এই সংখ্যার লেখকসূচি : ব্রতী মুখোপাধ্যায়, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, পিনাকী দত্ত গুপ্ত, বৈশাখী চক্রবর্তী, সৌগত রাণা, অমিত চক্রবর্তী, তুলসীদাস ভট্টাচার্য, গৌতম কুমার গুপ্ত, উমা মাহাতো, দেবার্ঘ সেন, চিরশ্রী দেবনাথ, স্বপ্না কর, পিয়ালী বসু ঘোষ, সুজালো যশ, নাসির ওয়াদেন, তুলসী কর্মকার, শাশ্বতী সরকার, রিভু চট্টোপাধ্যায়, কুমকুম বৈদ্য ও ইন্দ্রাণী সরকার ।
১০ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
এই সংখ্যার লেখকসূচি : ব্রতী মুখোপাধ্যায়, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, পিনাকী দত্ত গুপ্ত, বৈশাখী চক্রবর্তী, সৌগত রাণা, অমিত চক্রবর্তী, তুলসীদাস ভট্টাচার্য, গৌতম কুমার গুপ্ত, উমা মাহাতো, দেবার্ঘ সেন, চিরশ্রী দেবনাথ, স্বপ্না কর, পিয়ালী বসু ঘোষ, সুজালো যশ, নাসির ওয়াদেন, তুলসী কর্মকার, শাশ্বতী সরকার, রিভু চট্টোপাধ্যায়, কুমকুম বৈদ্য ও ইন্দ্রাণী সরকার ।
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
একতারা হাতে নিলেই
একতারা হাতে নিলেই হতে
পারি
বাউল
একতারা হাতে নিলেই
বাউল
না হতেও পারি
একতারা হাতে নিয়ে
চাঁদের দিকে মেলে ধরে
নাচছি
ধন্য ধন্য ধন্য ধন্য
বাজছে
চাঁদ আমায় হাড়ে হাড়ে
চেনে
আখড়ায় ভিড়
নাচছি
নাচতে নাচতে
বগল থেকে খসে ইস্পাতের
টুকরো
মঞ্চে আছড়ে পড়ল
ইস্পাতের টুকরো
ছেঁড়া বোষ্টুমি চেঁচিয়ে
উঠল,
ছুরি! ছুরি! ছুরি!
একতারা
একতারা হাতে নিলেই
বাউল
বলা যায় না
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
অপেক্ষা
ম্যাজিক ভালো লাগে তবে
জানি তারও পিছে বিজ্ঞান থাকে
বিজ্ঞান হাল ছেড়ে নতজানু
হলে তারপর মিরাকল ডাকি
ব্যাখ্যা নেই জানি ভালোবাসা
কবেই বা পরোয়া করেছে তার
তুমি ভালো হলে এই আমি
হাঁটু মুড়ে তারও কাছে বসে যাব বাবা
টোটকা যে যেমন ভালোবেসে
বলে যতকিছু দুনিয়ায় ইগো ঝেড়ে ফেলে
তার কাছে হাত পাতি বলে
দাও বলে দাও বাবা কিসে ভালো হবে বল
আমাদের ভালো থাকা সব
ডাক খোঁজ তোমাকেই দিনরাত প্রদক্ষিণ
ফিরে এস সংসারে ফিরে
এস আমাদের পাশে যাদের সঙ্গ ছাড়া থাকনি কখনো
তুমি খুব আলুথালু হতে
আমাদের টোকা লাগে বুঝি দুই হাতে তুলে নিতে ভার
আমাদের ও বড় হওয়া হয়
নি কখনো প্রবল আটকে ঝড় তুমি আছ বলে
এত যদি রোদ বৃষ্টি আজ
তুমি কেন বিছানায় মিশে শুয়ে আছ বাবা
স্বভাব সিদ্ধ বলে ওঠ,
"বুঝে যাবি সব এত বড় হোসনি এখনও"
পিনাকী দত্ত গুপ্ত
তার কাছে ঋণী
এবং তখনো আমি তার কাছে
ঋণী।
খানিকটা ভুলে গেছি, খানিক
