
৯ম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ।। ১৮ নভেম্বর ২০১৯

মতিন বৈরাগী
রাজাকথা
কবেকার কথা
আর চিরকাল এই কথাগুলো রূপকথার; দাদী নানী বলে
নানুরাও বলে তার নাতি নাতনিদের সাথে
আর তখন রাজার হাঁটার পথে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো
একটা প্রয়োজনীয় শিষ্টতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
আর সেখানের খোড়লের কাঠবিড়ালি, বা ডালে লিজার্ড
তারাও নিরাপত্তার নিয়মে তাকায়
আর দাদী নানী নানু তাদের নাতি নাতনিদের কাছে
সেই গল্পটাই বলে রাজকুমার রাজকন্যা আর অপরিসীম ধনদৌলত
কিন্তু সেই ধনদৌলত তারা শুনেছে দেখেনি-
তবু সেই কবে কার কথা
কবের আর নয়, চিরকালের; আজকের আর আজকের রাজকুমাররা
রাজকন্যা রাজত্ব আর হীরে জহরতের পাহাড়গুলো লুকায় কোড নম্বরে
দাদী নানী শুনেছে সেই কথা কিন্তু দেখেনি চাক্ষুস
আর তারা জ্যাকব ইসহাক কিংবা এজিকেলের মতো নয়
তারা আসল জ্যাকব
আর ফেরাউন দেখে নীল নদদিয়ে পালাচ্ছে মুসা
আর নীলনদে
অসংখ্য ঝুরির নৌকায় অংখ্য মুসা ভেসে যায় আইলায় সিডোর বুলবুলে
আর রাজা
যে পথ দিয়ে রোজ আসা যাওয়া করে আর আসে আর যায়
সেই পথ এখন প্রশিক্ষিত
কেবল রাজার জন্যই এইসব রাজকীয়
তবু সাধারণ
জানে ওটার নাম রাজপথ আসে যায় সাধারণের রাজা
আর কবেকার সেই কথা
কবেকার তীর্থ পেরিয়ে রাজপথ রাজার না মানুষের
বোকারা তার কোনটারই হদিসই জানে না
কোথাও আবার রাজা
জনগণতান্ত্রিক; প্রজাতন্ত্রের সড়কগুলো
রাজার জন্য মুখিয়ে থাকে
আর লিজার্ড, আর হাম্বারা আর টিকটিকি,
এবং বিড়ালিনি খোড়ল ডালে বাঁকলে ঠ্যাড় মারে
রাজার মতো ইতিহাসের পারদ ওঠা নামা দেখেmk
আর গল্পগুলো দাদাী নানীর প্রাচীন থেকে
বর্তমান হয়ে যায়।
বিজয় ঘোষ
দৃশ্য
বাস চলছে। বসে আছি । হেমন্তের সকাল। পরিযায়ী পাখি।উড়ে উড়ে খেলা করছে। ঠিক সেভাবে কবিতা হয় না । যদিও একটা দৃশ্য নির্মাণ হয়। বাস যাচ্ছে। দৃশ্য পালটালো। প্রতি মুহূর্তে পালটায়। বাসের ভিতরে এবং বাইরে।বাইরে এবং ভিতরে। প্রতি পল, অণুপলে দৃশ্য পালটে পালটে যায় । পরিযায়ী পাখি উড়ছে কিংবা উড়েছিল তা এখন দৃশ্যত অতীত কিংবা বন্দি হয়ে আছে সে-দৃশ্য মোবাইলস্ক্রিনে ।
ফলত বাস এবং মাইগ্রেটেড বার্ড দুটিই চলমান। অর্থাৎ কোথাও দৃশ্য তৈরি হচ্ছে আবার মুছেও যাচ্ছে ...
ফলত বাস এবং মাইগ্রেটেড বার্ড দুটিই চলমান। অর্থাৎ কোথাও দৃশ্য তৈরি হচ্ছে আবার মুছেও যাচ্ছে ...
লীলাবতী
আমার দুঃখেরা হেঁটে হেঁটে যায় কুয়াশামাখা হেমন্তে।
কুয়াশায় ভিজে আছে যে সকাল তাও মেঘমালা হতে চায়
অথচ মেঘেরা দূর দূর আকাশে হারিয়ে গেছে
লীলাবতী কুয়াশায় ভিজে ভিজে ভোরের আলোয় হারিয়ে গেছে,
হেমন্ত-সকালে স্মৃতি হয়ে আসে,লীলাবতী
কুয়াশারঙের কামনা জেগে আছে স্মৃতির ডানায়,
লীলাবতী কোথাও নেই...
লীলাবতী আমার দুঃখ-বিলাস ॥
উমা মাহাতো
অগ্রবর্তী
অলিতে গলিতে সকাল
সরণি নম্বর নিয়ে পথে পথে শিউলি ঝরে কুয়াশায় ভোরের।
আমরা যে পাড়ায় থাকি,শিশিরে পয়ঃপ্রণালি পরিচিত পথকুকুরের।
তারাদের স্মরণে জ্বলে ওঠে আলো-দীপ যত,বুঝি
কিছুটা আকাশ এখনো জানালায়,শীততাপনিয়ন্ত্রিত।
হেমন্তের সব কবিতা কীভাবে বিষাদের?
