
৯ম বর্ষ ৫ম সংখ্যা ১লা জানুয়ারি ২০২০

সম্পাদকীয় : স্বাগত দু হাজার কুড়ি
তবু স্বাগত ২০২০ । অন্যনিষাদ প্রকাশিত হল এক মাসেরও বেশি ব্যবধানে
। আসলে, আমরা সকলেই একটা অস্থির এবং ভয়ঙ্কর সময়ের মুখোমুখী হয়েছি বিগত বছরের উপান্তে
পৌছে । এই অস্থির সময়ে কোন সৃজনশীল কাজই মনপ্রাণ দিয়ে করা যাচ্ছে না । করা যায় না ।
আমি সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইনের কথা বলছি, এবং তাকে কেন্দ্র করে
আমাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অশুভ শক্তির দাপাদাপি আমাদের বিমূঢ করেছে । এবং এটাও সত্য
যে, পাশব শক্তির আর দমনের যতই আষ্ফালন হোক না কেন মানুষ প্রশ্নহীনভাবে সবকিছু মেনে
নিচ্ছেনা, পিছিয়ে যাচ্ছে না অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধের মেজাজ থেকে । বিগত বছরের অন্তিম
পর্বে এটাই পাওয়া, এবং এই ভাবনা নতুন বছরে আরো তীব্র হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস । আমাদের
পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ হোক, শুভ হোক দুহাজার কুড়ির কাছে এটুকুই চাওয়া ।
অন্যনিষাদের সমস্ত শুভানুধ্যায়ীকে
জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও প্রীতি অভিবাদন ।
সুবীর সরকার
প্রলাপ
প্লিজ,আমাকে একটা ডাকনাম
দিন
নইলে হাটে হাড়ি ভেঙে
দেব
জমিয়ে দেব খিস্তিখেউরের
উৎসব
আমাদের কোন স্বজন নেই
শিখে নিচ্ছি জলের স্বেচ্ছাচার
বেড়ালের গায়ে বিকেলের
রোদ
টিকটিকি ছুঁড়ে দিচ্ছি।
মরা মাছ ছুঁড়ে দিচ্ছি।
কুয়োর নিচে সাজিয়ে রাখা
বালতির মত
এই জীবন
মৃত্যুর আহ্লাদ মাখি।
অন্ধ সজারুকে শোনাতে
থাকি প্রলাপের মত
কিছু একটা।
জয়ন্ত বাগচী
পিচ পথে তোমার ছায়া
গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে
সামনে রাস্তায় সারি সারি
মুখ
সেখানে কোন উজ্জ্বলতা
নেই
অন্ধকার জমে আছে চোখের
কোলে ।
একথা সবাই জানে তোমাকে
রোজগার করতে হয়
পায়ের সস্তার চটিটা দিনে
দিনে ক্ষয়ে যায়
তুমি কিন্তু একটু একটু
লাবণ্য হারাচ্ছ
একথা বুঝি কেউ তোমাকে
বলেনা ?
তোমাকে দেখেছিলাম গ্রামের
আলপথে
সেখানে কত স্বাচ্ছন্দ্য
মেখেছিলে
আজ শহরের ইঁট কাঠ পাথরের বুকে
তুমি এক মৃত বৃক্ষ মাত্র
বিদ্যুৎলেখা ঘোষ
তোমাকে
হে অর্ধেক আকাশ
নিও শুভেচ্ছা
নিও অনন্ত স্বপ্নপত্র
দিও আশ্বাস দু'চাকার
গতিসাম্যের ভাগ নেবে
আমি থেকে আমরা
পরস্পরের উড়ন্ত পাখি
শিকার করে মাটিতে ফেলবো
না
মেতে উঠবো না বিকট উল্লাসে
খণ্ড হও বিনির্মাণে সহায়ক
পিতা ভ্রাতা সখা জীবনসাথী
পুত্র
যা ইচ্ছে তা হও , কেবল
হারিয়ে ফেলো না চোখ
একান্ত তোমার গন্ধ
হারিয়ে ফেলো না
দেয়ালা কখনো কখনো বৃদ্ধ
মুখেও
তাকে হারিয়ে ফেলো না
হারিয়ে ফেলো না একান্ত
স্পন্দন
কান পেতে শোনে যে
তাকে হারিয়ে ফেলো না
।।
এলিজা খাতুন / দুটি কবিতা
অনশন
সামনের সারিতে
যারা গুরুগম্ভীর হাঁটে
ব্যানার হাতে
টিয়ার গ্যাসের স্পর্শ
তারা পায় না
অন্ধকারের কতিপয় মুখ
বঞ্চনার তত্ত্বে বোনা
কম্বল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
পথে পথে খোঁজে-
রোদ্রে শুকানো রক্ত
কিংবা কুয়াশা ভেজা কাদামাটি-দেহ
বাতিল হয়ে পড়ে থাকা
পুরোনো উনুনের পেটের
মতো
যাদের পাকস্থলি;
পোড়া মাটির মতো তামাটে
শরীর যাদের
তারা বসে থাকে অনশন কর্মসূচীর
মাদুরে
বসে থাকে পরস্পর জোড়া
লাগা একই পাটিতে
বসে থাকে গায়ে গায়ে
মাটির চুলোর তিনটি মাথা
যেমন থাকে
একই ভিত-এ
একই আগুনজ্বলা উদর ঘিরে
এইভাবে একে একে জড় হওয়া
আরোও আরোও তোমরা কোথায়
!