বুঝিনি।
যদিও দেহের গন্ধ আজও
লেগে আছে,
আগোছালো বসতির আনাচে
কানাচে।
রূপশালী ধানি জমি, এক
ফালি চাঁদে
যদিও বেঁধেছি বাসা গোপনে
অবাধে,
যদিও গভীর ঘুমে আসে বিনোদিনী,
এবং তখনো আমি তার কাছে
ঋণী।।
এখন খালের ধারে শীত নেমে
এলে,
আগুন পোহাই একা অচেনা
হেঁসেলে,
কুয়াশারা উঁকি দেয়
নিকানো উঠানে,
যদিও অধরা কারা ছায়ারাই
জানে।
যদিও খুজেছি সব ওলিগলি
পথে,
হয়ত ছিলাম নিমরাজি সহমতে,
অকাতরে দিয়ে যেতে যদিও
শিখিনি,
এবং তখনো আমি তার কাছে
ঋণী।।
বৈশাখী চক্রবর্তী
খোঁজ
কাবেরীর জলে অরণ্যহীন ভেসে যায় শব্দেরা
অস্পষ্ট অবয়ব নিয়ে অকালে
ডুবে যায় নিঃসঙ্গ ছায়া
মহীরুহের পাঠ শেষে নিঃশব্দ
শ্রমণ
অতি ধীর পায়ে পার হয়
হেমন্তজ্যোৎস্নার ঘোর বনবাস
বিলুপ্ত অশ্বের ডানায়
আঁকা যে উত্তরের বন তার সামিয়ানা থেকে নেমে এসে পাশে বসে মৌন ত্রিকাল
একে একে খুলে পড়ে আনন্দের
অনন্ত গ্রন্থিসমূহ
কমলা আলোর আভা জাগে
রণক্লান্ত নির্জন বলিরেখায়
মুখের পাশে মুখ
তার পাশে অজস্র পিঙ্গল
সুখ
প্রেমে ও কুয়াশায়
আমৃত্যু এক বোষ্টমী নদীর
খোঁজে হেঁটে চলে
তৃষিত শব্দেরা।
সৌগত রাণা কবিয়াল
ঠোঁটে গভীরে আত্মহত্যার ফর্মুলা..
মানুষের শ্লোগানটা আজও
ঠিকঠাক শেখা হলো না...!
কতো কতো বীরাচারী হাতের
তেলোতে সুখকে ভিক্ষা করতে করতে
নিজ পায়ের ধুলোবালির
নিলাম তুললো...;
ওরা এখন নতুন করে বাঁচার
কথা বলছে..
হাহা..হাহা...
মৃত শকুনের দল কিনা মানুষ
বাঁচাবে...
হাহা..হাহা....;
ওরা মাটির রঙ দেখেনি..
দেশ থেকে বিদেশ বিভূঁইয়ে
পাচার হয়ে ফুটপাতের রোদে পোড়েনি..
যে সৈনিক জীবনে কখনোই
যুদ্ধ দেখলো না..
সে-ই কিনা সেনাপতি হলো..????
মানুষে নুনের দরে বিকোচ্ছে
মনুষ্যত্ব..
দাম যার যেমন সুবিধে....;;
কি দারুণ আত্নহত্যাও
অপঘাত হয়ে গেলো কাগজে কাগজে..;
বাতাস বন্ধ করে একটা
গ্রহ চুপ করে শুধু মুক্তিপণের পাপ যোগার করতে,
মানুষের চিবুকে সেঁটে
দিলো অদৃশ্য রক্তের দাগ...!
নিয়ম করে এখন দু-বেলা
ভাত- ডাল-ডিম....
খুব বেশি হলে মুখোশ..;;
মুখোমুখি কেদারায় বসে
দেশ ভাগের মতো..
মানুষের আত্মার ভাগাভাগি
হয়ে গেলো রাতের গভীরে..
শহর তখন ঘুমিয়ে ছিলো
শরীর জড়িয়ে....;;
একটা দিন সময় হবে অবেলা..??
শ্রেফ একটা দিন...
একটা শিশিরে ভোর..
একটা একাকী দুপুর..
একটা স্বয়ম্বর বিকেল..
একটা ফুটফুটে যৌবন সন্ধ্যা...
একটা দুই কুল ভাসানো জোছনার রাত...
একটা মধ্যরাতের প্রেমের
কবিতা..
বুক ভরে একটা নতুন দিনের
সূর্যের ঘ্রাণের জন্য সুখী অপেক্ষা...????
একটা দিন হবে, অবেলা..?
