
৯ম বর্ষ ১২শ সংখ্যা ১লা জুলাই ২০২০

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় / অনুবাদ কবিতা
ইথারলিপি
মূল রচনা পাওলো লেমিনস্কি
অনুবাদ – বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
[কবি পরিচিতি : কবি, অনুবাদক ও জীবনীকার, জন্ম ব্রাজিলের কিউরিটিবা
প্রদেশে ১৯৪৪এ । ১৯৭৫এ প্রকাশিত তাঁর পরীক্ষামূলক উপন্যাস ‘কাটাটাউ’ লাতিন আমেরিকার
সাহিত্য-সংস্কৃতি মহলে সমাদ্রিত হয় । লেমেনেস্কি বহু ভাষায় পারদর্শি ছিলেন । কাব্য
ও গদ্যগ্রন্থ ছাড়াও অনুবাদক হিসাবেও লেমেনস্কি খ্যাতি পেয়েছিলেন, পর্তুগীজে অনুবাদ
করেছিলেন জন ফানতে, জেমস জয়েস, স্যামুয়েল বেকেট প্রমুখের রচনা । ১৭ শতাব্দীর জাপানের
হাইকু প্রবর্তক মাৎসু বাসো, লিও টলস্টয় ও যিশুর জীবনী রচনাও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ ।
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভার সাইরোসিসে আক্রান্ত হয়ে লেমেনস্কির মৃত্যু হয় ১৯৮৯এর
৭ই জুন মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ।]
ইথারলিপি
একজন কবি হাওয়ায় মিশে
গেছে এখানে
তার লেখা যত ধুলোবালি
উড়ে গেছে কবেই ফুৎকারে
এখন কিছুই নেই
না শরীর
না লেখাঝোকা
অক্ষরের আর্তনাদ ঝড় হয়ে
কিছু কি ভেঙেছে একদিন
?
এখন সবই তো স্তব্ধ
শ্মশানের নৈঃশব্দ্য ঘিরে
আছে তাকে
শুধু আমি এই নীরবতার
পাতা উলটে
পড়ে ফেলছি তার লেখা সমস্ত
কবিতা ।
হরপ্রসাদ রায়
ভাগ্যিস রাত্রি ছিল
বিশ্বাস ধূসরতর প্রতিদিন
আত্মীয়তা বন্ধুপ্রীতি
প্রতিশ্রুতিহীন।
ভয় হয়, খুব ভয় হয়, রেস্তগুলো
পণ্যবদ্ধ বিনিময়ে
কখন ফুরায় !
ভ্রাতৃঘাতী রক্তে হাত
লাল
দিগন্ত নদীর জলে কুমারীর
ধর্ষিত লাশ আর ফুলেল সকাল
ভেসে যায়!
ভাগ্যিস রাত্রি ছিল,
তা না হলে এত লজ্জা এ
পৃথিবী লুকোতো কোথায়!
সুমিত্রা পাল
পদ্মবিল
যাপনচিত্র এখন অন্তহীন
চোখের সামনে পদ্মবিল
পদ্মবিলে সুস্পষ্ট, উজ্জ্বল
এক আকাশ
আর মিনার্ভা’র প্রতিকৃতি;
অথচ মনের কুয়াশাকিনার
হতে উঠে আসে
এক রিক্ত প্রতিচ্ছবি…
দৃষ্টি পাতি পদ্মবিলে,
কুয়াশা সরে জ্বলে ওঠে
একটি একটি করে নীলাভ
বাতি,
ইচ্ছে হলেই এখন আমি গন্তব্যে
পৌঁছে যেতে পারি।
বেজে উঠেছে হুইসেল
আমি দাঁড় টানি।
রঘুনাথ মাজি
খবর
প্রথমে খবর আসে গ্রামে
তারপর সব কাক ডেকে ওঠে
করুণ অভ্যাসে
অবশেষে কফিনবন্দী সে
ফিরে আসে গ্রামে
বাড়ির উঠোনে
এবার পুজোয় তার
ধুনুচি নাচার কথা ছিল
এখন ধুনুচি পুড়ছে তার
মাথার কাছে
এত জল
জলপ্রপাত দেখেনি গ্রামে
কেউ
প্রকাণ্ড প্রলয়ে ভেসে
যাচ্ছে
এক আকাশ স্মৃতি
জমানো ধুলোবালি
সীমান্তের ওপারেও
বাবা আছে.. মা আছে
আছে পাড়া প্রতিবেশী
ওপারের কাকেদের কাছে
এ সবের খবর আছে কি ?