শান্ত শিলা
তখনও অজানা ছিল ডায়েরির
পাতা ছেঁড়া খেলা
কবে কবে মধুঝরা স্বরচর্চা-
সরে গেছে পাথরের পাঠ্যসূচি
থেকে ;
এখন একলা দু'হাত লিখে
চলে বোবালিপি
তৃষ্ণার্ত চোখ সঞ্চয়
করে না-ঝরানো অশ্রু
অভিজ্ঞ কিষাণের বীজধান
তুলে রাখা যেমন
একদা চেনা ছিল যে পাখির
নাম, আজ সে পলাতক
বৃক্ষ শাখা জ্বলে গেছে
সভ্যতার পেট্রোলে
একদিন যার সুরে গতি ছিলো,
শ্রুতি ছিলো
বাগানে যার ফুলে আলো
এসে হাসি হতো
আঙিনার সমূহ শিশির দ্যুতিময়
হীরা হয়ে যেতো
আজ তার দুচোখে সূর্যাস্ত-আলো-আধাঁর
এমনকি বিকেলের দরজায়
অনায়াসে ঢোকে রাত
কিছুদিন তবুও স্বপ্নের থালা ছিল সম্মুখে
বেলিকুঁড়ি ভাতের উপর
অবিকল রোদ্রের রং,
সম্ভাবনার প্রজাপতি,
সুমধুর বৃষ্টি, বজ্রঝলক
আজ তার দিনগুলো দরিদ্র-মেধাময়-অতীত
আজ সে জেনে গেছে
পৃথিবীতে যত আছে মারাত্মক
ধাপ-
একে একে সব এসে জমা হবে
ফাটা পদতলে
আজ সে পরিণত শিলা ; রুটির
পরিণত দশায়
যেমন থেকে যায় বৃত্ত
বৃত্ত পোড়া দাগ
অতঃপর নিরেট শক্ত শিলা
বুঝে যায়
ভাঙনের চেয়ে, তবু ভালো
ক্ষয়
প্রবাহে তরঙ্গ আনে জল-অতলের
শান্ত শিলা !
আফরোজা অদিতি
বোধিবৃক্ষের চারা
পদ্য শোনা হয়নি অনেকদিন।
পদ্য নারী; কুহেলিকা।
পদ্যবঁধুয়ার বক্ষপঞ্জর বহ্নিসংস্কারে
ভেতরটা বের হচ্ছে প্রতিদিন
কেউ জানছে না, কেউ না।
রোদসীর তরুণবাটির জল
জমে বরফ; বরফ উজাড়
হয় না কখনো!
কেবল কাটাকুটি খেলা আর
একা থাকা।
একা। নিঃসঙ্গ। বিবিক্ত।
প্রহরের পর প্রহর
জীবনতৃষ্ণায় ভাসে নুনজলে
কেউ বুঝছে না, কেউ না।
বোধিবৃক্ষের তরুণচারা
বেড়ে উঠছে তার আপনখেয়ালে...
পদ্য শোনা হয়নি অনেকদিন।
পদ্য নারী; কুহেলিকা।
পদ্যবঁধুয়ার বক্ষপঞ্জর বহ্নিসংস্কারে
ভেতরটা বের হচ্ছে প্রতিদিন
কেউ জানছে না, কেউ না।
রোদসীর তরুণবাটির জল
জমে বরফ; বরফ উজাড়
হয় না কখনো!
কেবল কাটাকুটি খেলা আর
একা থাকা।
একা। নিঃসঙ্গ। বিবিক্ত।
প্রহরের পর প্রহর
জীবনতৃষ্ণায় ভাসে নুনজলে
কেউ বুঝছে না, কেউ না।
বোধিবৃক্ষের তরুণচারা
বেড়ে উঠছে তার আপনখেয়ালে...
