এই সংখ্যার লেখকসূচি : চয়ন ভৌমিক, শৌনক দত্ত, প্রণব বসু রায়, সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ চন্দ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বতী সরকার (টালিগঞ্জ), তুলসীদাস ভট্টাচার্য, নিলয় গোস্বামী, সুবীর সরকার, আভা সরকার মন্ডল, স্নেহাশিস মুখার্জী,, মাজহার জীবন, রফিক জিবরান, তুলসী কর্মকার, দিগন্ত রায়, প্রীতি মিত্র, কুমকুম বৈদ্য, অপর্ণা বসু, চন্দনকৃষ্ণ পাল, সঞ্জয় সোম, ইন্দ্রাণী সরকার, মলয় সরকার, মনোজিৎ কুমার দাস ও দেবলীনা দে ।
চয়ন ভৌমিক
স্বর্গাদপি
কী সুন্দর ও শান্তরঙের
এই ছবি।
দাগহীন,লোভ ও অপমানের
কামড়
উপেক্ষা করে এই চিত্র,
স্থির
দাঁড়িয়ে আছে, পৃথিবীর
সমস্ত শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে।
শিল্পের কারুকাজ, এক
আশ্চর্য সম্ভাষণ ...
এই সত্য এড়িয়ে, এত হিংসাশ্রয়,
বন্দুক বিক্রির বিজ্ঞাপন
;
এ'সব বিপ্রতীপ নিয়ে,
দ্বন্দ্বযুদ্ধে নেমে ছি আমরা-
শুধু থেমে যাচ্ছি এসে
মাতৃক্রোড়ে
স্নেহ ঝরে পড়ছে আবহমান
ঠোঁটে
শৌনক দত্ত
উপহারহীন সন্ধ্যাগুলি থেকে
অনেক মুখোশের ভিড়ে পোট্রেট
আঁকা হয়
কেউ আঁকেনি সুস্থতা
ঘরের দেওয়ালে জীবন এঁকে
সবাই চলে গেছে
শ্মশানে চিতা সাজাতে।
রেললাইন নির্বাক দেখে
ঘোড়া ঘাস ফেলে বাড়ি খাচ্ছে
পরদা জুড়ে নাচছে রোদের
কঙ্কাল
নির্জনবাসের দিকে ছুটে
যাচ্ছো তুমি
পকেটে হাত ভরে রেখে
আঙুল থেকে গড়িয়ে পড়ছে
দিন রাত টুপটাপ
রাস্তায় ফাঁকা মাঠ
কেউ কেউ বেখেয়ালে অপেক্ষায়
নির্জনতার সুতোয় আশার
সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে
ঘরের মধ্যে জ্বলছে ধু-ধু
রেলস্টেশন
দাড়ির শেষে ভেঙে যাচ্ছে
নগর।
প্রণব বসুরায়
অসবর্ণ
সৌন্দর্যের শিখরে বসে,
নীচে দেখি
মৃত্যুর পরগনা...
আমাদের সব শস্য খেয়ে
গেছে
শহরের দাম্ভিক ঘুনপোকাদল
এ দেশের হাওয়ায় মেশা
পোড়া কার্তুজের ধোঁয়া
সব ক্যানভাসে ফুলের গায়ে
আদি ব্যাভিচারের
টাটকা শোনিত,
দরবারে আর্জি জানিয়ে
ব্যর্থ ফিরেছে আদিবাসী সমস্ত যুবতী
#
এ উপত্যকায় মস্ত গম্বুজ
পরিহাস করে কেবলই শোনায়
উল্লাসের গান
রঙিন পানশালা ভরে শিলাজী
ও গরম কেকের ঘ্রাণ
বিষয়ী কারণে মৃত্যুর
কথা এখানে নিষেধের বেড়াজালে
#
এখানে আনন্দ মেলা
আর নীচে
হাড়হদ্দ মৃত্যুর শামিয়ানা,
যা কিছুটা ঝাপসা দেখায়...
