শুরু
থেকে, খুবশুরু থেকেই রয়েছে পাশে।
লেখালেখি যখন সবেমাত্র ভোর-ভোর, তা দিয়েছে আমাকে যে প্রথম, তার নাম অন্যনিষাদ। শ্রী ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
সম্পাদিত এই ওয়েব-পত্রিকাটি আমার অন্তরকোঠায় আসন
পেতে আছে সেই কবে থেকে ... আজ তার আটে পা। ভাবা যায়?
কবিতাময়
এই পত্রিকাটি যেন একটি সেতুমুখর নদী। হাজার রঙের জল, লাখো রঙের নৌকোভ্রমণের ছড়াছবি। একার হাতে গড়া সমগ্র
কবিকুলের অবস্থান, গ্রহরত্ন এবং দিব্যদৃষ্টিতে
সৃষ্টি করেই চলেছে সাহিত্যের অনুরণন। তার নক্ষত্রের কারিগরি, মহৎঋষির ছায়াপথটি ঋদ্ধ করে চলেছে বাংলাসাহিত্যের
বায়োডাটা।
গভীর
বার্তার আহিরবোল। মনোরম খড়খড়ি। জানালাটি খুলি যখন, দেখি সূর্যের ছাট। এগিয়ে দিয়েছে বরাভয়ের হাত। উঠোন ভরা
কবিশিল্পের আকুতি। স্বাদগন্ধ আর ভ্রমণের স্মৃতি। বুঝতে পারি, অন্যনিষাদ আসলে এক অপার বসুন্ধরা। কিশোর পৃথিবীর ছন্দে
মাতোয়ারা ফুলসৃজন আর মধুনিনাদ গঠনের আন্তরিক বারান্দা।
শারদীয়
সকালে অন্যনিষাদ খুলে দেখেছি অজস্র কাশফুলের দরবারি কেশরনক্সা, স্নিগ্ধরাতে অন্যনিষাদ মেলে দেখেছি তুমুল বকুলঅলির
একপশ্লা ষড়কোণ। শীতরোদে অন্যনিষাদ গায়ে গড়িয়েছে বারোদুয়ারের তেরো লণ্ঠন।
ভিজেবর্ষায়, গোপন রোমন্থনের চাবি। ফুলেল
যমুনা, কৃষ্ণবাঁশীর তানপুরা। গোকুল
সমীপে আবার এই অন্যনিষাদই প্রেমজধূলার মনোরম রাজকুমারী।
বহু
যত্নে জমানো বিভিন্ন লহমা।সম্পাদক এখানে মুহূর্ত দিয়েই গাঁথা করেন কল্লোলিত
মন্দিরের সোপানতলা। আমরা যারা কবিতা লিখি, তাদের কাছে অন্যনিষাদ আসলে এক সিন্দুক বোঝাই আনন্দের আলমারি।
প্রতিটি তাকে হীরে জহরত মাণিক্য মণিময় মন্ত্র-চামর। কবিতা তো মন্ত্রের মতোই সতত সুন্দর। স্কেচ-সোনালী, রুপোলী রঙবাহার, তাই অন্যনিষাদ আমাদের কাছে আশার কাঞ্জিভরম, স্বপ্নের বালুচরি।
ছন্দ-না-ছন্দের বেলোয়ারি
উপাড়া-সিল্ক। যখনি লিখেছি কবিতা, অন্যনিষাদ বাড়িয়ে দিয়েছে কলমের শাখা-প্রশাখা। সব মনে পড়ছে
এই মুহূর্তে। প্রথম আলাপ, দ্যাখা প্রথম।
অন্যনিষাদের পাতায় নিজের অক্ষর-মাধুরীর মৌচাক
জড়ানো কাতর-পৃষ্ঠা, ঝিনুকইচ্ছের পাতালরেল।
স্বপ্ন? স্বপ্নের চাইতেও সত্যি কিছু? ভ্রম? নাকি ভ্রমজাতক? অকালবোধনের বারিবর্ষণ? স্নেহপল অনুপল আকাশ হেমান্ত আর সকল শুভইচ্ছের আলাদিন... এতটুকু কালি নেই কোথাও, নেই অন্ধকারের মণিকর্ণিকা ...
অন্যনিষাদ
কি কবিদের অবয়ব? কবিতার ক্লোরোফিল? কবিজীবনের রান্নাঘর? নাকি ফসফরাস জড়ানো ব্রহ্মাণ্ডের হাতেখড়ি?
কি
বলে ডাকি তাকে? জন্মদিনে কি বা উপহার দিই? ড্রয়িং ভিজিয়ে দেওয়া চোখের প্যাস্টেল? নাকি প্রতিটি তুলি? লেখা-না-লেখার অজস্র রঙিন ভালবাসার বেদান্ত-উপাসক? অথবা শ্রাবণময়
বরুখনের অরণ্য? সম্ভবত, প্রনম্য এক স্বর্ণচাঁপার নোলকদুলানো বনফুল ... আহ্লাদে ডগমগো অলকানন্দা...
যে
পরিমান অন্তরঙ্গ হয়ে আছে প্রিয় অন্যনিষাদ, সাথে আছে অনন্ত পাখিবেলার শীষ, তাকে মাপা যায় না, তাকে যোগ / বিয়োগ করা যায় না।
গুণভাগ তো অনেক দুরের কথা। মায়াবী পতঙ্গটি যেমন মায়ামগ্ন ধান্যআঙুরের কোয়াগুলি
ছড়িয়ে রাখে কবিতার পৃথিবীতে, তার সব সবটুকুই যেন
অমর-অমরাবতীর চক্ষুদান। শরতশশীর
গেরুয়া-পূর্ণিমা। ঈশ্বরের পলিমাটি দিয়ে
তৈরি। পালক উড়ে যায়, পালক উরে উড়ে আসে। আলো ফোটার
আগে। আলোর উৎসব শুরুর পরে, অন্যনিষাদ আমাদের
চোখে চোখ পেতে জাগে।
প্রিয়
অন্যনিষাদ,
তোমার
প্রতিটি লম্বাশ্বাস হোক ধরিত্রী সঞ্জাত মৃগশিরার শুভ জন্মদিন
তোমার
প্রতিবার লেখাচিঠি ধ্রুবতারার সন্ধিক্ষণ, আমাদের ঘরোয়া মোমবাতি
তোমার
মেঘবৃষ্টির আসবাব তোমার মায়াময় কুসুমকোমল পরমান্নের জ্যোতি
অগাধ
চালচিত্রে কবিতা আঁকতে আঁকতে আমরা তোমার বড় হওয়াটি দেখি ...