জপমালা ঘোষ রায়
টাটা নিহার স্নানগন্ধ
ভাবছিলাম প্রশান্তির
কথা,
যতটুকু বরাদ্দ তার বেশী
নয়,
মাত্রা... রেখা... আঁকিবুঁকি করতে করতে
তাঁর লেখালিখি, সেলাইফোড়াই,
বড়ি আচার....
অক্ষরের পর ও পরত দুকূল ছাপিয়ে.....
এই ছাপিয়ে যাওয়াগুলো
কোনোদিন ছাপানো যায়নি
হার্ড কপিতে।
ভাবছিলাম স্থিতির কথা।
প্রবীণ প্রস্তাবকার বলেছিলেন
থামতে না জানলে বাজনা
হয়না।
আমারও মনে হল
সুর না থামলে মূর্ছনা
ধরা যায় না।
থামলাম স্নানঘরের কাছে।
যতক্ষণ জল পড়ে
তার চারপাশে একটা শীতল
বলয় হয়।
এই টুকুই এখন বরাদ্দ
শীতলতা।
এই পতনশীল জলকে বারিধারা বলা যাচ্ছে না
এই কান্নার ইকুয়েশনে
H2O লেখা যাচ্ছে না।
থেমে থেমে চলতে চলতে
পাজল কুড়িয়ে ড্রাফটে
তোলা,
মায়ের টাটা নিহার স্নানগন্ধ.....
অনেক আগে থেকেই কীভাবে
যেন
সেভ হয়ে আছে মেইল বডিতে,
জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়
আশ্চর্য বিপর্যয়ে
আশ্চর্য বিপর্যয়ে লিখে
যাচ্ছি তোমাকে
অথচ, আমার কোনও হাতেকলমে
শোক নেই
আমার রেখায় নেই কোনও
খুঁজে না পাওয়া বাঁক
তবু লিখছি, দীর্ঘহীন
নির্মাণে
তুমি লিখছি
রিক্ততার চেয়ে নিঃস্ব
হতেই বেশি পছন্দ করি বলে
নাসির ওয়াদেন / দুটি কবিতা
ছায়ামূর্তি
ছায়ামূর্তিরা কুটিল আঁধারে নেমে আসে
সরলবর্গীয় মাঠ,অনুর্বর সনাতনী বাস্তুতে
অন্ধকারে ছমছম করে ওঠে শরীর
পলেস্তারা খসা উঠোন, ভোরগুলোতে
নাচানাচি করে, লাফালাফি থেকে মারামারি
আবার, অন্ধকারেই মিশে যায় অশরীরী
সন্ধ্যারতি জ্বেলে দিই পঞ্চ প্রদীপ নিয়ে
তুলসীতলায় ফোটে কাঁদুনি আলোর ঝালর
মূর্তিগুলো আনাচে কানাচে ঘোরে
একরত্তি মোম জ্বেলে নিই মনের জানালায়
মুখ দেখতে চাইলেই কি মুখ দেখা যায় ?
আলোর সমান্তরাল পথরেখা ধরে
ছায়ামূর্তি মিশে যায় ভবিষ্যত গহ্বরে
আত্মবোধ
সুখ-দুঃখ কাঁধে নিয়ে বেড়াই সারাদিন
দুধের শিশুর মুখে দু'চামচ তরল ফেন
সরল-জটিল পথ ধরে হাঁটে ঋণ,
ভালবাসা-প্রেম,ঘৃণা,লিপ্সার বাজে সাইরেন
এক সময় টিনের কৌটোর ভেতর শুয়ে থাকা
আত্মবোধকে আঘাতে নির্ঘাত জাগায় স্নেহ
দু'পাশের মেঘ আর নির্লোভ আলোকবিন্দু
মিলেজুলে একটা বিভস্য সত্যকে খুঁজেই
যাচ্ছি কেন ?
ছায়ামূর্তিরা কুটিল আঁধারে নেমে আসে
সরলবর্গীয় মাঠ,অনুর্বর সনাতনী বাস্তুতে
অন্ধকারে ছমছম করে ওঠে শরীর
পলেস্তারা খসা উঠোন, ভোরগুলোতে
নাচানাচি করে, লাফালাফি থেকে মারামারি
আবার, অন্ধকারেই মিশে যায় অশরীরী
সন্ধ্যারতি জ্বেলে দিই পঞ্চ প্রদীপ নিয়ে
তুলসীতলায় ফোটে কাঁদুনি আলোর ঝালর
মূর্তিগুলো আনাচে কানাচে ঘোরে
একরত্তি মোম জ্বেলে নিই মনের জানালায়
মুখ দেখতে চাইলেই কি মুখ দেখা যায় ?
