এই সংখ্যার লেখকসূচি: দেবাশিস মুখোপাধ্যায় প্রতাপ রায়, ইন্দিরা দাশ, অরুণিমা চৌধুরী, শ্যামশ্রী রায় কর্মকার, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, সুরংগমা ভট্টাচার্য, রমা সিমলাই, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত সমরেন্দ্র বিশ্বাস, শাশ্বতী ভট্টাচার্য নাসির ওয়াদেন, বর্ণশ্রী বক্সী, গৌতম কুমার গুপ্ত, দিশারী মুখোপাধ্যায়, রীনারানী দাস, আফরোজা অদিতি, শিখা কর্মকার, বিনতা রায়চৌধুরী, সুজাতা দে ও তাপসী লাহা।
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
একটি প্রাক স্বাধীনতার গল্প
সন্ধ্যা শুরু করল তার গান ঝিরিঝিরি দিয়ে । ছাতা বলল নেতিবাচককে চুপ করে শোন।
সচেতনকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল
স্বাধীনতার বাইক হর্ন ছাড়াই , হেলমেট ছাড়াই । বল বল বল
সবে । দুয়ো উঠছে লাল পাড় শাড়ির । কপালের বিন্দিয়ায় তিনরঙ আর কপাল খুশি খুশি
হও ধরমেতে ধীর । র কে র বললে
সে আজ রাগে না । গল্পের ভিতর
ঢুকে যায় সাদা পাঞ্জাবি । কাল স্বাধীনতা চার চাকায় চাকায় শের ই
পাঞ্জাবে ফরেন লিকার ঢেলে তার
স্বাস্থ্য পান করতে করতে সারে যাঁহা
সে আচ্ছা । পরিকল্পনা তাকে সুড়সুড়ি লাগায় গলায় তেরঙা দিয়ে
আর তার থুতু লাল করে দেয় কালো পীচকে । কেউ এই বর্ণ বৈষম্যের প্রতিবাদ করে না । স্বাধীনতা জানে এরা কেউ বর্ণপরিচয় পড়ে নি । বোবা আর
অন্ধদের মুখে ধোঁয়া দিয়ে স্বাধীনতা
আর পরিকল্পনা লাল আলোদের
পাড়ায় দাপায় মধ্যরাত অবধি । রাস্তায় পড়ে থাকে বেহেড । ভাদ্রমাসের কুকুর সঙ্গমের পর পা
তুলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে
পড়ে স্বাধীনতা আর পরিকল্পনার
উপর তার কাজ সেরে নেয় । ভোরের ব্যান্ড একটা বিরাট পার্টি
ডাকে ওঠ গো ভারতলক্ষী
বাতাসে উড়ে যাচ্ছে এক টাকার
স্বাধীনতা দিব্য
প্রতাপ রায়
কেউ ভালো থাকে না
শেষ চিঠিটা ডাকবাক্সে ফেলার পর পোষা
পায়রাটা চেয়ে থাকে করুণ মুখে
পায়রার ঠোঁটদুটো মরুভূমি ভেবে আলো জ্বালি
আলো জ্বলতে থাকে,
আমি নিভে যাই।
শেষ চিঠি নিয়ে যায় ডাকপিওন...
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মতো চেয়ে থাকি
ধর্মগ্রন্থের দিকে
অধর্মের গলা টিপতে কখন এগিয়ে আসবে
প্রত্যুত্তরের হিংস্র হাত!