** আদেশ শিরোধার্য🍁
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়
কে যেন রোদ্দুর ডেকেছিল একদিন
ধোঁয়াশায় ভরে গেছে চোখ।
কালোকালো কয়লার কুচি।
তবু হার মানিনি।
যতটা চুপ থাকলে বিদ্রোহ
করা যায়
সে পথে পা রেখেছি বহুবার!
অথচ সে চুপ।
জল ভাঙছে তবু, ভিজছে
না পোশাক!
তুমি বদলে দিলে সব। ধীরে
ধীরে
পশমিনা চাদরের নীচে কাশ্মীর
এনে
দেখালে হঠাৎ।
বরফে ঢাকা সাদা পথ
পেরিয়ে যাচ্ছে হাত ধরে
ধরে
রোদে চকচক করছে মুখ
ব্লেজারের পকেটে হাত
রেখে চিৎকার
করে ডাকছ, 'রোদ্দুর'
বিশ্বাস করো, একবারও
মনে হয়নি
সে নাম আমার নয়!
বিকাশ চন্দ
হৃদয়ে জীবিত শস্যের অঞ্জলি
বহুবার মনে করিয়ে দিয়ে
গেছে ফুল বাসর শপথ
কালকেতু ফুল্লরা বন ঘর
পূজা পূজা খেলা ঈশ্বরী
ভেজা মাটি আলপথ পায়ে
পায়ে বাজে নুপুর,
বনের রাজা জানে জীবনে
বেঁধেছে দুবাহু প্রাণের দুপুর
মগ্ন ঘাসের আঁচলে ঘুম
ঘুম চোখে ঠোঁটে শ্বাস ---
ঘিরে আছে দুধ ধানি শরীর
ঘরে ফেরা জানে পরবাস !
ঈশ্বর জানে কোথাও ছিল
বাগান দিঘি জল পদ্ম সরস্বতী
আকাশ বাতাস জুড়ে বহুস্বর
জানে পাখিদের স্বরলিপি,
কত আত্মায় বসন্ত বাঁধন
শরীরে নদীতে জোয়ার ---
সকল হৃদয়ে টলটল আত্মার
ভালোবাসা কাঁপে,
নোনাচাতরে ঝুপড়ি ঢেকেছে
গাছের মমতায় ছায়া শরীর
স্বপ্ন বুনেছে গান অক্ষর
বীজ দিয়ে গেল প্রিয় আলো সব।
এখন সকাল কুয়াশায় খসে
পড়ে বিষণ্ণ সজনে ফুল
সকল ইচ্ছেরা বেঁচে থাকে
জীবনে জীবন জুড়ে সন্তাপে,
চেনা পথে ডেকে ছিল শস্য
বতী অঘোষিত নির্দেশ
হৃদয়ে রেখেছি হাতের চেটো
সকল দুঃখ ঢেকেছি চিরকাল,
উদাসীন সময় পুড়লে বৃষ্টি
মানুষে খোঁজে মেঘ ---
মাটিও অপেক্ষায় স্থীর
হৃদয়ে জীবিত শস্যের অঞ্জলি।
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
শব্দ
জানি কখনো বন্ধ হয়না পথ
ভারী দুপুরগুলোর উষ্ণতায় কিংবা
নির্ভার বিকেলের হিম মেশা মাধুর্যে
কথাগুলো মাথা কুটে মরে
ঘুমন্ত ঘাসবনে প্রজাপতি ওড়া বিকেল
কুয়াশাফুল,দখিনের সূর্যঢলা লাল,
সন্ধ্যাতারা টিপ,হিম নামছে……
বিশ্রামের ঘণ্টা দেয় ক্লান্ত পাখিরা
আকাশপ্রদীপ বড়ো বাঙ্ময়
দুএকটি উল্কা বেশ ডুব দেয় দূরে……
শিশিরের শব্দে কিছু শীকর ঝরে
নীরবতা বলে কিছু নেই তো কোথাও!
কথা শুধু কথারই মালা শব্দ সুনিশ্চয় ৷
নিলয় গোস্বামী
মেঘ রাঙা মেয়ে
আমি হেঁটে যাই দূরে,
তার চোখের সীমানা দিয়ে....