আলোর সমান্তরাল পথরেখা ধরে
ছায়ামূর্তি মিশে যায় ভবিষ্যত গহ্বরে
আত্মবোধ
সুখ-দুঃখ কাঁধে নিয়ে বেড়াই সারাদিন
দুধের শিশুর মুখে দু'চামচ তরল ফেন
সরল-জটিল পথ ধরে হাঁটে ঋণ,
ভালবাসা-প্রেম,ঘৃণা,লিপ্সার বাজে সাইরেন
এক সময় টিনের কৌটোর ভেতর শুয়ে থাকা
আত্মবোধকে আঘাতে নির্ঘাত জাগায় স্নেহ
দু'পাশের মেঘ আর নির্লোভ আলোকবিন্দু
মিলেজুলে একটা বিভস্য সত্যকে খুঁজেই
যাচ্ছি কেন ?
সায়ন্তনী হোড়
স্বরলিপি
সা
প্রস্তুতির আগেই বেজে ওঠে সানাইয়ের সুর,
তাই রোদের গায়ে দুঃখ রোপণ করতে করতে
আজও সেই সুর শুনি
রে
নীরবতার সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে
গা
ঘর্মাক্ত শব্দরা লিরিক ছুঁয়ে ফেলে ,
ছাদের পাঁচিল বেয়ে নেমে আসে
বেওয়ারিশ সুরের গান । আজকাল সেখানেও
গাণিতিক ছন্দের বড্ড অভাব
পা
রক্তের ছোপ ছোপ দাগের ভেতর চোখের মণি চুপচাপ বসে থাকে ।
সা
প্রস্তুতির আগেই বেজে ওঠে সানাইয়ের সুর,
তাই রোদের গায়ে দুঃখ রোপণ করতে করতে
আজও সেই সুর শুনি
রে
নীরবতার সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে
আর একটু উপরে উঠে আসে
গম্ভীর আকাশ । তারপর রামধনু মুছে গেলে
পাখি আরো গভীরে ডুব দেয়
গা
ঘর্মাক্ত শব্দরা লিরিক ছুঁয়ে ফেলে ,
শেষে লয় কেটে গেলে আবার
সেই সাংসারের আঁশটে গন্ধ পাওয়া যায়
মা
মা
ছাদের পাঁচিল বেয়ে নেমে আসে
বেওয়ারিশ সুরের গান । আজকাল সেখানেও
গাণিতিক ছন্দের বড্ড অভাব
পা
রক্তের ছোপ ছোপ দাগের ভেতর চোখের মণি চুপচাপ বসে থাকে ।
ধীরে ধীরে ভোরের গান শেষ হয়ে
আসে ,
তখন মস্তিষ্কের ভেতর গীতবিতান পাঠ করে নিই ।।
মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী
অন্তর্মুখী ঝড়
তবুও,তোমার স্পর্শের
সবকটি কবিতা পংক্তি
আজও ঠিক তেমনি রয়েছে
যেমনটি ছিল আগে
এই দ্যাখো,জোনাকি আলোসুখ
হয়ে - - -
তেমনি সাজিয়ে রেখেছি
--
সবুজ মুহূর্ত,মেঘ -রোদ্দুর,গোধূলি-
আভা
স্বর্ণ - সন্ধ্যার প্রগাঢ়
স্নিগ্ধতা,সবই
বিনা ঝড়ে সাঁকো ভেঙে
গেছে বুঝে
আমার দুখিনী মার বুকে
বিচলিত ঢেউ,
বিধবা মায়ের আমি যে একমাত্র
সম্বল ।
তার অনুসন্ধানী চোখে
–
কেবল আমার বিষণ্ণ শিমুল
পলাশ
কাঙাল চাহনিতে আহত পশুর
যন্ত্রণা ।
যেখানে ফিকে বোঝাপড়া
সেখানে স্বপ্ন ছাড়া সবকিছুই
পূর্ণচ্ছেদ,জানি ।
একদিন ছিল ভালোবাসার
মোহন আঙুলে
অজর প্রেমের কারুকাজ-
- -
তুমি বলো,ছিল না কি
? কোনকিছুই কোনদিন?
চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় / দুটি কবিতা
একা এবং একলা
সমুদ্রের পাশে বসে দেখি, ঢেউ আসে ঢেউ যায় নিয়মের
তারে,
কারো কারো অদ্ভুত মন,
ততবার জিতে যায়, যতবার হারে।
অন্ধকারে ধ্রুবতারা,
অনুজ্জ্বল, একা, তবু সেই শুধু পথ;
বাকি সব গড়ে তোলা, একটু
সত্য, একটু মিথ্যা, মায়ার বসত।
খাঁচায় ময়না পুষে, বাস
করি, দাঁড়ি টানা খাতা জুড়ে হিসেবের মাস,
তোমার আমার করে, সীমান্তে
কাঁটাতার, অনন্ত একলা আকাশ।
একলা মানুষ সব, ভয় পেয়ে,
হাতে হাতে বোনে অন্ধকার;
অনন্ত শয্যায় শুয়ে, যোগনিদ্রা,
আত্মনাং এ বিশ্ব সংসার।
মোক্ষ
হেমন্তের কাটা ধান, মাঝরাতে
উড়ে আসে কুয়াশায় পরী;
আমার দুচোখে পাপ, পারি
যদি কোজাগরী চাঁদ চুরি করি।
সমুদ্রের নোনা জল, ভেসে
যায় সম্পান, বিবর্ণ মলিন;
তোমার আঙ্গুল জুড়ে, আহ্বান
- বিতৃষ্ণা, রাত আর দিন।
সমুদ্রের তট ধরে, পায়ে
পায়ে এগিয়েছি, ফেলে রেখে ছাপ--
ঢেউ এসে একদিন, সব দাগ
গিলে নেবে, বাস্তুর
সাপ।
নাহয় বাউল হব, এলোমেলো
বাঁকা ছবি, ভিক্ষার রথে,
কবর খুঁড়েছে কারা, চোরাবালি,
ডুবে যাব, মিথ্যা শপথে।
তবু যদি ভুল করে মুহূর্তরা,
একবার চোখে পড়ে চোখ;
জেনো এই পৃথিবীতে, একমাত্র
আমি, আমি, আমি বীতশোক।
সতীনাথ মাইতি
সৎকার
সে এক নতুন যুবক।
শ্মশানচুল্লি তৈরির হেডমিস্ত্রি, মানুষ মারা গেলে তারপর।
আর শববাহকের দল জানে তাদের কাজের পরিধি।
শবদেহ যাবে পেছন পেছন,
শ্মশানচুল্লি তৈরির হেডমিস্ত্রি, মানুষ মারা গেলে তারপর।
আর শববাহকের দল জানে তাদের কাজের পরিধি।
শবদেহ যাবে পেছন পেছন,
সামনে ছড়ানো হবে খই আর
টাকা, প্রথা এমনই।
সরা ভরতি জল, কিছু আগুনের আয়োজন।
সেই কাঠ আসবে নিম জাতীয় কোনো এক বৃক্ষ থেকে
যার শিকড়ে একটু একটু জল ঢেলে বড় অথবা পোড়াতে পারে
সরা ভরতি জল, কিছু আগুনের আয়োজন।
সেই কাঠ আসবে নিম জাতীয় কোনো এক বৃক্ষ থেকে
যার শিকড়ে একটু একটু জল ঢেলে বড় অথবা পোড়াতে পারে
এমন সুদক্ষ বৃক্ষ অজান্তেই সাজিয়েছিল
মানুষরা
প্রথাগত হাওয়া, সোনার তবক মোড়া রোদ আর কিছু শুকনো ঝরে যাওয়া পাতা।
ফালি ফালি কাঠ না-কাটলে কীভাবে মৃতদেহ কাঠের চিতার মাঝখানে বসবে?
হরিবোল হরিবোল হরিবোল ধ্বনি,
প্রথাগত হাওয়া, সোনার তবক মোড়া রোদ আর কিছু শুকনো ঝরে যাওয়া পাতা।
ফালি ফালি কাঠ না-কাটলে কীভাবে মৃতদেহ কাঠের চিতার মাঝখানে বসবে?