বৈশাখী চক্রবর্তী
বেদন
সমান্তরাল পড়ে আছে অন্ধ ও নীল
না মানুষ জমি
দিগন্ত বিস্তৃত বর্ষণ।
আলোময় ভিক্ষুণীর মত
একতারা বাজিয়ে চলে যাচ্ছে
জীবন,
সন্ন্যাসী ঝোলা থেকে
ঝরে যাচ্ছে বিবর্ণ উপবাস,
মারণ আপোষ, সঙ্গত অসুখেরা
ব্যক্তিগত ঈশ্বর
পড়ে আছে কিছু অন্তরঙ্গ
উড়ো খই
দোহাই, নির্জনতাটুকু
রেখে যাও
রেখে যাও ভালবাসার অনুভব।
সমরেন্দ্র বিশ্বাস
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন
অপমান
আমাদের অপমান
বারবার
ফিরে যায় সূর্যবন্দনার
দিকে।
মানচিত্র
উঁইএর ঢিপির উপর
কারা যেন বসিয়ে রেখেছে
ভারতবর্ষের মানচিত্র!
দিক বদল
আজকাল ঘড়ি মাঝে মাঝেই
বদল করছে দিক।
কখনো ডান, কখনো বাম
-
আমাদের শার্টেরা বড়ো
বেশী সুযোগসন্ধানী!
হেডলাইট
রাস্তায় লোকগুলো যখন
হাঁটে
দিনের বেলাতেই জ্বালিয়ে
রাখে
অনাবশ্যক ব্যাটারি!
এমনি ভাবেই ক্ষয়ে যায়
প্রাত্যহিক হেডলাইট।
সভ্যতা
সভ্যতার দীর্ঘ টাওয়ারগুলোর
সামনে
হ্রস্ব হয়ে যাচ্ছে আমাদের
দিন !
বিস্মরণ
স্মৃতির সন্ত্রাস হয়ে
তেড়ে আসে আবছায়া মুখ –
চিনি কি তারে, চিনি না?
এ জন্মের একি অসহায় বিস্মরণ!
অরুণিমা লেন
স্মৃতির সরণিতে কবে থেকে
আজও
পথে শুয়ে আছে প্রিয়তমা
-
অরুনিমা লেন!
প্রেম
প্রেম অপেক্ষায় থাকে
নক্ষত্র সংকেতের ,
তবু প্রতিদিন আকাশের
তারা অগনন ঝরে যায় !
অনুপম দাশশর্মা
নেপোটিজম্
ডানহাতকে যখন জানতে দেওয়া
হয়নি
বামহাতের তলায় ছায়া পড়েছে
অযৌক্তিক ইচ্ছের,
বাইরে তখন নিশ্চিন্তে
হেঁটে যাচ্ছিল সমকাল
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল:
ওহে খবরে উঠেছে কী
পতিত জমির ফসল জন্মের।
সে মৃদু হেসে জানায়,
সবই আছে মায়াঘেরা বকলমে।
এরপর ঋতুর বদল এল। সমাজপুষ্ট
কোকিলেরা
গাহিল বৃন্দগান।
সন্ধের শীতলপাটিতে বসে
সবাই দেখল তাজমাথায়
রেখে যাঁরা দম্ভের হুংকারে
নিয়ে এসেছে থরে থরে
মুগ্ধতার হরেক নিদর্শন,
তাঁদের বামহাতের চাপে
ক্রমশ নেতিয়ে পড়েছে অচেনা
মণিকাঞ্চন।
একদিন সহসা ঝরে পড়ল প্রবল
সম্ভাবনাময়
মেধাবী তারারা ভূতল পৃষ্ঠে
যেখানে উঠে আসে ক্লেদহীন
বিস্ময়ের ঝকঝকে মুখ
সেখানেই শতকের রাজরথে
পরিভ্রমণ করে 'নেপোটিজম্'।
রমা সিমলাই
অপাঙক্তেয়
প্রাচীনা শসার মতো কিংকর্তব্যবিমূঢ়
লেপ্টে আছিk
পৃথিবীর চালে...
কেউ চায় না আমাকে
আমারও পরোয়া নেই
দড়ি টানাটানি খেলায়
তবুও অভ্যেসমতো, চেতনার
টুকরো টুকরো আয়ুধগুলো সংহত করে যুদ্ধে যাই
দিনের অন্তিমে যখন ফিরে
আসি আধখাওয়া আমিটিকে নিয়ে , সারা গায়ে মাখনের মতো চটচটে জয় - পরাজয়ের ঘন অন্ধকার
একটা নিঃসঙ্গ বিছানা
আমার অপেক্ষায় থাকে...
