এই সংখ্যায় ২৫টি কবিতা । লেখকসূচি ঃ তৈমুর খান, নাজনীন খলিল, ইন্দ্রনীল সুমন চক্রবর্তী, তুষ্টি ভট্টাচার্য, দেবাশিস মুখার্জী, প্রণব বসু রায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, ঈশিকা ভট্টাচার্য, বৈশাখী দাস, বিবেকানন্দ দাস, ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়, শীলা বিশ্বাস, কৌশিক গঙ্গোপাহ্যায়, শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়, নীলদীপ চক্রবর্তী, শুভশ্রী সাহা, রিয়া চক্রবর্তী, পাপড়ি গুহ নিয়োগী, কামরুন নাহার কুহেলী, সুমনা পাল ভট্টাচার্য ও বিনতা রায়চৌধুরী ।
তৈমুর খান / দুটি কবিতা
বাউল
এপারে ওপারে মুহুর্মুহ যুদ্ধের সংকেত আসে
ভোরের পাখিগুলি থাকবে কোথায় ?
বৃক্ষদের দম বন্ধ হতে চায়
নদীও কি রক্তে বয়ে যাবে ?
এই মাটির কাছে বসেছি আজ
হৃদয়ে বাউল কাঁদে
মানুষকে ডেকে ডেকে ফেরে
বাউল মানে না কাঁটাতার...
ঈশ্বর
ধর্মের ব্যাখ্যায় মানুষ উপেক্ষিত হবে কেন
?
কেন ধর্ম বড়ো হবে মানুষের চেয়ে ?
আমাদের বড্ড আলো কম
চারপাশে অন্ধকার চলাফেরা করে
তবুও ভাষার কাছে যাই
তবুও মানুষের কাছে যাই
আলো জ্বেলে মুখ দেখি
মানুষের মুখেই জেগে ওঠেন ঈশ্বর... নাজনীন খলিল
সুদূরের চিঠি
জমাটি আসর ছেড়ে সটান দাঁড়িয়ে বলো-'যাই'।
তোমার আর ফেরা হবে না। এভাবে যারা যায় তাদের ফেরা হয় না।
ঘাসের বুকে শিশিরকণায় ফোঁটা ফোঁটা জমা সব ভালবাসা
খর-রোদ হয়ে শুষে নিয়েও বললে যখন
'আমাকেতো তুমি কিছুই দাওনি'
সেদিনই আমি বুঝে নিলেম
ইন্দ্রনীলের অঙ্গুরীয়ে মন ভরেনি
শত চাঁদের ফসল তুলে যত্নে গোছানো শস্যভাঁড়ার তোমারতো নয়
একশ একটা গোলাপ কুঁড়িতেও কাটবেনা এই দৈন্যদশা।
স্রোতের ধারায় ভাসিয়ে দিলেম পাপড়িগুলো
সুরগুলো সব আকাশের নীলে ছড়িয়ে দিলেম।
আমাকেও আর কখনও খোঁজোনা
আমিওযে নেই
সাঁঝবাতি জ্বালা গৃহকোণে আর
ভবঘুরে মন আনন্দ খোঁজে এই শহরের অলিতে গলিতে
শহরের এই হাজার ভীড়ে নিজের ঘরটি অকারণে খোঁজা।
নীচে বয়ে চলে আগুনের নদী
অগ্নিময়ী-নির্ঝরিণী
বলাকা ডানায় ভেসে ভেসে যাই
সুদূর পাঠালো তার চিঠিখানি।
জমাটি আসর ছেড়ে সটান দাঁড়িয়ে বলো-'যাই'।
তোমার আর ফেরা হবে না। এভাবে যারা যায় তাদের ফেরা হয় না।
ঘাসের বুকে শিশিরকণায় ফোঁটা ফোঁটা জমা সব ভালবাসা
খর-রোদ হয়ে শুষে নিয়েও বললে যখন
'আমাকেতো তুমি কিছুই দাওনি'
সেদিনই আমি বুঝে নিলেম
ইন্দ্রনীলের অঙ্গুরীয়ে মন ভরেনি
শত চাঁদের ফসল তুলে যত্নে গোছানো শস্যভাঁড়ার তোমারতো নয়
একশ একটা গোলাপ কুঁড়িতেও কাটবেনা এই দৈন্যদশা।
স্রোতের ধারায় ভাসিয়ে দিলেম পাপড়িগুলো
সুরগুলো সব আকাশের নীলে ছড়িয়ে দিলেম।
আমাকেও আর কখনও খোঁজোনা
আমিওযে নেই
সাঁঝবাতি জ্বালা গৃহকোণে আর
ভবঘুরে মন আনন্দ খোঁজে এই শহরের অলিতে গলিতে
শহরের এই হাজার ভীড়ে নিজের ঘরটি অকারণে খোঁজা।
নীচে বয়ে চলে আগুনের নদী
অগ্নিময়ী-নির্ঝরিণী
বলাকা ডানায় ভেসে ভেসে যাই
সুদূর পাঠালো তার চিঠিখানি।
ইন্দ্রনীল সুমন চক্রবর্তী
যাযাবর
আমরা ছুঁয়ে আছি অমোঘ ঘুমরাত
সহসা বেঁচে নেওয়া সন্ধিক্ষণ
এভাবে হাত রেখে নতুন অভিঘাতে
জন্ম নিলে তুমি,
আরক্তিম!