হরিবোল হরিবোল হরিবোল ধ্বনি,
থেকে থেকে আঁতকে দিচ্ছে জীবিত মানুষের হৃৎপিণ্ড
মড়া পোড়ানো আগুন থেকে জ্বালানো মশাল নিয়ে দৌড়ে গেল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
আলো আর আলোতে দেখে নিল এই বিশ্ব সংসার।
পড়ে থাকা টাকা কুড়নোর লোকের অভাব নেই
সেই টাকা দিয়ে নেশাখোর লোকটা রাস্তায় চিৎকার করতে করতে
মড়া পোড়ানো আগুন থেকে জ্বালানো মশাল নিয়ে দৌড়ে গেল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
আলো আর আলোতে দেখে নিল এই বিশ্ব সংসার।
পড়ে থাকা টাকা কুড়নোর লোকের অভাব নেই
সেই টাকা দিয়ে নেশাখোর লোকটা রাস্তায় চিৎকার করতে করতে
বলে যাচ্ছে ওই অন্য লোকটা ভালো
ছিল।
ওগো আগুন, তুমি সেই ধার দিতে পার
মাটিলেপা কাহিনির সূত্রগুলি
আর ধপধপে কাপড়ের চাঁদোয়া।
নতুন শ্মশান তো তৈরি হল, তার ইচ্ছা এমনই ছিল শোনা যায়
এবার এখানে স্মৃতির মন্দির তৈরি হবে
লাগানো হবে হলুদ-সাদা ফুলগাছ
অনেকদিন পর শোক ভুলে যাওয়া সন্তান তার ভাববে
আচ্ছা বাবা কী ওই সুন্দর বাগানে বসে বসে এখন পান ভানছে?
মশাল নিয়ে দৌড়ে গেল সে, গিয়ে দেখল
একটি সাদা লম্বা চাদর আকাশ থেকে নেমে
ওগো আগুন, তুমি সেই ধার দিতে পার
মাটিলেপা কাহিনির সূত্রগুলি
আর ধপধপে কাপড়ের চাঁদোয়া।
নতুন শ্মশান তো তৈরি হল, তার ইচ্ছা এমনই ছিল শোনা যায়
এবার এখানে স্মৃতির মন্দির তৈরি হবে
লাগানো হবে হলুদ-সাদা ফুলগাছ
অনেকদিন পর শোক ভুলে যাওয়া সন্তান তার ভাববে
আচ্ছা বাবা কী ওই সুন্দর বাগানে বসে বসে এখন পান ভানছে?
মশাল নিয়ে দৌড়ে গেল সে, গিয়ে দেখল
একটি সাদা লম্বা চাদর আকাশ থেকে নেমে
উত্তর-দক্ষিণে হেলে হেলে পড়ছে,যদিও এর কিছুটা
তার দৃষ্টিভ্রম!
শুভাশিস দাশ
যাপন এবং রাজা মশাই
দুঃখ গুলো মোড়ক মোড়া
সুখ গুলো সব বাইরে
জীবন যাপন এসব নিয়েই
নৃত্য করি তাইরে !
রাজা মশাই দেখেন সবই
বিলকুল তাঁর জানা
প্রজারা সব লজ্জা ঢাকে
পরনে ছেঁড়া ত্যানা !
রাজ সভাতে সুখ যে ভরা
দুঃখ থাকে বাইরে
দেশের ভিতর মানুষ আছে
খেয়াল রাজার নাইরে
!
বোতাম এবং আঙুল নিয়ে
নানান খেলার ছক
কষেন তাঁরা ঠান্ডা ঘরে
করিস নে বকবক !
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
শীত
গলা বাড়িয়ে কুয়াশা ঘেঁষে
বসে আছে
একচালা শীতের চৌকাঠশূন্য তোষোক
একচালা শীতের চৌকাঠশূন্য তোষোক
উষ্ণী দুধের সর
পুরোনো একাদশী পার হয়
নিরামিষ উনুনের আলোয়
পুরোনো একাদশী পার হয়
নিরামিষ উনুনের আলোয়
মাঠে রোদ নেই
উপরন্তু সংযমের মাত্রাহীন বাতাস
কামড় শব্দ তুলে বাৎসল্য শষ্যদানায়
অগ্রহায়ণে ওঠে পবিত্র আলপথের হলুদ পা
বৃন্তে স্বচ্ছ তণ্ডল ব্যথা
গর্ভবস্ত্র খোঁজে নিরাকার রোদের নাভি ।
উপরন্তু সংযমের মাত্রাহীন বাতাস
কামড় শব্দ তুলে বাৎসল্য শষ্যদানায়
অগ্রহায়ণে ওঠে পবিত্র আলপথের হলুদ পা
বৃন্তে স্বচ্ছ তণ্ডল ব্যথা
গর্ভবস্ত্র খোঁজে নিরাকার রোদের নাভি ।
রাখী সরদার
শোন মন্দাক্রান্তা
শোন মন্দাক্রান্তা
মন্দিরা বাজাতে শিখিনিতো কোনদিন
হরিণা বাঁশিটিও না।
এই হাত ছুঁয়ে দেখো
নহবত হৃকম্পনে
হয়ে গেছে ঝুর ঝুরে বালি।
মন্দাক্রান্তা, যদি তুমি চাও
নির্বাসিত দ্বীপে একা একা
শিখে নেব জলতরঙ্গ।
তোমার সহাস্য বুকে প্লাবনের টান এলে
ধবধবে মরাল চোখে
ভেসে উঠো জলের শিয়রে।
প্রবাসী অন্ধকারেও
চিনে নেব সে লাবণ্য পালক।
তুমি কী আলো ভালোবাসো?