ওর দৃষ্টিতে লিখেছি,
অন্তহীন পথের সংলাপ।
মেঘলা রঙের মেয়ে সে,
ছুঁতে গেলেই অজানা !
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে,হৃদয়
আকাশের উঠোনে।
আমি দেখতে পাই তাকে রোদ্দুর
ছেড়া দিনের বুকে,
ছায়াদের ডাকে আমি উতলা
হয়েছি গান শিখতে।
সে যে মেঘ রাঙা মেয়ে,
মেঘমল্লারে প্রেমিকা সাজে।
ওর কাছে রাতেরা যে নীরব হয়ে যায়।
নিয়ত....
আমি ঘুমের কাছেই, একটি
গোলাপ চেয়ে নেই-
সুখের কাছে চেয়েছি অশ্ব রঙের
সে প্রজাপতি।
আলোর কাছে চেয়েছি রাজতিলক,
ভুলের তর্জমা....
আমি শ্যেনদৃষ্টিতে দেখি
হৃদয়ের প্রত্যেকটি পরত।
আমি বালির সবক’টা আঙুল
চিনে রেখেছি শখে
শুধু ভালোবাসবো বলে,
আমি নাবিক হয়েছি আজ।
হাওয়ার নাকে দিয়েছি নোলক,
আর ঠোঁটে তালাস।
শাশ্বতী সরকার (টালিগঞ্জ)
আছি স-হিতে
হৃদয়গভীরে ঘৃণা পুষে
পদ্মচাষে তুমি এনেছ জোয়ার
শুভ্রতার ভড়ং-এ নিজেকে
ঢেকে ফেলতে চাইছ আপাদমস্তক
ভান ও ভড়ং-ই আজ পাহাড়প্রমাণ
হয়ে
অন্ধদের বানিয়েছে সুভক্ত
চেলা
মাস্তুলে যার অর্ধনিমীলিত
চক্ষু
কোন নোনা জল বল ডোবাবে
তাঁহাকে
ওহে বালক, যাও, অন্ধদের
ভিড়ে বসে
মিথ্যেরই ভজনায় সিদ্ধহস্ত
হও
আমি আছি এককোণে আপনার
মনে
কী আর কাড়বে বল বোঝাবেই
কী বা
নিজেই যে সবকিছু খুইয়ে
বসে আছে
দীন ও দয়াল দুটি চরণকমলে।
তুলসীদাস ভট্টাচার্য
ঋণকথা
কারো কাছে কথা দেওয়া
নেই
কারো কাছে বন্ধক নেই
স্মৃতিকথা
নিজের ভেতর নিজেকেই খুঁজি
।
নিজেকেই ভেঙে ভেঙে একটা
আদল দিই
আর গুঁড়োগুলি উড়িয়ে
দিই আকাশে ।
যে মূর্তির কোন প্রতিবিম্ব
পড়ে না
সে কি ঋণের তোয়াক্কা
করে!
স্নেহাশিস মুখার্জী
দ্বিতীয় বিদ্যা
তারপর
ধরো,
এক
কাশের বনে আমরা হারিয়ে গেছি।
তুমি
বলবে, বেশ হয়েছিলো।
আমি
বলবো, না বেশ হয়নি!
কেন?
হারিয়ে
আমরা কি পেয়েছি বলো?
কোনো
মহান দেবতাকে পেয়েছি-
ক্লিওপেট্রা
যাকে সাক্ষী রেখে
তার
স্তন উজাড় করে দিয়েছিলো?
অথচ
দেবতারা সব্বাই জেগে আছে।
আমরা
কেউ চাই না,
দেবতারা
জেগে থাকুন।
তাঁদের
গায়ের গন্ধ হাওয়ায় ভাসে।
পাথরের
ওপর হেলান দিয়ে, চলো,
আমরা
দেবতা আর দেবী সাজি।
পিঠে-পিঠে
হেলান দিয়ে গন্ধর্ব সাজবো।
মুনি-ঋষিরা
এসে বকাবকি করবেন।
বলবেন,
এ সাধনার জায়গা।
এখানে
ধুপ-ধুনো জ্বলে...আরতি হয়।
পার্বত্য
উপত্যকায় মানুষ নির্বাণ লাভ করে।
আমি
বলবো, ভালোবাসায় নির্বাণ নেই?