একটা দিন...
তাহলে নিশ্চিত আমি শোধ
করে দেবো আমায় নিয়ে তোমাদের অশ্লীল সব ভাবনার ঋণ...
মাত্রই তো একটা দিন..
একটা দিন.....;;;
অমিত চক্রবর্তী
এসো,চিনিয়ে দিই
একে একে সব দেখা শেষে দুলছে বাতাস।
এসো চিনিয়ে দিই, ওইটি
কাছাকাছি ঝর্ণা,
পাশাপাশি বসলে ভারী সুন্দর
দেখায়।
কিন্ত তুমি তো জানো,
কিছুই স্থির নয় আর,
কিছুই স্থির নেই নিস্তরঙ্গ
পাহাড়পুরে।
এখন মাথায় সর্বনাশের
জাল বিছানো
এখন সরল মানুষগুলো ঘূর্ণিপাকে
বেসামাল
রুটি, রোজগার, দাবিদাওয়ায়
মানুষগুলো বেসামাল।
পেঁচিয়ে ধরে নাভিশ্বাস
অসময়ের আষ্টেপৃষ্ঠে
শহরজুড়ে এখন শুধু পাকদন্ডী
পথ।
এসো দেখিয়ে দিই
কেমন করে নির্ভাবনা মাতাল
করে প্রসাধনে
কেমন করে বিষন্নতা পদ্য
লেখে নিরাশ ধ্যানে।
কিন্ত তুমি তো জানো,
কিছুই স্থির নেই
কিছুই স্থির নয় আর
আলস্যে যেগুলি সহজ সবুজ
ধ্বংসের মুখে বিলাসী
প্রলাপ, মরুতৃষ্ণায় জলের মায়া।
তাই থামাও যদি লুকোচুরি, সরাও যদি একার দুঃখ, একার বিষয়
শরীর ফাটল জুড়বে আবার,
রোগ নিরাময় পুরোপুরি
চেতনা পোড়ার কালো ধোঁয়া
উপশমে টাটকা হাওয়া।
একে একে সব দেখা শেষে
দুলছে বাতাস।
প্রতীক্ষার দুরুদুরু
শ্বাস হাটে, মাঠে, কারখানায়
মধ্যবিত্ত পাতাবাহারে
ঝড়ের ফিসফাস ইঙ্গিত।
তুমি দেখি জানালা খুলে
দিয়েছ, উন্মুক্ত,
উদ্ভাসে ফুঁ দিচ্ছ শাঁখে,
গরমের অসহ্য বেলা তাহলে
স্নিগ্ধ হোলো বলে।
তুলসীদাস ভট্টাচার্য
ঈশ্বর ও আমি
সবুজ ছায়ার নিচে যে নীরবতা
সেখানে খানিক জিরিয়ে
নেয় ঈশ্বর
আমিও কিছু সময়
বসে থাকি ঈশ্বরের মুখোমুখি
কৃত্রিমতা সরিয়ে নেমে
আসে আকাশ
আমাদের মাঝখানে ছায়ার
ভেতর
ইষ্টদেবতার বীজমন্ত্র
স্মরণ করে
জল ঢালি শেকড়ে শেকড়ে
স্তন বেয়ে দুধ নেমে আসে
সমাধিস্থ দেহ লীন হতে
হতে
মিলিয়ে যায় আকাশের শূন্যতায়
।
গৌতম কুমার গুপ্ত
ইত্যাদি
বিহ্বলে কার স্পর্শ কার
অভিমান
ছায়া নয় একটি অভিন্ন
হাতের কররেখা মাত্র
শাখা প্রশাখায় পিঁউ কাঁহা
বৃতি ও সবুজ
বলো কে রাখে হিসেব মোহের
সর্বনাম?
উহ্য হয়ে গেলে হাওয়াও
বুঝে নেয় বীতরাগ
উল্লেখ থাকে আপাত অতীত
স্মরণীয় ক্রম
মেধার অন্বয়ে কার বলো
ব্যক্তিগত শলা?
আখ্যাত করো না তাকে দুঃসময়
সর্বনাশ না দিয়ে আত্মবোধনে
যাও বরং
দেখো সূচিপত্র লেখা হয়ে
গেলে
একে একে উঠে যাবে তালিকায়
নাম
যে নামে পাখি ডাকে পাতা
নড়ে জল পড়ে
উমা মাহাতো
গোধূলি
সান্ধ্য শাঁখের ডাকে গো-ক্ষুরে নূপুর, দিনবদলের
মায়াগান..