গেঁজিয়ে ওঠা পচা শসার
মতো শরীরটা এলিয়ে দিলে,
সারারাত চেটে চেটে কানের
লতি থেকে
পায়ের নখ অবধি রাহুমুক্ত
করে আমাকে...
আমি আবার ফলবতী হয়ে
উঠি। প্রাচীনা পৃথিবীর সবটুকু ভরসা আর রোমাঞ্চ বুকে নিয়ে
অবিরাম ঝুলে থাকি পৃথিবীর
জংধরা নোনামাখা চালে
হাত ধরো নচিকেতা।
আমি তোমার সাথে স্বর্গে
যাবো
ফিরে আসবো
আবার যাবো
আবার
আবার
আবার
শ্রীলেখা মুখার্জী
এই মেঘ তো সেই মেঘ নয়
সেই মেঘটা ছিল অন্যরকম
ভীষণ রকম পুরুষালি
গলি মহল্লা কাঁপিয়ে দাপিয়ে
সারাদুপুর জানলা জুড়ে বকমবকম
সুযোগ পেলেই হাতছানি দিতো
ভিজবো দুজন..বাইরে তো আয়
ঘরেই যে তোর দিন বয়ে যায় !
লোভ তো ছিলোই প্রথম থেকে
এমন দস্যি মেঘের
জড়িয়ে গলা ভিজব একা
সবার নজর আড়াল রেখে…
উদোম ছাদে ভিজেছিলাম ,
বেপরোয়া সালতামামি
সেই শ্রাবণে এটাই ছিল পরম পাওয়া
মেঘ আর আমি…
রোদে পোড়া জীবনে আজ
পড়লো বেলা মেঘে মেঘে
কিন্তু এ মেঘ, সেই মেঘ নয়
শেষবেলাকার আলটুসি সে
ভিজিয়ে দেবার গল্পই নেই
সাবধানতায় গা বাঁচিয়ে শুধুই ভাসে-
সেই মেঘটা ছিল অন্যরকম
ভীষণ রকম পুরুষালি
গলি মহল্লা কাঁপিয়ে দাপিয়ে
সারাদুপুর জানলা জুড়ে বকমবকম
সুযোগ পেলেই হাতছানি দিতো
ভিজবো দুজন..বাইরে তো আয়
ঘরেই যে তোর দিন বয়ে যায় !
লোভ তো ছিলোই প্রথম থেকে
এমন দস্যি মেঘের
জড়িয়ে গলা ভিজব একা
সবার নজর আড়াল রেখে…
উদোম ছাদে ভিজেছিলাম ,
বেপরোয়া সালতামামি
সেই শ্রাবণে এটাই ছিল পরম পাওয়া
মেঘ আর আমি…
রোদে পোড়া জীবনে আজ
পড়লো বেলা মেঘে মেঘে
কিন্তু এ মেঘ, সেই মেঘ নয়
শেষবেলাকার আলটুসি সে
ভিজিয়ে দেবার গল্পই নেই
সাবধানতায় গা বাঁচিয়ে শুধুই ভাসে-
সুবীর সরকার
তথ্যচিত্র
নদীকে তো নদীর জল দিয়েই
চিনে নিতে হয়
একটা বাঁশি তো কিনে আনতে
পারো অন্তত
আমার জন্য
রিস্টওয়াচে বরফ জমলে
আমরা প্ৰত্যবর্তনের গল্প
বলা শুরু
করি
পৃথিবীতে হাজার হাজার
মানুষ গান গাইতে
পারে না
আমার কোলবালিশের ভেতর
পাখি ঢুকে
পড়ে
আমার পাশবালিশের নিচে
সুড়সুড়ি ঢুকে
পড়ে
গোপন চিঠির গল্প আর শোনাবো
না
তথ্যচিত্রে গুঁজে দেব
ফেরিঘাট
উমা মাহাতো
ঋতুমতী
গ্রীষ্ম
উত্তাপে,প্রলাপে,জ্বরে
দেহ খুলে রাখি উন্মুক্ত।
অনির্বাণ.. শুদ্ধ ধ্বনির
আলো, অতীবকোমল।অতি-ওজন নয়।
বর্ষা
মাটির কাঁদনগান বা মেঘের ক্ষরণ-বিকার, যাই বলো..