তুমি
চুপ করে থাকবে।
তোমার
প্রেম আর নির্বাণ, দুটোই চাই।
আমি
একটু একটু করে পাহাড় থেকে নেমে যাবো,
একটু
একটু করে জঙ্গল ছেড়ে চলে যাচ্ছি,
আর তুমি
নির্বাণের অপেক্ষায় হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছো।
মুনি
তোমাকে ছাড়ছেন না...গাছ, লতা, পাতা
তোমাকে
আগলে আগলে রাখছে।
তোমার
যাওয়ার কথা উত্তরে...আরো উত্তরে।
তুমি
ভগ্ন মায়ায় নিজেকে বেঁধে রেখেছো।
আমাকে
ভেঙে তছনছ করে
তোমার
স্রোতের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো অন্য মুখের কাছে।
সেই
আদিম,শূণ্য এক অধিকারবোধের কাছেই
তুমি
নিজেকে সমর্পণ করলে!
এখন কেন
পালাতে চাইছো বিদ্যাধরী?
বিদ্যাধরী,
তুমি আরো স্বর্গের দিকে যাবে?
এই
লতাপাতার ভাইবোন, গাছের পাখি,
এদের
সবাইকে ছেড়ে...ওগো শকুন্তলা,
ওই
বরফের ধোঁয়ার ওপারে, ওই সিংহাসনের কাছে?
না,
তুমি শকুন্তলা নও,
বিদ্যাধরী।
কিন্তু
কি নিগুঢ় পাশ বলো তো?
কোথাও
এর গ্রহ, নক্ষত্র নেই।
কোথাও
নির্দিষ্ট নদী, সমুদ্র নেই।
অথচ
প্লাবন আছে। প্লাবনের তিরস্কার আছে।
তুমি
সাঁতার না জানলেই বকা খাবে।
বকুনি
কি আরামের...তারপরই কে যেন
মাথার
চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,
কে যেন
গালে চুম্বন করছে।
আর তুমি
প্লাবন হয়ে উঠছো।
আমি
তখন, পুরনো রোদ্দুরের মতো
কতোদূরে...
সুবীর সরকার
নূপুর
নুতন করে আর শিকার যাত্রা
লিখো না
দ্যাখো ধনুক থেকে বেরিয়ে
যাওয়া তির
আপাতত পুরনো শহরে ফিরে
এসেছি
আর শহর জুড়ে নদী,নূপুর
ও নাচগান
আভা সরকার মন্ডল
নদীর কাছে
নদীর কাছে স্রোতস্বিনী
এক সকাল-সন্ধ্যার
বায়না ছিল আমার
ভিজিয়ে দিয়ে সে , বয়ে
গেছে বহুদূরে ।
তাকে ছোঁব বলে--ভরা ফসলের
ক্ষেতে বিলি কেটে
তৈরি করেছি আলপথ,
ফিরে তাকাবে বলে ফেলিনি
চোখের পলক।
স্রোতের ধারা উল্টো মুখে
বইয়ে দেওয়ার
অযৌক্তিক আবদার নিয়ে
হাঁটু গেড়ে বসে থেকেছি
আজীবন ।
আজও --- কথা রাখবে না
জেনেই বেহায়া হই জীবনের প্রয়োজনে, অভিমান গিলে
নদীর কাছেই ফিরি
একবার নয়.... বহুবার
!!
বের্টল্ট ব্রেখট / অনুবাদ - মাজহার জীবন
অজেয় খোদাই
যুদ্ধ চলছে তখন
ইতালির সান কার্লো কারাগার
আটক সৈনিক, মদ্যপ আর
চোরে গাদাগাদি।
সে কারাগারে এক সমাজতন্ত্রী
সৈন্য
অমোচনীয় পেন্সিলের আঁচড়ে
লিখলো:
লেনিন দীর্ঘজীবী হোক!