আমার জন্য কিনে আনা হোক লাইলনের কাছি
নরম কলা মাখাও তাতে,
মোম মাখাও
মৃত্যু নিশ্চিত করো আমার
প্রত্যুত্তর আরও ভয়ানক মৃত্যু। ব্যক্তিগত
মৃত্যু।
শেষ চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে দেওয়ার পর
মৃত্যুর পরোয়ানা আসে
শেষ চিঠির শেষ লাইনে লেখা থাকে ভালো থেকো
আসলে তা এক বিরতি। মৃত্যুকে মেনে নেওয়া
ক্লান্ত মনের অলুক্ষুনে উচ্চারণ।
আসলে কেউ ভালো থাকে না।
ইন্দিরা দাশ
ভুত-চতুর্দশী’র রাত
প্রতি বছর এই সময়ে
না দেখা দেশ মনে পড়ে
আর সেইসব মানুষ
সেই যারা বহুদূর পথ হেঁটে হেঁটে
ফেলে এসেছিল
সর পড়া পুকুর,
চালি' তে
পড়ে থাকা একলা প্রতিমা
দুগ্ধবতী গরুটির ডাক
সেই যারা কোলে নিয়ে
থুতনি ছুঁয়ে আদর করত
অল্প অচেনা ভাষায়
সেই সব কমতে থাকা প্রণামের পা
মাঝেমাঝে
আমার মায়ের ডিমেনসিয়া পুকুর থেকে
স্মৃতির গুবগুবি হয়ে ভেসে ওঠে
তবুও শব্দে দেখা সবুজ কুয়াশার ভোরে
আজকাল ঝাপসা শুনতে পাই
খেজুরের গাছ থেকে টুপ করে
ক্রমাগত ঝরে শিশিরের জল
আর কমে আসে সময়ের ব্যবধান
আমার চুলের রূপোয়
বিলি কাটে, বিলি কাটে
প্রাচীন নতুনদিদিমার আঙ্গুল
তেমনই আঙ্গুল দিয়ে
সলতে পাকাই
আত্মার আত্মীয়তাময় রাতে
আলো জ্বালি পিদিমে
এপারে ওপারে।
অরুণিমা চৌধুরী
তাহাদের নাম আত্মীয় হোক
অন্ধকার প্রগাঢ় হোক
শিকড় থেকে মুছে যাক পিতার নাম
শাখা ও প্রশাখায় আটকে থাকা কিছু পালক
অভাব নয় স্বভাবের দোষে
মৃত
হে সম্পর্ক জীবিত হয়োনা আর
কেউ এসে তপ্ত কপালে হাত রাখো দেখো হে অতীত
আমিও পুড়েছি খুব
কখনো বুঝিনি জলের স্পর্শ
কতটা নরম হতে পারে
আজ যারা আগুন ছুঁয়েছে আর শিকড়ের গোড়া থেকে
একটি মাত্র শ্বাস
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল....
যারা নরম বোঝেনি যারা মৃতদেহ থেকে চুল
উপড়ে নিয়ে বোঝা হাল্কা করেছে অনর্থক
তাহাদের নাম আত্মীয় হোক।
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
আসলে
সে অনেক কথা
কত কথা যে
বলার আছে তোমাকে
মুহূর্ত দুয়েক আগে ছায়া হয়ে
ঝুঁকে ছিলাম জলে
গাছ ভেবে জনাকয়েক পাখি এসে বসল
কাঁধের ওপর
দু'একজন
কাঁকালে
তারপর তো গপ্পো আর গপ্পো
ছেলেমেয়েদের কথা, শিকারী
বাজের কথা,সাপ
কেউ কেউ অবশ্য দূরের খবরাখবর দিল
কীভাবে সমুদ্রকন্যা বাঁধা পড়লো
রোদ্দুরের হাতে
কীভাবে ছন্নছাড়া জীবন কাটাচ্ছে
সব নদী
কীভাবে চিনারবনে অবিশ্বাস
ছড়াচ্ছে শেকড়
চক্রব্যূহ পাঠ নিচ্ছে গর্ভস্থ
শিশুরা
কীভাবে রচিত হচ্ছে ব্যর্থতার তৃতীয় এপিক
বিষাক্ত লিরিক লিখে নীলবর্ণ হয়ে উঠছে বন্ধুদের নখ
গোপন শব্দের ব্লেড ফালাফালা করে
দিচ্ছে বিশ্বাসের পিঠ
এসব বলার পর পাখিরা পাথর হয়ে খসে
পড়লো পুকুরের ঘাটে
শাপলাপাতার গায়ে রক্ত ফুটে উঠলো
ফুলের মতো
দেহগান গাইতে গাইতে বয়ে গেলেন
লালনফকির
এইসব কথা জেনে কার কোন লাভ হবে
বল
আমাদের তো দুদণ্ড বসত
এই হাঁড়িকুঁড়িটুকু সম্বল
ক্ষোভ দুঃখ জমা রাখি মুহূর্তের
হাতে
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
জালিম