কীভাবে আধুনিক নগরায়ণ?
রাত যত বাড়ে, চৌকিহীন আমাদের ঘেউ ঘেউ জীবন--
কৃষকের স্বপ্নের মাস, অগ্রহায়ণ।
সৌমিত্র চক্রবর্তী
নামানুষ
-কিভাবে দেখি তোমার জগৎ,
আমার যে নেট নেই।
-অমন সবার শেষ হয়, পাড়ায়
রিটেইলে টাকা দিলে ...
-কোনো মহাজাগতিক বস্তু,
আমার যে টাকা নেই!
-হতাশা আনে দারিদ্র্য,
পকেট হাতড়ে দেখ।
-পকেট! তাতেই বদ্ধ আমি
সারাটাজীবন। নিজের তো কোনো পকেট নেই।
-চূড়ান্ত বুদ্ধু। প্যান্টে
না থাক, জামায় তো আছে।
-সম্পূর্ণ উলঙ্গ আমি
বোধহয় নিয়ান্ডার্থাল, আমাদের একশো কোটির যে জামাও নেই!
-অপদার্থ! জামা থাকে
আলমারিতে, ওয়ার্ড্রোবে। যেখানে থাকে ভোটার প্রমাণ।
-হাসিও ফুরিয়েছে অন্ধ
কালোয়। নেই নেই আমার আলমারি, গণতান্ত্রিক পরিচিতি, জিভ, সবই অধরা।
-মূর্খ নামানুষ! দূর
হও! এত যদি নেই তবে নাগরিকত্বও খারিজ। তুমি নেইনাগরিক, মৃত্যুর দেশে যাও।
শশাঙ্কশেখর পাল
প্রহ্লাদের হস্তরেখা
তোর মনে বাসা এখন অনেকগুলো
একটি নীল গাছবাড়ি
হলুদ জানালা মোড়া সবুজ পর্দা
রঙতুলির দীর্ঘ ঢক্কানিনাদের
পর
হলুদে গাঢ় লাল প্রলেপ
পড়েছে
সবুজ পর্দা সরে বাতাসে
গেরুয়া বিকিরণ
উড়ছে উড়ছেই
কোনো বিভ্রমে কুগুলো
দুমরে আছে
ভাঙা থাম থেকে আশ্চর্য
দুটি ঈশ্বর মুখোমুখি
একই দেহ ছিঁড়ে উত্থিত
একজন হাসছেন
অন্যজন বিষণ্ণ উচ্ছেদে...
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
কম্পাসের ভাঙ্গা সংকেত
সবুজ শাড়ির আঁচল সিগন্যালের
মতো হাওয়ায় দুলতেই
গাড়ীগুলো চলে যেতো ভুল
লাইনে,
সীমান্তের ম্লান টিপ
ধ্রুবতারার ইঙ্গিত নিয়ে এলে
প্রত্যেকটা জাহাজ উষ্ণ
সমুদ্র পেরিয়ে থেমে যেতো ভুল বন্দরে!
একদিন মোহিনী হাসির থেকে
বেরিয়ে এলো নিঃশব্দ বিদায়,
অন্ধকারে ঢেকে গেলো ঝঞ্ঝাক্লান্ত
সমুদ্রসময়
ভেঙ্গে গেলো কম্পাসের
কাঁটা,
পৌঁছানো হলো না যেখানে
যাবার কথা!
শশ্রুষার জন্যে একদিন
বলেছিলে বিশল্যাকরণীর ছায়া হবে তুমি,
জানি সে সব অরণ্যেরা
আজ মৃত!
তোমার ধ্রুবতারা অসহায়
আকাশে এখনো পাঠায় সংকেত
চোখে আজো ভেসে আসে স্বপ্নেরসবুজ
সিগন্যাল,
আমার সে সাহস নেই
রঙ্গীন দুচোখ মেলে আজ
তোমায় আবার খুঁজি!
সুবীর সরকার
প্রলাপ
১.
আমরা কেউই পাশ কাটিয়ে
যেতে পারি না
অতিরঞ্জিত মনে হয় হাসি
ও অনুতাপ
আর বিজ্ঞাপন বিরতিতে
প্যারোডিগান
ব্যবধান সত্বেও সুরেলা
হয়ে উঠছি
নেমে আসে শব্দের রাজা।শরাহত
সাদা
চাঁদ
২
মেঘের ডাকের নীচে এই
পৃথিবী
ছাতা মেলা দুপুর
কম্পন অনুভূত হচ্ছে
সমগ্রটুকু নিয়েই তো আমাদের
জাগরণ
তোমার মুখ অন্ধকারে ডুবে
যাচ্ছে
ঘুম ও অ্যালার্জির ধারে
আমাদের
পৃথিবী
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)