পুঞ্জীভূত গ্রন্থির অসুখভারে
হৃদয়-আকাশ দুর্বিনীত।
শরৎ
নদীকূল ছাপিয়ে বাঁধভাঙা ভাদ্র নেই
বীজলালনের স্বপ্নে ভিজে
আছে নন্দের মাটি। ভেজাবুকে নীল-সবুজ;বয়ঃসন্ধি -মিলন।
ধানজমির লুকোচুরি অবসর
নেই।
হেমন্ত
ভালোবেসে নাগর,একবুক
নগর পুষেছি।
কুয়াশায় মৃত্যু দেখে
তবু…ফসল
তোলার ঘরে পরিবার ঝুঁকে পড়ে।
ধোঁয়াশা মফস্বলি আবেগ।
শীত
বরফে পচন ধরে না জানি।
এও জানি, আমাদের মাঘে
কোনোদিন বরফ জমবে না।
বসন্ত
রঙ।
তুমি খেয়াল করোনি।আমিও
না।
স্বপ্নে কখনো রঙ দেখা
যায় না।
যদি অবশ্য সাদা-কালো
কে আমরা রঙ না মনে করি।
এক সূর্যাবর্তে প্রেম
ও শরীর, বাৎসরিক সঙ্গবাস, আমন্ত্রণ ঋতুকালীন।
নাসির ওয়াদেন / দুটি কবিতা
মিথ্যার মাটিতে দাঁড়িয়ে
সত্যিই কি এ মাটি দুর্বল, বিশ্বাসহারা মাটি
যে ফুল ফোটে সূর্যের আলোতে, মাটির বুকে
সেও কি আজ কাটায় দিন আতঙ্কে ? কলকাঠি
নাড়ে এ যুগের ঘৃণ্যরোদ, ঝড়বৃষ্টি, সুখে অসুখে --
কে কোথায় দাঁড়িয়ে ? কোনটা কার নিবাস
রঙিন পাখায় ঢাকা ফুলের সৌহার্দ্য, সুবাস
যে রোদ মাথা থেকে ঝরায় শুধু ঘাম
পরিশ্রমের গড়ে তোলা ক্ষেত, হৃদয়ের ধাম
কেড়ে নিতে চাও তুমি, এ পৃথিবী নয় একা কারো
পবিত্র মাটিতে যতই ধর্মগাছ পোঁত, আরো, আরো
মিথ্যে মাটিতে দাঁড়িয়ে কেড়ে নিতে পার না তাদের আশ্রয়
আইন সে তো মানুষ কল্যাণে, কারও ক্ষতির কারণে নয়,
এসেছে কত শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরেজ জাতি দল
সব বিলীন কালের গর্ভে, মানুষেরে করে অপমান
এ মাটিতে জন্মাল যে যুবক, এ মাটি আমৃত্যু ছায়াতল
মুর্খ রাজনীতি ছেড়ে জনস্বার্থে লাগাও ন্যায়ের সংবিধান ।
সত্যিই কি এ মাটি দুর্বল, বিশ্বাসহারা মাটি
যে ফুল ফোটে সূর্যের আলোতে, মাটির বুকে
সেও কি আজ কাটায় দিন আতঙ্কে ? কলকাঠি
নাড়ে এ যুগের ঘৃণ্যরোদ, ঝড়বৃষ্টি, সুখে অসুখে --
কে কোথায় দাঁড়িয়ে ? কোনটা কার নিবাস
রঙিন পাখায় ঢাকা ফুলের সৌহার্দ্য, সুবাস
যে রোদ মাথা থেকে ঝরায় শুধু ঘাম
পরিশ্রমের গড়ে তোলা ক্ষেত, হৃদয়ের ধাম
কেড়ে নিতে চাও তুমি, এ পৃথিবী নয় একা কারো
পবিত্র মাটিতে যতই ধর্মগাছ পোঁত, আরো, আরো
মিথ্যে মাটিতে দাঁড়িয়ে কেড়ে নিতে পার না তাদের আশ্রয়
আইন সে তো মানুষ কল্যাণে, কারও ক্ষতির কারণে নয়,
এসেছে কত শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরেজ জাতি দল
সব বিলীন কালের গর্ভে, মানুষেরে করে অপমান
এ মাটিতে জন্মাল যে যুবক, এ মাটি আমৃত্যু ছায়াতল
মুর্খ রাজনীতি ছেড়ে জনস্বার্থে লাগাও ন্যায়ের সংবিধান ।
বাসভূমি
বিকেলের রঙে আলোকিত পেয়ারাতলায়
আড়ি পেতে শোনে ধূসর কাঠবিড়ালীর চোখ
গাছের মগডালে বাসা খুঁটে বেঁচে থাকা ছানা
কলকল স্বরে বহে যাওয়া নদীটির জল
ভিখারিনী মেয়েটির মাথায় কুড়ানো কাঠ
ক্ষুধার উনুনে রান্না হবে শোকের আহার
কেউ জানে, কোথা থেকে এসেছে এখানে