স্বর্ণমৃগয়ায় নিত্য হাসিখেলা
তৃতীয়া চাঁদে লিখি কল্পগান
সপ্ত ঋষি গায় নিঝুম রাতসুর
শব্দহীনতায় আবহমান
ওই তো দূরপথ সহসা বেঁকে যায়
রয়েছে আকাশের আলিঙ্গন
পৌঁছে যাওয়া মানে মৃত্যু যদি হয়
আমার রাত্রিরা দীর্ঘ হোক
তুষ্টি ভট্টাচার্য
পর্দা
ছেলের গলায় ঝোলানো ওয়াটার বটলের পাইপ
এখন আমার গলায়
শ্বাস-প্রশ্বাস, জলীয় খাবার এই একটিই পথে
ফুসফস আর পাকস্থলীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।
নিঃশ্বাসের শোঁশোঁ শব্দে প্রতিবেশীরা ফিরে তাকায়
পেট ভরেছে কিনা সে খবর অবশ্য কেউ জানে না।
বুক আর পেটের মধ্যে যে পর্দাটা আজও ওঠানামা করে
তাকে দেখতে অনেকটা আমার ঘরের পর্দার মত মেরুন
জংলা পাতার প্রিন্টটাই শুধু নেই।
যা কিছু নেই, তাকেই কেন বারবার
মনে পড়ে!
যা আছে সেও তো কম কিছু না! দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
ইজমের বাইরে গড়ে
তোলা ইমেজেরা
বিকেলের
রাস্তার রক্ত ভোরের কামরায়
উঠে এলে
রঙ
ঘাঁটতে ভয় হয়
পাছে
ছবির খাতা টকটকে লাল
হয়ে ওঠে
অনেক
সাদা পৃষ্ঠার গায়ে
গল্প
লেখা পড়ে হয়তো বা
গানও
আবার
গান থেকে বারুদ গন্ধ
বকের
নিরীহ ডানাকে আহত করে
তোলে
ডোরাকাটারাও এতো
নখ দাঁতে সক্রিয় নয়
বিপ্লবের
থেকে সরে আসার পরও
তার নাম বিপ্লব
প্লাবনের
পর আপাতত থিতু
তরু
আর তরুণী সরে গেলে
একটা
মরুভূমি জায়গা করে নেয়
বাউল
এসবই একতারাভাষায় বলে
একটা
শিশুর রাজপথে
উটের
গ্রীবার প্রবেশ নিষিদ্ধ হলে
খোলা
খোলা জীবন জামা পরে
না
সমুদ্র
তুলে নেয়প্রণব বসুরায়
বিবস্ত্রা তোমার পাশে
বৃত্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে,
পরিধি বরাবর
একটা একটা করে কাঠের লগ বসাচ্ছো
নিজের হাতে,
নিরাপত্তার কারণে
-- এমনই
ভাবলো সবাই।
আশপাশে কেবলই সন্ত্রাস,
কলকাঠি নাড়াচ্ছে কেউ,আর মুহূর্তে
লাশের নামের পাশে নতুন নম্বর বসে
যায়...
ধর্মের বদলে ভয়ের ছায়া দীর্ঘ হতে
থাকে
পড়ন্ত বিকেলে যেমন
লগ দিয়ে চার পাশ বন্ধ করে দিলে
ওই ছায়া যাবে না সেখানে?
দরকারে প্রলয় নামে ছাদ ফুটো করে
বাঙ্কারের প্রতিরোধ তাসের দেওয়াল
শুধু,
ফুঁ দিলে তুলো হয়ে উড়ে যায়...
কত আর ঠেকাতে পারো তুমি?
