শেষ শীতে, শেষ পাতা ঝরা
ঐ যে অমন করে সাদা জামা কয়েকটা
মানুষ
সাথী একজন কাকে বয়ে নিয়ে
ধরেছে যে হাঁটা
কার যেন শৈশব কৈশোর সাদা খই উড়ে
উড়ে পিছুপিছু কিছুক্ষণ
একটানা হরিবোলে তখন
যে হচ্ছে প্রস্তুত চার কাঁধে
পাল্কীতে
রওনায় খুঁজে নিতে “মরণ রে শ্যামসমান”
এ গ্রহের প্রাণী সব এভাবেই জানায়
তারা বিদায়ের গান।
তাদের একটি জন বিবর্ণ হলুদ হলে
হেমন্তের শেষে।
এইখানে দূর উচ্চতায় এই চরাচরে এসে
দেখা যায় ঐ ধোঁয়া ওঠে এঁকেবেকে-
ছোট ছেলেটার হাত ধরে বিমূঢ় পুরুষ
একপাশে লোলচর্ম বৃদ্ধ, কার শোকে মর্মাহত, হাতে মুখ
ঢেকে!
শরীরই তো শেষ হোল শুধু, যে রয়েছে এইখানে বেশ
বাতাস, মাটিতে, জলে ভারহীন, ব্যাথাহীন হয়ে
সেই তাঁর শেষ নেই, নেই অবশেষ।
কে বা পাবে শাড়ি জামা পাটিহার, কঙ্কণ জোড়া
পিলু-বিলু খেল কি না দুধ, সন্ধ্যে দেওয়া হয়েছে কি আজ
নাঃ, আজ আর নেই কোনও কাজ।
ধুয়ে দিতে উপস্থিতি, ওরা এসে গেছে এইবারে
বুড়িগঙ্গাটির ধারে
নির্বোধ কান্নায় কেন যেন ভেঙ্গে
খান খান, ওরা তো না জানে
যেমন না মানে
মাটির ফাটল থেকে ঘুম ভেঙ্গে
কচিপাতা চারা
গোগ্রাসে টেনে টেনে জল হাওয়া আলো’র রসদ
তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে মনে মনে
ভেবেছে বিশদ
‘আরও তো অনেক ক’টা হোল
ডালপালা, এবারের ফুলের বাহার
নুইয়ে আসা স্তনবৃন্তে ফলের সম্ভার
আমার সংসার, এখানে সবই আমার
এই উত্তরের বড় ডালখানা, অসংখ্য পাতাও
এমনকি শ্যাওলা সবুজ ছায়াটাও’।
ইতিমধ্যে তাও
বৃদ্ধ সময়, পাশ দিয়ে হেঁটে যায় চলে
যতিচিহ্নে ঠিক তাঁর পৌঁছিয়ে যেতে
হবে বলে।
সেই শীতে শেষ পাতা ঝরে গেলে, গজায় না আর
ডালপালা, কোমর, শরীর, পা
সব কেটে নিয়ে চলে যায় জ্বালানির
প্রয়োজনে
কোনও এক অভাবী কুঠার
হাস্যকর হয়ে যায় প্রাক্তন সমস্ত
আদানপ্রদান
লাভ ক্ষতি সব অবসান
সে সময়ে গাছ আর সেই একটি একদা ‘মানুষ’
সঙ্গী মুক্তপ্রাণ।