রুমেলা, নামের এক কচি মেয়েটির বাপ
আজও থিতু নেই, দুপাড়ের বনোয়ারী পাখি
পরিযায়ী, এক সময়ে আসে, ফিরেও যায়
তাদের তো নির্দিষ্ট কোন বাসভূমি নেই
আপন দেশে পরবাসী হয়ে থাকা এ জমিনেই ।
বিকেলের রঙে আলোকিত পেয়ারাতলায়
আড়ি পেতে শোনে ধূসর কাঠবিড়ালীর চোখ
গাছের মগডালে বাসা খুঁটে বেঁচে থাকা ছানা
কলকল স্বরে বহে যাওয়া নদীটির জল
ভিখারিনী মেয়েটির মাথায় কুড়ানো কাঠ
ক্ষুধার উনুনে রান্না হবে শোকের আহার
কেউ জানে, কোথা থেকে এসেছে এখানে
রুমেলা, নামের এক কচি মেয়েটির বাপ
আজও থিতু নেই, দুপাড়ের বনোয়ারী পাখি
পরিযায়ী, এক সময়ে আসে, ফিরেও যায়
তাদের তো নির্দিষ্ট কোন বাসভূমি নেই
আপন দেশে পরবাসী হয়ে থাকা এ জমিনেই ।
প্রণব বসুরায়
স্বপ্নে ভয় পেয়ে দ্যাখো
স্বপ্নে ভয় পেয়ে দ্যাখো
মহাদ্রুম শব্দগতিতে সরে
যাচ্ছে অন্য মেরুতে
পিশাচরা সাজে পরে আলোর
চাদর, রক্ত মাখে ঠোঁটে
সিদ্ধার্থ তখনও স্থির—পাথরপ্রতিম,
স্মিতহাস্যময়...
তুমি তো চিত্রকর নও অথবা
প্রাচীন পটুয়া
সরল মানুষ তুমি, এই ভয়ে
স্ববিরোধ নেই
এ সকল বুঝেছি বলেই
পিঠে হাত রেখে ছুঁয়ে
থাকি, আর
দিঘির পদ্মগুলি শত দল
মেলে দেয় রাত-নিরালায়—
পাশ ফিরে তুমিও ঘুমোও...
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
বর্ষার হিম.... বসন্ত
বর্ষাবিকেল
হেমন্তচাদর লেখে কুয়াশাজীবন
বার্তাবহ রাতের দলিলে
টিপসই
চোখ টিপে ব্যঙ্গের জোনাকিরা
লিখেছিল অবিশ্বাস ঘাসবনে।
প্রতিশ্রুতির ভুল ক্রমাঙ্ক
চতুর হাওয়ার পালে ডাল
মেলে
বেহিসাবি জল।
অথচ তরল সরলের আনুগত্যহীন
গরলগামিনী
বিশ্বাস কেঁদে গেলে অপচয়।
প্রতিটি সন্ধ্যাকাল বাসন্তীচাদর
জড়ায়
তাকে বেশ প্রথমযৌবন তবু
সে
উষ্ণ চাদরে কিছু অভেদ্য
উদাসীন মেঘ
সুরের শলাকা কোনো আসুরিক
নয়
অক্ষত অলকাদুয়ার।
এইসব বেনিয়ম বিপর্যয়
অকালসুখ
নিয়মের চাকায় গিলোটিন
বাঁধে।
চিরন্তন ব্যানার্জী
সতীন
সারাজীবন সতীন নিয়ে ঘর
করেছি, তাই;
তুমি আমার নওলকিশোর,
আমি তোমার রাই।
প্রথম সতীন চাঁদের আলো,
তোমার অবাক চাওয়া
তাপ্তি নদীর ডাকে হঠাৎ
হাত ছাড়িয়ে যাওয়া।
মুগ্ধ চোখে নেশা ধরায়
শালডুংরির বন
বুঝে গেলাম সতীন নিয়েই
জ্বলবো সারাক্ষন।
বাদাবনের সুন্দরী গেঁও,
কাজল কালো মেয়ে
সারাটামাস থাকে কেন তোমারি
পথ চেয়ে?
পাড়ার মোড়ের বাগদীবুড়ি,
তার কি আছে রূপ?
তবু তোমার রোজ কেনা চাই
অদরকারী ধূপ।
বর্ষারাতের বৃষ্টিগানে পাহাড়ি মালকোষ
আমায় কেবল ভুলেই থাকো,
রাগ করলেই দোষ?
সকালবেলায় কাগজ পাতা,
বিকেল বেলায় বই
আমার চোখে জল দেখে হাত
ধরে বলিস "সই,
বেঁচে আছি এই পৃথিবীর
সকল সুবাস মেখে,
ভালোবাসার কুয়াশাজাল
তোমায় আমায় ঢেকে।"
এতো এতো সতীন নিয়ে ঘর
করেছি, তাই;
সারাজীবন, জীবন জীবন,
তোমায় যেন পাই।
ফারা দিবা
ক্রীতদাসী
একা আমি ছিলাম বেশ।
আজ যখন এলেই, আমার প্রশ্ন একটি-
এতদিন কোথায় ছিলে?