সেও এক পৃথিবী, হারিয়ে গেছে বহু বহু দিন।
রাখালের রোমন্থনে কিছুটা
গলে গেলে কংক্রিট,
নগরের পথে উঠে আসে চারণভূমি,
বাঁশিওয়ালা হ্যামলিন।
সেতু ঝুলে থাকে।সংযোগ
ধোঁয়াশার।
সব আলো জ্বলে ওঠে একে
একে। মর্মরিত হলুদ, পৌষের মাস, গোলাভরা ধান।
ঘর ও ঘরে ফেরার মাঝে
অনন্ত গোধুলি-জল,
নীলকণ্ঠ রাত জাগে কৃষকের
গান।
রাত বড়ো গভীর অসুখ।অনন্ত
মহামারী।
সংক্রমণ জেনেও, প্রতিবাদে
দিনশেষে বিদ্রোহ ছুঁতে চাওয়া….
এসো সুসংবাদ, এসো প্রতিষেধক,প্রাত্যহিক
বীজবোনা দিন।
দেবার্ঘ সেন
আমি যাই
চারিদিকে আকীর্ণ ধূসরতা।
ন্যুব্জ পৃথিবী, তোমাদের অঙ্ক শিরদাঁড়াহীন
মেঘেরা দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে , অপেক্ষার মরুতে আমার।
আর বসে থাকা নেই
আমার আর হেঁটে যাওয়া নেই
কৈফিয়ত চ্যুত দ্বিতীয় হামাগুড়ি
উদার পলকে বিতরণ করো অক্ষর ভাগশেষ।
আমি যাই, অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের মত
দীর্ঘশ্বাসের বৈচিত্র্যময়তায়
সকল শাস্তিকে রূপান্তর করে দাও
শুধু আদরে আর আদরে...
চিরশ্রী দেবনাথ
অস্থিরতা
তুমি এলে, কিছু ছটফটানি,
ডানার আস্তে সরে যাওয়া
লিখে রাখলাম
অবাধ্য ঠিকানার কষ্ট, লালচে অ্যাসিড
ভেবেছিলাম সেরে উঠব,
প্রত্যেকবারের মতো
অনেকদিন হলো, ঘুম হারিয়ে
ফেলেছি,
ভোরের তন্দ্রা ছেড়ে আমি
জীবন্ত দিন ঘুমের মতো কাটিয়ে দিই।
জোর করে কবিতা হয় না,
তাই সাদা পাতার কাছে চুপচাপ বসি
শিশির খসার শব্দ শুনতে
পেলে, বুঝতে পারি নিস্তব্ধতা কতটা প্রখর
স্বপ্না কর
অবশেষে
খুলে দিচ্ছি ভ্রান্তগিঁট
গুলো
ছেড়ে দিচ্ছি চিন্তা অপার
নিরাশার বাকল খসছে
মৃত্যুকে চিনেছি এবার।
এ হাওয়ায় ভেসে গেছে মন
ও মাটিতে খসেছে স্বপ্নবীজ
জল, আলো পরশ দিও
ফুটতে পারে মনসীজ।
পিয়ালী বসু ঘোষ
ও নদী রে ---------
অনেক রাতে ঘুম না এলে
নদীপারের জীবন আসে আধখোলা চোখের পাতায় |
তিতাসের বুকে চর জেগে
ওঠার কষ্টকল্পনায়
রাধাচরণ যেমন দিনে দুপুরে
দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো,
তেমনই কোনো স্বপ্ন আসে
চোখে |
স্রোতহারা নদীর মতো ছ্যাৎ
করে ওঠে বুকের পাটাতন |
কাউকে বোঝানো যায়না নিরবলম্ব
সেই রুদ্ধ তরলতা |
দেখানো যায়না তন্বী নদীর
চরে অহেতুক জুড়ে বসা
নগ্ন ভিটেদের জীবনচরিত
|
অগত্যা উঠে বসা | চোখে
মুখে জল দিতেই ছেলেবেলার ভাগীরথী
ডাগর চোখে বয়ে যায় গম্ভীর
নিরুৎসবের মতো |
দাঁড় ও জলের পারস্পরিক
বোঝাপড়ায় মাঝি যে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তোলে
সে শব্দ সে কি আর যন্ত্রচালিত
পানসি পারে তবু.... এই তো জীবন... নান্দনিক বৈচিত্র নাই থাক
কিছু তো আছে.... কিংবা
হয়তো ছিলো... কখনো |
অজানা আশঙ্কায় শান্ত
হয়ে যায় মন| দূর ঘাটে ফেরি বন্ধ হয়েছে |
নদী আরও আরও বেশী করে
চাইছে জীবন..... অথচ জানি তার মন ভালো নেই|
বর্ষায় যে নদী ফুঁফিয়ে
কেঁদে ওঠে, বুকে চর ছড়িয়ে গেলে সে কাঁদেনা কেন?
