তা কি জন্ম সাল ও তারিখের ক্রমানুসারে? নাকি রচনার উৎকৃষ্টতা অনুসারে (রচনার উৎকৃষ্টতা কোন মানদণ্ডে কে নির্ধারণ করছে ? )
বাংলাদেশের অনেক শিশুকে দিয়ে এদেশের অনেক প্রপিতামহকে অপমান করেছেন আপনি; তবু বার বার লেখা দিয়ে গেছি । প্রশ্ন করিনি। ... নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবনে: নাতি-কবিতাকে নানা-কবিতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হলে, সম্পাদকের যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন কিনা...”
লেখক নিজেকে
বাংলাদেশের ‘কবিকুলের প্রপিতামহ’ বলে
দাবি করেছেন । আমার বিস্ময় – অন্য লেখদের সম্পর্কে এতো অসূয়া, এতো বিষ পুষে রেখেও কবিতা লেখা যায় !
অতয়েব থেমে
গেলাম, দুহাজার চোদ্দতেই । আর কাউকে অপমানিত হতে হবে না ‘অন্যনিষাদ’এর কাছ থেকে । বরং ভালোই হ’ল, নিজের
পড়া ও সামান্য কলমচর্চার
জন্য একটু সময় পেলাম । ‘অন্যনিষাদ’এর পাঠক
পাঠিকা ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে
অন্তরের প্রীতি ও কৃতজ্ঞতা জানাই
এতোদিন সঙ্গে থাকার জন্য ।