রাতের পর রাত যখন নির্ঘুম কাটিয়েছি একলা,
ক্যান্টিনের পাঁচ টাকার চায়ে চুমুক দিয়েছি বিস্বাদে,
ফুটপাতে পড়ে থাকা শিমুল মাড়িয়েছি নির্দ্বিধায় ।
টিক টিক শব্দ করা দেওয়াল ঘড়িটার গতি কি অদ্ভুত!
তা বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছি।
কখনো অজান্তে চোখের পাতায় তন্দ্রার ছাপ আসলেও,
কোনো এক আকস্মিক চিন্তায় সে দৌড়ে পালিয়েছে
বহুদূরে ।
এভাবে বেঁচে মরে যেচে কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলি।
কাটছিলো আমার সব ভালো, সব খারাপ।
কচ্ছপের বাচ্চাটা যেমন উত্তাল সমুদ্র ছেড়ে
অভিযোজিত হয় এক ছোট্ট একুরিয়ামে, আমিও
আমিও বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম আমার এ শীতনিদ্রা।
রংহীন সাদাকালো রংধনুর মতো পড়েছিল
এই দেহরূপী খাঁচা ।
যখন সব অযাচিত বিষয়গুলি মানিয়ে নিয়ে
ছিলাম সাম্যবস্থায়,
তুমি এলে ।
এলে আর দিয়ে গেলে সাত সাতটি রং।
আশারূপী বাক্যে এই খাঁচায় করতে চাইলে
প্রাণের সঞ্চার ।
কিন্তু তোমাকে কি করে বোঝাই, শুধু রং
থাকলেই পৃথিবী রঙিন করা যায় না, লাগে তুলি ও।
একুরিয়ামে বন্দি ওই প্রাণীটিকে যতই সমুদ্রদর্শন করাও না কেন
সে দিক হারাবেই।
চার দেয়ালে চুপ করে থাকা শূন্যতাই যার জীবনধারা
তার চোখে বাতাসের গতি ধরা পড়ে না।
জাগতিক বেজাগতিক ব্যর্থতাকে আলিঙ্গনরত
মহামায়া আমি।
শ্রান্ত বেলায় কান পেতে হাহাকার শোনা
নিশ্চুপ শ্রোতা আমি ।
আকাঙ্ক্ষা মুর্তিগুলোকে জলসমাধি দেওয়া এক
অপারগ অকৃতধী আমি।
আর তুমি কিনা, আমাকে কল্পনা করেছো বনমালীরূপে!
আমাকে দিয়েছোট ধনবান ধৈর্যবান এক সম্রাজ্ঞীর স্থান!
পারোও বটে।
তোমাকে নিষেধ করবো না,বলবো না চলে যেতে।
তবে আমার জন্য নিজেকে হারিয়ো না,
নিছক এক আশায় আগামীকে পায়ে মাড়িয়ো না।
আমি আদেশ করবো না,
কারন ক্রীতদাসেরা কখনো আদেশের ক্ষমতা রাখে না।
বেলাশেষে আমি যে এক পরবাসী,
এক মুক্ত সময়ের ক্রীতদাসী।।
অনেক সময় পার করে,তুমি এলে
অবশ্য না আসলেও পারতে।একা আমি ছিলাম বেশ।
আজ যখন এলেই, আমার প্রশ্ন একটি-
এতদিন কোথায় ছিলে?
রাতের পর রাত যখন নির্ঘুম কাটিয়েছি একলা,
ক্যান্টিনের পাঁচ টাকার চায়ে চুমুক দিয়েছি বিস্বাদে,
ফুটপাতে পড়ে থাকা শিমুল মাড়িয়েছি নির্দ্বিধায় ।
টিক টিক শব্দ করা দেওয়াল ঘড়িটার গতি কি অদ্ভুত!