তোমায় লিখছিনা বলে লেখা হচ্ছে না
পাতা পাতা জমে যাচ্ছ লেখার কথাই
ভাবছি না
প্রেম লিখবোনা বলে তোমাকে লেখা
হচ্ছে না
গদ্য হয়ে বসে আছি জবুথবু
আগাম শীত হয়ে উনুনে ঢুকিয়ে
দিচ্ছি হাত
যেন এক টুকরো অঙ্গার যেন একটি
ফুলকি তোমার চোখে কদাচিৎ পড়ে
সমস্ত লেপ তোষক ফুঁড়ে টেনে নাও
আত্মা
খুলে দাও অসন বসন শৃঙ্গার
বুকনিবাজ এক জালিম মোড়ের মাথায়
দাঁড়িয়ে
বাঁশিতে গেঁথে যাচ্ছে তোমাকে বলা
ফুঁ
তোমাকে গাওয়া সরগম বেজে উঠছে
অজানা রাগে
সাজাতে চাই বলে নিরাভরণ দেখতে
চেয়েছি তোমায়
ঘুমভাঙা আড়মোড়া জড়ানো গালে
প্রথম ঠোঁটের কারুকাজ
গলায় অনুষঙ্গের দাগ বলব না
অনুরাগ
এসব হাত ভরে রেখে দিতে দিতে মুঠো
বড় হয়ে যাচ্ছে
বয়স্ক হচ্ছে আমাদের গল্প
সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
প্রেম এখন
রোজ সকালে যে পত্রপত্রিকা আসে
আঁতিপাঁতি প্রেম খুঁজি তাতে
খুঁজে ফিরি রোজ
কামনা করি একটুকু পেলব নরম প্রেম
এই কামনাকে, সাধনার পর্যায়ে নিয়ে গেছি আমি
অনেক উপনিবেশ থেকে ডাক আসে
প্রেম বিষয়ক রচনাবলী থেকে পাঠ করি
অভিনিবেশে ছবি আঁকি প্রেমের
গল্প উপন্যাসে প্রেমের দ্বন্দ্বটুকু ভরিয়ে দিতে চেষ্টা করি কারণে অকারণে
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হেরে যায় এই দ্বন্দ্বে
এই আধার থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গে নিজেকে পোড়াই
সকল লঘুতা বর্জনের একান্ত নিজস্ব ভাষা তৈরি করার চেষ্টা করি প্রেমের
তরঙ্গ বিধৌত এক উপমাহীন উচ্ছাসে যুগপৎ ভরে দিই ধ্বংস ও নির্মাণ
আমার কামনার প্রেমের সাধনা
সার্থকতা দেবে কি মানুষকে কখনও তাঁর জন্মের?
উত্তরের জন্য নিরন্তর খোঁজ চলে।
এই প্রেম অপরিমেয়।
এই প্রেম আমার সমগ্র স্বত্ত্বায় দীপ্যমান।
এই প্রেম আমি।
ক্যালিগ্রাফি,কবিতা ও ঝুমুরগান
বা প্রত্যেকটি নাটক থেকে ছেনে নিয়ে আসি
তাদের বৈভব,অহঙ্কার,তেজ ও সমর্পন
দেওয়ালের গায়ে খোদাই করি ভাস্কর্য স্নেহে
মদন বা রতি নয়
আমিই স্বয়ং প্রেম হয়ে উঠি।
বেঁটে দিই জগৎ সংসারে।
কেউ কি পাশে এসে বসেছিল
সিঁড়ি ডিঙোনো পথে উড়ে আসছে শেলি,কিটস,রবীন্দ্রনাথ
গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে অমিতাভ দাশগুপ্ত,সিদ্ধেশ্বর সেন,শক্তি,সুনীল,তারাপদ আর
এই তো সেদিনের দুলুকাকু মানে পৃথ্বীশ গাঙ্গুলী
সুললিত কণ্ঠে বিবিধ ভারতীতে
সুরভিত অ্যান্টি সেপটিক ক্রীম বোরোলীন
কদিন পরেই
চিত্রহারে রূপ তেরা মস্তানায় স্ক্রিনজুড়ে
নিষিদ্ধ পমপম শর্মিলা ও রাজেশ খান্না
গা টা শিরশির করে উঠছে
মাথার ভেতর নরম ঘামে ভেজা মুখটা
রেলব্রিজের মাথা থেকে আটকে যাওয়া ঘুড়িটা ছাড়িয়ে নিতে চাইছে
শালিখ,টিয়ার কাজিয়া কিচমিচে ঘরে ফেরার তাড়া
কপাল চুঁইয়ে ব্যথাটা তীব্র হয়ে নামছে তরতর
ঘুড়িটাকে পুরো টুকরো করে উড়িয়ে দিতে পারছি না কেন আমি
রূপনারায়ণের গা ঘেঁষে
কেউ কি পাশে এসে বসলো এই শ্রাবণে
এখন শুধু বৃষ্টির অপেক্ষা
মা ডাকছে এ এ
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)