নদী কি মানুষ?
সুজালো যশ
সাব-অলর্টানের বাগানে
পাথরের রুটি
ছাড়া আর কিছুই নেই
বেদনার জুস হাজারো রং
এ মিশে
যেতেই
হৃদয়ের ডানা বদলে যায়
রিয়ালিজমের দোকানে...
যেখানে মাদুরে মোড়ানো
স্বভাব তুমুল কোলাহলে
উবে গেছে বেকুবের ভিড়ে
তবুও অনর্থক সংলাপের
লাইনে বৈঠকখানার সুর বেজে ওঠে
ভাদ্র মাসের তুফানে।
নাসির ওয়াদেন / দুটি কবিতা
পদচিহ্ন
ওদের রেখে যাওয়া ধুলো মেখে ধূসর বিকেলে
ফুটপাতে বসে জোৎস্না জলে গন্ধ ভেজায়
আমার হৃদয়ে অনন্তর কৃষ্ণের বাঁশি বাজে
নিধুবনে উঁকি মারে, হানা দেয় তারাদের দলে
পলেস্তারা-ঘুম থেকে জেগে ওঠে আলোর পাঁচিল
বালিশের নিচে আদরেরা ঘুম বিছিয়ে শোয়
এক চামচ নিশুতি রাতের ঘোলা জলে
বসন্তের প্রথম শীতলপাটি বোনা, সিঁদুরে আঁচিল
ভালবাসা নেই, চিহ্নের গায়ে লালকরুণার দাগ
জীবন্ত লাশের বুকে বরফেআগুন জ্বলে, সংরাগ
এক প্রাগৈতিহাসিক চিঠি
একটি শব্দ নিয়ে তোমার সাথে আমার দ্বন্দ্ব
চিরকাল দ্বিমত আর শীতকালীন পোড়া পোড়া গন্ধ
বুক ছুঁয়ে ঝরে যাওয়া বিষন্নতার কোমল স্বাদে বিভোর
সুখি ঝড় এসে থেমে গেছে বারান্দায়, নীচের করিডোর
বুনো মেঘ লুকোচুরি রোদ বেচতে বেচতে নিঃশ্বাসের ছাদ
হাসির বাতাস ছোঁয়্ শিশির ভেজা ঘাসে, শরীরে
উগ্র পারফিউম বিষন্ন সুর তাল লয় নিয়ে ধীরে
ধীরে বেঁচে ফেলে বাঁচার ইচ্ছে, আহ্লাদ
সারারাত ধূমায়িত বাতাসে নিবিষ্ট শব্দের কাছে ঋণী
হয়ে আছে অক্ষরমালা , চিঠির উত্তর পাঠালাম নন্দিনী
তুলসী কর্মকার / দুটি কবিতা
লিপিবদ্ধ সময়
ইঁট রঙা বিকেল বয়ে যায়
যতটুকু আলো আছে
মেখে নেওয়া যাক
অন্ধকার নামবে ক্ষণিক
পর
জেগে উঠবে পেঁচা
চলবে রাতচোরার খাদ্য
লড়াই
পুষ্টি হবে বৃদ্ধি হবে
প্রাণ বাঁচবে নয়তো জীবন
চলে যাবে
সময়ের সাথে আপোস করে
কিছু জীব
সাপ ব্যাঙ শীত ঘুমে
চাঁদের আলোয় মধু ভাগ
হয়
নেড়ি ঘুরে ক্ষুধার জ্বালায়
ক্রমাগত দিনরাত হয়
মেনে নেয় অনান্য জীব
মানুষের হাতে টর্চ
চলেছে টাকার সন্ধানে
খাদ্য ও মর্যাদা আজ টাকাতে
লুকানো
আছে চুক্তিবদ্ধ গদি
মেয়াদ শেষে মূল্য বৃদ্ধি
হয়
ক্রমশ অচল হয় ছোট মুদ্রা
দরিদ্র হতে থাকে এক শ্রেণি
বক্তব্য চলে শুরু হয়
গদি লড়াই
এসো লাগাম টানি
খাদ্য ও মর্যাদা ফিরে
যাক নিজ জায়গায়
মনোনিবেশ
এক সময়
মন আকাশে উড়তে উড়তে ডানা
খসিয়ে দেয়
এক সময়
স্বপ্ন রানওয়ে খুঁজতে
খুঁজতে সকাল দেখতে পায়
এক সময়
মন স্বপ্ন আষ্টেপৃষ্টে
বাঁধা সমান্তরাল রেখা
এক সময়
সবুজ চলনে স্ত্রী
লাল বাতিতে সন্তান
জীবন ড্রাইভার সিটে তাসেদের
দাস হয়ে যায়...