সব দরজা নিজেই খুলে যাবে,
যাবেই--
তখন বিবস্ত্রা তোমার পাশে সখা
কৃষ্ণ কই?জয়দীপ চক্রবর্তী
যে
শব্দস্রোতেও নিরুত্তাপ
পথচলা তন্নতন্ন যে আলোর প্রযোজন-
সীমান্তের মৃত্তিকা জানে ভুল
শব্দের লগন।
যে জীবন সহজ,মোহিত অথচ আকাঙ্খা বিহীন!
ফাঁস ফাঁদ ছিঁড়ে জীবনেরই গান
প্রতিদিন...
ইচ্ছা উথলেই অনিচ্ছার থরথর ছায়া!
মাঝিও জানে বিরুদ্ধতার নৌকা বাওয়া।
যে শব্দ বাতাস ছুঁলেই ঝাঁক,ঝাঁক ভুল...
শপথ ভেঙেছো?জানে ইচ্ছামতির দুকুল!
সত্য মিথ্যার দাড়িপাল্লা ভর ও
ভার...
এর চেয়ে মল্লার,নির্জন যে ভীষন দরকার!
আসলে সব শব্দ নয়! কিছু কথার কথা।
সব কান্না,আঁধার সাঁতরে'ই ব্যথার
উপকথা!
যদিও যাকিছু অভিমান ধুইয়ে দিলাম
ভুল।
শুধুই তোর যেন নাহারায় সুখের
উপকূল!
ঈশিকা ভট্টাচার্য
এই ছেলে
এই ছেলে তুই পালিয়ে যাবি,
আমায় নিয়ে,ওই তেপান্তরের মাঠে।
সেখানে আর থাকবে না কেও।
থাকবো শুধু আমরা দুজন।
ঘর বাঁধবো নির্জনেতে।
ঝর্না ধারায় নাইতে যাব।
তোর জন্যে ভাত রাঁধবো।
খাবি যখন বাতাস দেবো।
এলো চুল এলিয়ে দিয়ে,
তোর বুকেতে মুখটি গুঁজে।
স্বর্গ খুঁজবো আমি তখন।
এই ছেলে তুই আমার হবি।
বাসবো তোকে কতোই ভালো।
ভুলিয়ে দেবো সব জ্বাতনা।
ভাসবি তখন আমার সুখে।
এই ছেলে তুই পালিয়ে যাবি,
আমায় নিয়ে সাগর পাড়ে।
সন্ধে বেলায় ঢেউ গুনবো।
তুই আর আমি দুইজনাতে।
ফসফরাসের আগুন যখন,
জ্বলে উঠবে ঢেউ এর বুকে।
আমি তখন তোর হব রে।
তুই হবি যে আমাতে লীন।
এই ছেলে তুই সোহাগ হবি।
তমাল তলায় মিলবো দুজন।
তোর সাথেতে খেলবো আমি,
লুকোচুরি বনবিতানে।
এই ছেলে তুই পালিয়ে যাবি,
আমায় নিয়ে।
ধরবি আমায় আলতো করে।
বলবি কানে,সোহাগ হবো।
তোকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।
ঐ দূর সাগরের পাড়ে।
নইলে যাব তেপান্তরের মাঠে।
স্বপ্ন না বাস্তব
তুমি সুন্দর তাই তোমার দিকে চেয়ে
থাকা।
দুচোখের পাতা পড়েনা,
মুগ্ধ হই আমি।
শয়নে,স্বপনে,জাগরনে
সবেতেই তুমি।
আবেশ,আবেগ,অনুরাগ সব একাকার।
হঠাৎ দুচোখের পাতা খুললাম।
দেখতে পেলাম কতো কতো চোখ তোমার
দিকে চেয়ে।
তাদের এই মুগ্ধতা কে তাড়িয়ে
তাড়িয়ে ভোগ করছ তুমি।
তাদের দিকে হাত বাড়াচ্ছো,
তারাও বাড়ায় হাত তোমার দিকে।
আমি আস্তে আস্তে পিছচ্ছি।
তোমার ঐ সুন্দর মুখ বদলে যাচ্ছে।
বিভৎস রূপ নিচ্ছে।
আমি শিউরে উঠছি,
তোমার ঐ রূপ দেখে।
দুহাতে চোখ বন্ধ করছি ভয়ে।
ভাবছি সুন্দর ও এতো বিভৎস হতে
পারে!