নাকি অন্ধকার?
মন্দাক্রান্তা, তুমি সব জানো
অন্ধকার একটা সম্মোহন
যে মোহের সারাৎসারে
কত কবি হ়েঁটে গেছে
আত্মমগ্ন উচ্চারণ খোঁজে।
আমারও ভালোই লাগে
নিঃশব্দ মধ্যরাতের ছায়া অভিমান।
মন্দাক্রান্তা এত কেন উদাসীন তুমি!
হলুদ পাতার মতো মাটিতে শিথিল,
ঠোঁটে লেগে যেন সিকি প্রহরের ব্যথা!
শোন মন্দাক্রান্তা,
সবাই কী ভীমপলাশি হয়?
কেউ কেউ আজীবন নিজস্ব নারীর কাছে
নেশাতুর হতে চায়।
শোন মন্দাক্রান্তা
মন্দিরা বাজাতে শিখিনিতো কোনদিন
হরিণা বাঁশিটিও না।
এই হাত ছুঁয়ে দেখো
নহবত হৃকম্পনে
হয়ে গেছে ঝুর ঝুরে বালি।
মন্দাক্রান্তা, যদি তুমি চাও
নির্বাসিত দ্বীপে একা একা
শিখে নেব জলতরঙ্গ।
তোমার সহাস্য বুকে প্লাবনের টান এলে
ধবধবে মরাল চোখে
ভেসে উঠো জলের শিয়রে।
প্রবাসী অন্ধকারেও
চিনে নেব সে লাবণ্য পালক।
তুমি কী আলো ভালোবাসো?
নাকি অন্ধকার?
মন্দাক্রান্তা, তুমি সব জানো
অন্ধকার একটা সম্মোহন
যে মোহের সারাৎসারে
কত কবি হ়েঁটে গেছে
আত্মমগ্ন উচ্চারণ খোঁজে।
আমারও ভালোই লাগে
নিঃশব্দ মধ্যরাতের ছায়া অভিমান।
মন্দাক্রান্তা এত কেন উদাসীন তুমি!
হলুদ পাতার মতো মাটিতে শিথিল,
ঠোঁটে লেগে যেন সিকি প্রহরের ব্যথা!
শোন মন্দাক্রান্তা,
সবাই কী ভীমপলাশি হয়?
কেউ কেউ আজীবন নিজস্ব নারীর কাছে
নেশাতুর হতে চায়।
অরিজীৎ শূর
এমন কখনও দেখেছো
এমন কখনও দেখেছো
পুড়তে পুড়তে বড় হচ্ছে
শরীর?
না দেখোনি
দেখলে আর এদিকে আসতে
না৷
একটা কিছু যখন পুড়তে
শুরু করে
তখন তার পরিসীমা অস্বাভাবিক
ভাবে বেড়ে যায়৷
আকারবিকার ভেঙে পড়ে
সর্বস্ব ছাই আর ছাই...
অথচ এত অল্প কিছু সময়ের
জন্য
এত আয়োজন
এত বিলাসিতা৷
এমন কখনও দেখেছো
পুড়তে পুড়তে বড় হচ্ছে
শরীর৷
স্বপ্ননীল রুদ্র
বোতাম খোলা বর্ম
'গুগল'-এর মতন তুমিও
রহস্যহীনতার শিকার---
যে বর্ম তোমার জন্য নিবিড়
ঢালাই-ছাঁচে ঢেলে
তিলে তিলে নির্মাণ করেছি,
তার সুরক্ষাযোগ্যতা
বড় ভাবিয়ে তুলেছে। বর্ম
সত্ত্বেও তুমি আদুল
অনাভরণ হয়েছ। চেয়েছি
বিস্ময়-রোঁয়াবৃত
অন্তরপ্রদেশের বন ফুঁড়ে
তোমার আলোর ভল্ল
ছেদন-কামোন্মাদ ছুটবে
আমার বুকে বামদিকে;
তোমার নিতম্বের তলায়
মাতাল কৃষ্ণাভ তেজি ঘোড়া---
অথচ 'গুগল'-এর মতন আমার
বর্মের বোতামগুলি
তোমার আঙুল এক এক করে
সবগুলি খুলে ফেলেছে
আমাকে পাঠানো চিঠিটির
ডাকটিকিট পোস্টঅফিস
ইত্যাদি প্রভৃতি যাবতীয়
অনুষঙ্গ ডাক-পিওনের আগে
হোয়াটসঅ্যাপ প্রেরিত
মনোজ জানা
গান
যে শহর কুয়াশা বানায়
কারখানায়
তাকে গান দেব না ধার,
তুমি যদি বলো— ‘এ অহংকার!’