আলো-আধারী সেল। প্রায়
অন্ধকার।
সেলের উঁচু দেয়ালে বড়
বড় অক্ষরে সে লেখা।
জেলরক্ষীর গোচরে এলো
তা ।
বালতি ভর্তি চুন নিয়ে
তারা রঙমিস্ত্রী পাঠালো।
লম্বা সরু ব্রাশে বিপদজ্জনক
অক্ষরগুলো সাদা করে দিল।
তারপর সে চকখড়ি দিয়ে
শুধু অক্ষরগুলোর উপর ঘষলো:
লেনিন দীর্ঘজীবী হোক!
এরপর আরেক রঙমিস্ত্রী
একটা বড় ব্রাশে পুরো দেয়াল
অপটু হাতে লেপে দিল।
কিছু সময়ের জন্য অক্ষরগুলো
তাই হয়ে গেল উধাও।
কিন্তু সকালের দিকে চুন
শুকিয়ে গেলে নিচেপড়া অক্ষরগুলো আবার নজরকাড়লো:
লেনিন দীর্ঘজীবী হোক!
এরপর জেলরক্ষী বাটালী
দিয়ে অক্ষরগুলো গুড়িয়ে দিতে রাজমিস্ত্রীকে দায়িত্ব দিল।
এক ঘন্টা ধরে সে প্রতিটি
অক্ষর খোদাই করলো।
তার এই খোদাইয়ে অক্ষরগুলো
হয়ে গেল বিবর্ণ
কিন্তু দেয়ালে গভীরভাবে
খোদাই করা অজেয় অক্ষরগুলো হলো দৃশ্যমান:
লেনিন দীর্ঘজীবী হোক!
তখন সেলের সৈন্যটা বলল,
তাহলে এবার দেয়ালটাই গুড়িয়ে দাও!
দিগন্ত রায়
সময়
সময় হাসতে হাসতে চলে
যায়
সময় কাঁদতে কাঁদতে চলে
যায়
সময় নাচতে নাচতে চলে
যায়
সময় দাত ও নখে দিতে দিতে চলে যায়
সময় অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাতে
ছোটাতে চলে যায়
সময় শপথে ডিগবাজি দিতে
দিতে চলে যায়
সময় লালা ঝরাতে ঝরাতে
চলে যায়
সময় পেশী ফোলাতে ফোলাতে
চলে যায়
সময় আগুন ছড়াতে ছড়াতে
চলে যায়
সময় সুপ্তির অশ্রু ফেলতে
ফেলতে চলে যায়
সময় দেওয়াল তুলতে তুলতে
চলে যায়
সময় স্বপ্নের বুড়ীর সুতো
ছড়াতে ছড়াতে চলে যায়
সময় শোকের ছাই ওড়াতে
ওড়াতে চলে যায়
প্রতিটা সময় ঢেউয়ের মত
আসে আর চলে যায়
থেকে যায় সমুদ্রতটে শুধু
কিছু পদচিহ্ন....