এটা কি আমার স্বপ্ন ছিল না
বাস্তব।
বৈশাখী দাস
ছবি
তোমার ছবি দেখলাম ম্যাগাজিনে।
পরিপাটি চুল,রোদ-চশমা,হোয়াইট শার্টএ
ক্লান্তি খুঁজলাম তন্নতন্ন....
মুঠোবন্দী উঁকিঝুঁকি অ্যান্ড্রয়েড,
কামড় বসানো আপেল
ফোর জি দ্রুততায় চেখে নিচ্ছে
স্বাদ,হয়তো...
ছবির মসৃন দৃষ্টিতে পাথুরে
রুক্ষতাও খুঁজেছি
রাতভর....
....রাতভর
টালির ছাদ আর
রং চটা বালিশের কভার ভিজেছে
অকারণ।
ওই ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা
স্নিগ্ধতাতে
ছিলো না তো জীবাশ্ম সৃষ্টির
ইতিহাস !
ঝকঝকে ব্ল্যাক শ্যু,সফল পদক্ষেপে
মানিয়েছিল বেশ......!
বসন্ত আভা পিছলে নামছিল
গাল থেকে চিবুকে,
চিবুক থেকে খোলা বোতামের বুকে.....
রে ব্যান উপচানো পিঙ্গল
আঁখিতারায়
কোথায় পচনের দীর্ঘশ্বাস?
জড়ো করা শুকনো ফুলের আড়ালে,
কোন নিয়মে কাঁপবে বলো আগুন শিখা?
শরীর উপচে তো বর্ষা রাত্রির
কামিনী,গন্ধরাজ !
শেষ চিঠিতে,তবে যে বলেছিলে,
তিলে তিলে ফুরিয়ে গিয়ে তুমি নাকি….
স্মৃতির শুকনো ফুলে যেন জ্বেলে
রাখি জন্মান্তর!
তবুও,তবুও,তবুও জানি,তবুও মানি …
ছবি কি সব কথা বলে নির্ভুল !
বিবেকানন্দ দাস
সারসের মন
একাকী
কোন এক সারসের মতোন
আমিও একদিন চিনে নেবো নদীটির মন
তার তীরে
যখন গোধূলি এসে ধীরে
দিগন্তের আঁচল রাঙাবে
অন্য বলাকারা সব ঘরে ফিরে যাবে
তুমি কি নদীর ছায়ার মতোন তখন
বুঝে নিতে আসবে - অক্লান্ত ঢেউয়ের আচরণ -
কোন দ্যোতনায়
উৎস হতে অচেনা মোহনায়
আমাদের মন যায় ধেয়ে
মানবিক সম্পর্ক আর প্রেমকে পেরিয়ে
সুদূরে, কারা আর কোনোদিন নীড়ে ফেরেনা
তন্ময় সারসের মতো গুটিয়ে ডানা
নীরব নিভৃত ধ্যনে যেনো থাকে বসে
এইসব অনন্ত নদী আর নিরালা ঢেউকে ভালোবেসে !
আমিও একদিন চিনে নেবো নদীটির মন
তার তীরে
যখন গোধূলি এসে ধীরে
দিগন্তের আঁচল রাঙাবে
অন্য বলাকারা সব ঘরে ফিরে যাবে
তুমি কি নদীর ছায়ার মতোন তখন
বুঝে নিতে আসবে - অক্লান্ত ঢেউয়ের আচরণ -
কোন দ্যোতনায়
উৎস হতে অচেনা মোহনায়
আমাদের মন যায় ধেয়ে
মানবিক সম্পর্ক আর প্রেমকে পেরিয়ে
সুদূরে, কারা আর কোনোদিন নীড়ে ফেরেনা
তন্ময় সারসের মতো গুটিয়ে ডানা
নীরব নিভৃত ধ্যনে যেনো থাকে বসে
এইসব অনন্ত নদী আর নিরালা ঢেউকে ভালোবেসে !
আর
একদিন, বহুদিন বাদে
তুমিও চিনে নেবে বহু দ্বন্দে - বহু অবসাদে
একাকী বহতা নিঃসঙ্গ নদীর মতোন
শ্বেতশুভ্র কোনো এক সারসের মন,
নেবে না কি !
তুমিও চিনে নেবে বহু দ্বন্দে - বহু অবসাদে
একাকী বহতা নিঃসঙ্গ নদীর মতোন
শ্বেতশুভ্র কোনো এক সারসের মন,
নেবে না কি !
নদীর
স্রোতের নেশা, তার
দেহের আঘ্রাণ বড় তীব্র
ভয়ংকর......!!
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)