তা বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছি।
কখনো অজান্তে চোখের পাতায় তন্দ্রার ছাপ আসলেও,
কোনো এক আকস্মিক চিন্তায় সে দৌড়ে পালিয়েছে
বহুদূরে ।
এভাবে বেঁচে মরে যেচে কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলি।
কাটছিলো আমার সব ভালো, সব খারাপ।
কচ্ছপের বাচ্চাটা যেমন উত্তাল সমুদ্র ছেড়ে
অভিযোজিত হয় এক ছোট্ট একুরিয়ামে, আমিও
আমিও বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম আমার এ শীতনিদ্রা।
রংহীন সাদাকালো রংধনুর মতো পড়েছিল
এই দেহরূপী খাঁচা ।
যখন সব অযাচিত বিষয়গুলি মানিয়ে নিয়ে
ছিলাম সাম্যবস্থায়,
তুমি এলে ।
এলে আর দিয়ে গেলে সাত সাতটি রং।
আশারূপী বাক্যে এই খাঁচায় করতে চাইলে
প্রাণের সঞ্চার ।
কিন্তু তোমাকে কি করে বোঝাই, শুধু রং
থাকলেই পৃথিবী রঙিন করা যায় না, লাগে তুলি ও।
একুরিয়ামে বন্দি ওই প্রাণীটিকে যতই সমুদ্রদর্শন করাও না কেন
সে দিক হারাবেই।
চার দেয়ালে চুপ করে থাকা শূন্যতাই যার জীবনধারা
তার চোখে বাতাসের গতি ধরা পড়ে না।
জাগতিক বেজাগতিক ব্যর্থতাকে আলিঙ্গনরত
মহামায়া আমি।
শ্রান্ত বেলায় কান পেতে হাহাকার শোনা
নিশ্চুপ শ্রোতা আমি ।
আকাঙ্ক্ষা মুর্তিগুলোকে জলসমাধি দেওয়া এক
অপারগ অকৃতধী আমি।
আর তুমি কিনা, আমাকে কল্পনা করেছো বনমালীরূপে!
আমাকে দিয়েছোট ধনবান ধৈর্যবান এক সম্রাজ্ঞীর স্থান!
পারোও বটে।
তোমাকে নিষেধ করবো না,বলবো না চলে যেতে।
তবে আমার জন্য নিজেকে হারিয়ো না,
নিছক এক আশায় আগামীকে পায়ে মাড়িয়ো না।
আমি আদেশ করবো না,
কারন ক্রীতদাসেরা কখনো আদেশের ক্ষমতা রাখে না।
বেলাশেষে আমি যে এক পরবাসী,
এক মুক্ত সময়ের ক্রীতদাসী।।
আফরোজা অদিতি
নিছক পাগলামি
দুঃখের কাঁকন বাজে
সুখ না থাকে হৃদয়ে
সাগরজলে পূর্ণ হবে চোখের আধার!
নদীর মতো নিরন্তর
মননে না বাজে বাঁশি
সুরহীন হৃদমাঝার হবে শূন্য বৃন্দাবন!
আকাশ ভরা মেঘে
শতধা বিভক্ত সময়
তুমি ছাড়া সে যে প্রেমহীন দগ্ধদুপুর!
ভালোবাসা হয় কৃপন
নিছক পাগলামি ভেবে
জীবনবাজি মৃত্যুর সঙ্গে হবে গাঁটছড়া!
সুখ না থাকে হৃদয়ে
সাগরজলে পূর্ণ হবে চোখের আধার!
নদীর মতো নিরন্তর
মননে না বাজে বাঁশি
সুরহীন হৃদমাঝার হবে শূন্য বৃন্দাবন!
আকাশ ভরা মেঘে
শতধা বিভক্ত সময়
তুমি ছাড়া সে যে প্রেমহীন দগ্ধদুপুর!
ভালোবাসা হয় কৃপন
নিছক পাগলামি ভেবে
জীবনবাজি মৃত্যুর সঙ্গে হবে গাঁটছড়া!
চন্দনকৃষ্ণ পাল
জল কল্লোলিত দিনে বলি
তুমুল কলধ্বনি শুনে শুনে বিমোহিত হই
তোমার অঢেল জল নেমে এসে ভরাট এ তট
অনেকেই আনন্দিত, তাদের যৌবন এসে ঢেউ দিয়ে যায়
গলায় আনন্দ ধ্বনি, অন্যকে আহবান করে ক্লান্ত হয়
কেউ সাথী পায়, কারো সুরে ক্লান্তির রেশ-
তাদের জন্য দুঃখ নিবেদন করি,
আহবান করি অপেক্ষার,
সময় তো আছে আরো, একটু ক্লান্তি ঝেড়ে পুনরায়
নাম গানে, নিবেদনে নিজেকে রাখলে জানি
আনন্দ ডানা মেলে আসতেও পারে...
ভবিতব্য জানি না তো সম্ভাব্যতা যাচাই করে বলা যায়
সূর্যটা দিতে পারে আলো
কেটে যেতে পারে মেঘ মালা
মন্দ্রস্বরে ডেকে ডেকে সঙ্গী তুমি পেয়ে গেলে
ধন্যবাদ বলার মতো সময় হবে তো?