রফিক জিবরান
সাধক
দূর সময়ের গন্ধে সাধকের
এষা—
জোনাকিআশার আলো রোদ বৃষ্টি
ঝড়ে
বীজের উদ্ভাস বুনে মাঠের
আষাঢ়ে,
মাটির প্রেমিক— হাতে,
চোখে, বুকে— তৃষা।
ব্যথার নিদান চায় চারণ
সাধক,
বিরহচরণ ঝরে সোনার ফসলে,
অদম্য উচ্ছাসে হয় নি:শঙ্ক
পাবক—
সন্তান থাকবে মুক্ত—
সৌন্দর্যঅমলে।
স্বাধীন চোখের তারা সাধনায়
বাঁচে—
প্রতিটি বীজের সাথে তৃষ্ণার
পিয়াসা,
বয়ে চলে বেদনার নিরঞ্জন
আঁচে।
দূরের পথিক দেখে নিরাশায়
আশা—
নিশিঘোর পেঁচারাও পুষে
রাখে সাধ,
স্বাধীনতা অন্তহীন— সাধনা,
আস্বাদ।
সঞ্জয় সোম
যা কিছু এযাবৎ
খাঁ খাঁ রোদ্দুর বুকে
নিয়ে
শীতের আমেজ খুঁজে,ধরা
দেয় গ্রীষ্ম
বনপলাশীররা উঁকি দেয়
বারেবারেই
আনমনে হেঁটে চলে আলতা
মাখা পা,
স্বপ্ন বলে যা কিছু এযাবত্
বুনে ফেলে তেঁতুল পাতায়
হরেক কথা আঁকা থাকে দেওয়াল
আলপনায়
কেউ পড়ে নেয় অনুভবে
স্বপ্নরা করে উল্লাস।
প্রীতি মিত্র
ফিরে দেখা
মুহূর্তরা বন্দী হয়ে
থাকে
আমাদের নিবিড় ছায়ায়।
তারপর একদিন ক্রমশ স্মৃতি।
জানা নেই এ সময়--
অবসাদ কান্না একমুঠো
দীর্ঘশ্বাস
বৃষ্টিতে ভিজেছিল কি-না!!
জীবনের আহবানে
জন্ম জন্মান্তরের ভাঙা
সাঁকোয়
নক্ষত্রের দিনলিপি
লিখে চলে
নিবিষ্ট উচ্ছ্বাসের দু
এক ফোঁটা।
হেমন্ত কুয়াশা ভেঙে
চাঁদ ওঠে, বৃষ্টি নামে
ধীর লয়ে কাছে এসে বয়স
দাঁড়ায়।
তবু্ও একবার,
পিছু ফিরে যখনই তাকাই
সোঁদা গন্ধে ভরে ওঠে
আমাদের আজন্ম আবেগ।
কুমকুম বৈদ্য
অথৈ জলের স্বপ্ন
হয়তো কোথাও মায়ার দেশে
অথৈ জলের স্বপ্ন জুড়ে
আমি ও ঠিক এসে দাঁড়াই তোমার পাশে
জলের সেতুর মাঝ বরাবর
পাপড়ি যত জলজ লিলির ছড়িয়ে রাখি
এক ফালি চাঁদ বাকি চাঁদের টুকরো গুলো কোঁচড় ভরে
জলের ঢেউয়ে দোদুল্যমান নৌকা বাঁধে
জ্যোৎস্না বারি ঠোঁট ছুঁয়েছে-
মনের যেসব নিষেধ ছিল চাঁদের গায়ে দাগ কেটেছে
হাজার মাইল দ্বিধা র গতি শূন্যতে আজ সোম বেঁধেছে
তারে র সাঁকোর টালমাটালে অচ্ছুত রা দিল ছুঁয়ে
রাত পাহারা যেসব তারা, মেঘের ডানায় মুখ ঢেকেছে-
আকণ্ঠ ডুব দেবার সময় জলের ছায়ায় নুলিয়া চাঁদ মন্ত্রণা দেয়-
চাঁদ উঠেছ! ফুল ফুটেছ !
অপর্ণা বসু
ভালবাসা
আমায় ভালবাস
একথা বলো নি কোনদিন
যতবার জানতে চেয়েছি চোখ
নামিয়েছ
শুধু বলেছ আমি তোমার
নিঃশ্বাসের মত
আলাদা করে কিছু বোঝ না
এমন অদ্ভুত কথা আমি শুনিনি
কখনও
নিঃশ্বাস কি কখনো ভালবাসা
হয়
তোমার নীরবতা আমায় দিগভ্রান্ত
করে
নিত্য যাপনে হাতড়ে বেড়াই
উত্তর
আমি কাঁদি,অভিমান
করি
তুমি আরো নির্বিকার হও
শুধু বার বার ভুল করলে
তোমার ক্ষমা
আমাকে ভালবাসা বোঝায়।