কথা বাড়াব না আর।
যে শহর অশান্তি-দূত পাঠায়
প্রভাতচ্ছটায়
তাকে ফুল বেচব না জেনো,
দাঁতে দাঁত চেপে যদি
বলো— ‘ফুল এনো!’
দেব না,সত্যকে চেনো?
যে শহর বিবেক বেচে
নেচে নেচে
নাইব না গাঙে তার হাতধরে—
যদি কাতরাও কোমল অনুতাপী
স্বরে,
গান ছড়াব নগরে নগরে।
মলয় সরকার
বেহুলা
বেহুলা ভাসে গাঙুরের
জলে
কোলে তার নিষ্প্রাণ শরীর
চারিদিকে নিঃশব্দ আকাশ
বহে চলে শান্ত নদীনীর
কখনও বা সূর্য ওঠে রাঙা
কখনও বা ডুবে যায় পাটে
কখনও লাঙল নিয়ে চাষী
কখনও রমণী আসে ঘাটে
শিবাকুল প্রহর ঘোষে যামে
বেহুলা বিনিদ্র ভেসে
চলে
আশা তার হৃদ- মঞ্জুষায়
তারা ফোটে আকাশের তলে
জঙ্গলের ভেজা ঘন ঘাসে
জমে থাকে নিস্তব্ধ শিশির
চারিদিকে কান্না ভেসে
যায়
ঘাসে জমা অশ্রু নিশির
লখীন্দর ফিরে পাবে প্রাণ
আশা বুকে সতী বেহুলার
দিবানিশি কেটে যায় কত
ভেসে ভেসে মান্দাসে কলার
সতী নারী এয়োতী সিঁদুরে
প্রলোভন ভয় চারিদিকে
পতিব্রতা বেহুলা তথাপি
আগলায় শবদেহটিকে
আকাশ বাতাস শুধু কাঁদে
চারিদিকে রব হায় হায়
তবুও আশায় বুক বেঁধে
গাঙুরেতে ভাসে বেহুলা
লক্ষ্মী নন্দী
হেমন্ত
হেমন্তের স্পর্শ শিহরণ
অামার রাতের শরীরকে
উন্মাদ করে তোলে।
দৃশ্যের ভেতর জেগে ওঠে
অাদ্র যুগল দৃশ্য।
কোলাহলহীন জ্যোৎস্নায়
কতবার - তার ওষ্ঠে
রেখেছি ওষ্ঠ,হয়েছি উন্মাদ।
আবার কখনও তার সাথে
অস্তিত্ব হয়ে উঠেছি
নবান্ন উৎসবে।
ধানশরীর রোদে
তৃষ্ণা জুরায়ের মতন
হেমন্তের শিশির সংলাপ
আমাকে কতবার
নিয়ে গেছে ঘোরের মধ্যে
রমণীয় সম্মোহনে।
যতবার এই চেনা পৃথিবীতে
তার সাথে মেতেছি
আত্ম মৈথুনে।
ততবার - অামাকে
রোমান্টিক অাবরণে
ঢেকে দিয়েছে
আবছায়া অাকাশ।
কিন্তু যখনই প্রকৃতস্থ
হয়েছি
কোনও দিকে না তাকিয়ে
বলেছি - হে নিশীথ,
আমার লজ্জা গোপন রেখো।
মৌসুমী চৌধুরী
মিনি-ভুলো সংবাদ
বল্লে মিনি ভুলু কুকুরে
ডেকে,
"শুনছিস কি ব্যাপারখানা
টি.ভি দেখে টেখে?
মানুষরা দেয় গরুহাটায়
হানা
গরুও নাকি দিচ্ছে সোনা-দানা!
মোদের ভাগ্যে ছিঁড়বে
না আর শিকে।"
ভুলু কুকুর কেঁদে কেটে
কয়,
"ভাই রে, বুক কাঁপছে,
করছে বড় ভয়।
মনিব কবে তাড়ায় ঘাড়টি
ধরে!
চোর-ডাকাত আর চিনতে পারছি
না রে
দল বদলে চোর-ডাকাতও ধোপ
দুরস্ত রয়।"
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)