কলধ্বনী বিমোহিত করে, সঙ্গে থাকে তোমার আনন্দ গান
ঘোলাজলে সাঁতার কাটলে কারো
অবয়ব পড়ে না তো চোখে
মাছ শিকার তাই নিয়তি নির্ভর বলে জানি-
এ জল কল্লোলিত দিনে তোমাদের আহবান করি
আনন্দে মগ্ন থাকো, ভুলে থাকো জাগতিক সব বোঝাপড়া,
আমি আছি তোমাদের সাথে।
তুমুল কলধ্বনি শুনে শুনে বিমোহিত হই
তোমার অঢেল জল নেমে এসে ভরাট এ তট
অনেকেই আনন্দিত, তাদের যৌবন এসে ঢেউ দিয়ে যায়
গলায় আনন্দ ধ্বনি, অন্যকে আহবান করে ক্লান্ত হয়
কেউ সাথী পায়, কারো সুরে ক্লান্তির রেশ-
তাদের জন্য দুঃখ নিবেদন করি,
আহবান করি অপেক্ষার,
সময় তো আছে আরো, একটু ক্লান্তি ঝেড়ে পুনরায়
নাম গানে, নিবেদনে নিজেকে রাখলে জানি
আনন্দ ডানা মেলে আসতেও পারে...
ভবিতব্য জানি না তো সম্ভাব্যতা যাচাই করে বলা যায়
সূর্যটা দিতে পারে আলো
কেটে যেতে পারে মেঘ মালা
মন্দ্রস্বরে ডেকে ডেকে সঙ্গী তুমি পেয়ে গেলে
ধন্যবাদ বলার মতো সময় হবে তো?
কলধ্বনী বিমোহিত করে, সঙ্গে থাকে তোমার আনন্দ গান
ঘোলাজলে সাঁতার কাটলে কারো
অবয়ব পড়ে না তো চোখে
মাছ শিকার তাই নিয়তি নির্ভর বলে জানি-
এ জল কল্লোলিত দিনে তোমাদের আহবান করি
আনন্দে মগ্ন থাকো, ভুলে থাকো জাগতিক সব বোঝাপড়া,
আমি আছি তোমাদের সাথে।
অপর্ণা বসু
প্রত্নতাত্ত্বিক
আবার খনন হলে
খুঁজে পাবো গতজন্ম বাসভূমি
ইঁদারা ও শস্যগোলা
ফেলে আসা ঘরকন্না
অবহেলিত শহরের ঈষৎ মুছে
যাওয়া
রাস্তাঘাট স্নানাগার
ভেসে উঠবে ক্ষয়ে যাওয়া
সম্পর্ক
আবছা ভালোবাসা
ধূলোমাখা অভিমান
অতীতের গন্ধ আনবে মলিন
মুদ্রা
কঙ্কালের হাড়ে লেগে থাকবে
নীলাভ বিশ্বাসঘাতকতা
ওরা ভয়ংকর মহামারীর গল্প
শোনাবে
এভাবেই প্রতিটি খননে
জেগে উঠবে ইতিহাস।
তনুশ্রী মল্লিক
ছুঁয়ে থাকা বিস্মরণ
তনুশ্রী মল্লিক
অপেক্ষায় পেরিয়ে যাক
মিনিটের পালস,
অথচ কেউ সেরকম কথা রাখেনা,
এও একরকম মৌতাত
আসলে জড়িয়ে থাকা সময়
ও তার আপেক্ষিকতাবাদের এক জ্বলন্ত নমুনা-
তবু আশ্চর্য ভাবে মানুষ
স্থির বিশ্বাসকে জারিয়ে বেঁচে থাকে -
বাঁচিয়ে রাখে তার আত্মার
ভেতর
ঘুমিয়ে থাকা সোনার কাঠি
ও রূপোর কাঠির ছুঁয়ে থাকা বিস্মরণকে-
তবুও আয়না সরে গেলে দেখি
পারদের নীচে গভীর অন্ধকার।
অপেক্ষায় বসে থাকা মুখ
বুঝে যায় আয়না আর প্রতিফলন
করেনা।
রাজীব দত্ত
রুটি ও বিপ্লব
রুটির মত চামড়া
মাথার উপরের সূর্য
রুটির জন্যে বিপ্লব জানি
অন্ধকারের পণ্য
আসমুদ্র রূঢ় অক্ষর
তোমাতেই সব অনন্য
সূর্য থেকে আংটি দেব
চাঁদ থেকে চাদর
গায়ের চামড়া খুলে ফেললে
পাবে -
নিশ্চিত রুটির আদর ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)