শাশ্বতী সরকার
প্রবাস
বকযন্ত্রে কেন জেগে ওঠো
দারুণ সময়
গানের মতন অন্ধকার
আকাশে আকাশ শুধু সেরামিক
বুনোকুলফল
নাহয় সামান্য বৃষ্টি
এনো
আজ পুরনো এই অন্ধকার
— অতিধীরে জ্বলে থাকে
কে আর এখন জেগে অক্ষক্রীড়া
করে
শুধু সুরেসুরে পথ বেঁকে
যায়
ঋভু চট্টোপাধ্যায়
অস্থিরতা
একটা গোটা মুহূর্তের পিঠের ওপর পিঠ চেপে
যে
মানুষ অক্ষর জন্ম দিয়েছে তার চায়ের
দোকানেও
অশরীরী স্রোত।
নিজেকে
এতদিনেও মুখোশ না মনে হলেও
পড়ে
থাকা খড় কাঠ বালি রেখে দিব্যি
চোখের
সামনে ডুবে যাওয়া দেখছি।
কুমকুম বৈদ্য
বুক ভরা নদী
একটা নদী ছিল আঁকা বাঁকা
আর তাতে ছিল সমুদ্রের
ঢেউ
আর তার বুকের নুড়ি গুলো
আসলে ছিল ভিসুভিয়াসের
কণা
জলন্ত ঢেউ এসে মাঝে মধ্য়ে
আমাকে আকন্ঠ পোড়ায়
শরীর আমার কাঁচা কাঠ
পোড়া
জলপাই গন্ধ বিলায়
এ নদী সাগরে মেলেনি
মরুভূমি সঙ্গমস্থল পিপাসার্ত
মোহনা
সমুদ্রে ভেসে আসা পোড়া
চিতার চন্দন কাঠ
সহমরণের পূণ্য় ভাগ
যেচে যায়
নববধু ঢেউয়ে চড়ে কড়ি
খেলে যায়
ইন্দ্রাণী সরকার
আবার নতুন করে
মিষ্টি চোখের তারায় লুকোনো ইচ্ছেগুলো
ক্রমে ক্রমে ফুলের মত পাপড়ি মেলে দেয়,
তখন তুমি সামনে এসে দাঁড়াও একটু হেসে।
তোমার প্রেম পেয়েছে সেই আগেকার মত
যখন তুমি একটুর জন্য এসেছিলে গেলবার ।
তুমি বললে, তোমার হতে চাই তা সত্যি ।
রাঙা গোধূলির আলো ফিকে হয়ে আসে,
তোমার চোখ যেন প্রবাল দ্বীপের মত গাঢ় ।
আঁধার নামে একটু একটু করে ঝাউ বনে,
তোমার হাতে আমার হাত, চোখে চোখ,
না বলা কথাগুলো বাঁশিতে বাজতে থাকে,
এভাবেই বুঝি ভালোবাসা নতুন করে হয় ।।
১০ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা ।। ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
জয়াশিস ঘোষ
ধান বোনা শেষ হলে
ধান বোনা শেষ হলে পাক দেয়
শকুনের দল
নদী জানে কবে তার শুকিয়েছে
বুক ভরা জল
জলের ভেতর থেকে কান্নার
স্বর গিলে খায়
কারা যেন ফিসফিস কথা
বলে রাতের হাওয়ায়
চলে গেছে ঘর দোর পূর্নিমা
রাতে দিয়ে ফাঁকি
মেয়ের ওড়না ওড়ে বটগাছে,
কালবৈশাখী
তবুও তো ক্ষিদে পায়,
জমির বসন চলে যায়
নায়িকার লিপস্টিক শহরের
মাসের খাতায়
খাতা খোলে ফুটপাথে শপিং
মলের গেটে ভিড়
শূন্য ক্ষেতের মাঝে কৃষকের
মুঠো অস্থির
তবুও দরজা খোলে কাঁকড়ের
ঋণ বাড়ে ভাতে
রক্ত ও ঘাম মেশে আমাদের
সুগন্ধী পাতে
যদি তারা মাঠ ছেড়ে দলে
দলে বসে রাস্তায়
কত ধান পড়ে থাকে শাসকের
লাভের খাতায়?
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এক কৃষকের মৃত্যু
ঢেকে দাও, ওর দেহ ঢেকে
দাও, ফসলে ও অভিমানে
শেষ স্নান ওর হোলো সমাপন
রাজার জল-কামানে।
সেও এসেছিল রাজার দুয়ারে
ন্যায্য চাহিদা নিয়ে
রাজার পেয়াদা মিটিয়েছে
সাধ মৃত্যু আখর দিয়ে।
ভুখা মানুষের ঢেউয়ে উত্তাল
রাজপথ রাজধানী
অন্নদাতারা হেলায় সইছে
মৃত্যুর হাতছানি।
দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে
যায় ঘুরে দাঁড়ানই ঠিক
বুঝে গেছে এই সারকথা
তাই ওরা আজ নির্ভীক।
আল্লাহ্ চাই না, যীশুও
চাই না, চাই না কৃষ্ণ রাম
যে শস্য ফলে আমার শোণিতে,
চাই তার ঠিক দাম।
আমার জমিতে ফসল ফলাব
আমার ইচ্ছেমতো
এইটুকু চেয়ে মাটির মানুষ
পায়ে পায়ে সংহত।
অত্যাচারীরা চিরদিন ভীতু,
তাই তো অত্যাচার
প্রাণ যায় যাক, দেব না
ফসল, মাটির অঙ্গীকার।
একটা কৃষক চলে গেলে আসে
লক্ষ কৃষক ভাই
আমার মাটিতে, আমার শস্যে,
আমি অধিকার চাই।
গাঁয়ে এক বুড়ি অনেক আশায়
ছিল পথ চেয়ে তারই
টলটল চোখে ফুঁপিয়ে বলেছে
'আমি শহীদের নারী'।
ও শাসক তোর পোশাকে লাগছে
রক্তের লাল ছিটে
রাত ফুরোলেই হিসাব চাইবে
নিক্তিতে নিক্তিতে।
যে জমিতে আজ ক্ষিদে মেটাবার
শস্যটুকুও নাই
জ্বলুক আগুন, ক্ষেতের
ফসল সব পুড়ে হোক ছাই।
6You, Ruma Saha
Pompa and 4 others
5 comments
Like
Comment
বিজয় ঘোষ
মনরে তুই কৃষি কাজ জানিস না
১
আমাদের কয়েক টুকরো পৃথিবী,সূচ্যগ্র
ভূমি কৃষকের।
২
ধান নেই,তাই ধনী নই।কৃষকের
ধান আছে তবু দীনহীন।
৩
তুই মানে?ছোটলোক!ধান
জন্মাস!আমি পায়েস খাই।
৪
আয় তোতে আমাতে গলাগলি
ধরে কাঁদি,আমরা ফসল ফলাই,টাকা ফলাই না।
চিরশ্রী দেবনাথ
মাটির কান্না
কৃষকদের আন্দোলন হচ্ছে
রাজধানী বন্ধ, রাজপথে
অভিজাত গাড়ি
মাটি আর আগুনের ধক ধক
দেখে
দুঃস্বপ্নের ক্ষুধা জ্বলে
ওঠে
এতো অপরূপ আঁখি আমার
দেশের
অথচ জলে ভরা, একটি দিনও
সে না কেঁদে থাকেনি